গিনেস বুকে নিজের নাম তোলার শখ হয়েছে কখনো?
অদ্ভুত সব রেকর্ডে ঠাসা বইটায় নাম তোলা কিন্তু খুব কঠিন। তবে একটা উপায় বাতলে দিতে পারি। তোমার সঙ্গী সাইকেলটা দিয়েই করে ফেলতে পারো বিশ্বরেকর্ড! তার আগে বলি সাইকেলের কিছু রেকর্ডের কথা।
বিখ্যাত লেখক জুল ভার্নের জনপ্রিয় বই আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ। ৮০ দিনে বিশ্ব ঘুরে আসেন বইয়ের অভিযাত্রী ফিলিয়াস ফগ। তবে স্কটিশ অভিযাত্রী মার্ক বোমন্ট তা করেছেন বাস্তব দুনিয়াতেই, তা–ও কেবল প্যাডেল মেরেই!
মাত্র ৭৭ দিন ১৪ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে ১৬টি দেশ ঘুরে দুটি গিনেস রেকর্ড করেছেন ৩৪ বছর বয়সী এই অভিযাত্রী। একটি কম সময়ে পৃথিবী ভ্রমণ ও অন্যটি পেয়েছেন সাইকেলে চেপে দুনিয়া ঘোরার জন্য।
যাত্রার শুরুটা হয় প্যারিস থেকে। প্রথমে ইউরোপ থেকে রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নিউজিল্যান্ড, আলাস্কা ও সবশেষে কানাডা হয়ে আবার ফ্রান্সে ফেরত আসেন তিনি। ২৮ মিমি ব্যাসের টায়ারে চেপে প্রথম মাসেই পাড়ি দেন ১১ লাখ ৩১৫ হাজার ২৯ কিমি পথ। শুধু তা–ই নয়, প্যাডেল করেছেন প্রায় ১৮ হাজার মাইল বরফে ঢাকা পথ। মাত্র চার ঘণ্টা ঘুমিয়ে রান্নাবান্না সেরে এতটা পথ পাড়ি দিয়েও খুশি নন তিনি। ভবিষ্যতে নিজেই নিজের রেকর্ডকে ভাঙতে চান মার্ক।
সাইকেলে বিশ্ব পাড়ি দেওয়ার পথে কম যায় না প্রতিবেশী দেশ ভারতও। ভারতের পুনের মেয়ে বেদাঙ্গী কুলকার্নি এশিয়ার দ্রুততম নারী হিসেবে ঘুরে এসেছেন সারা বিশ্ব। মাত্র ১৫৯ দিনে অস্ট্রেলিয়ার পার্থ থেকে কলকাতা পর্যন্ত প্রায় ২৯ হাজার কিমি সাইকেল চালিয়ে এ খেতাব অর্জন করেন তিনি।
গোটা পথজুড়ে অপেক্ষা করে ছিল নানা বিপদ। কখনো দুর্বৃত্তদের হাতে হারিয়েছেন সর্বস্ব, কখনোবা পড়েছেন দাবানলে। তবু পিছপা না হয়ে এশিয়ার দ্রুততম সাইক্লিস্ট হয়ে তবেই ফিরেছেন। এবার তাঁর লক্ষ্য আরও বড়। শুধু এশিয়াই নয়, বিশ্বের দ্রুততম সাইক্লিস্টের পদকটিও নিজের করে নিতে চান ২০ বছর বয়সী এ তরুণী।
সাহারা মরুভূমিতে সাইকলে চালিয়েও রেকর্ড গড়েছেন ভারতের অনিন্দ্য মুখার্জি। ডেড রোড নামে পরিচিত এই মরুভূমির পথ সাইকেলে পাড়ি দিয়েছেন তিনি। মাত্র ২৮ দিনে সাহারার ২৩ হাজার কিমি রাস্তা সাইক্লিং করেছেন তিনি।
শুরুটা করেছিলেন মরক্কোর গুলমিম সীমান্ত দিয়ে। তারপর একে একে পেরিয়েছেন মৌরিতানিয়া, সেনেগাল, গুলমাচোর মতো দেশ। ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, বন্য জন্তু আর ধূলিঝড়, কিংবা বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক অঞ্চল মৌরিতানিয়ায় স্থল মাইন বিছানো ২০০ কিমি রাস্তা—কোনোটিই থামাতে পারেনি অনিন্দ্যর সাইকেল। দিনে প্রায় ৯০ কিলোমিটার পথ প্যাডেল করে তিনি পেরিয়েছেন দ্য গ্রেট ডেজার্ট!
ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ কিমি বেগে সাইকেল চালানোর কথা ভেবেছ কখনো? ঢাকার রাস্তায় বসে এ কথা শুনে হাসি পেলেও এটা করে দেখিয়েছেন মার্কিন সাইক্লিস্ট ডেনিস মুয়েলার কর্নেক। বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ৪৫ বছর বয়সী এ নারী বর্তমানে বিশ্বের দ্রুততম সাইক্লিস্ট। ২০১৮ সালে গিনেস বুকে নাম লেখালেও এর প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল সেই ২০১২ সাল থেকেই। জিমে ঘাম ঝরিয়ে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো চেষ্টা করেন তিনি। সেবার ব্যর্থ হলেও হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা মাথায় আনেননি ডেনিস। কোচ হওয়ার্ডের প্রশিক্ষণে প্রস্তুতি নিয়ে আবার চেপে বসেন প্রিয় সাইকেলে। এবার আর ব্যর্থতা নয়, দ্রুততম সাইক্লিস্ট খেতাবের পাশাপাশি জয় করে নেন দ্রুততম নারী সাইক্লিস্টের খেতাবও।
দুই চাকার সাইকেলের হাজারো রেকর্ডের ভিড়ে বাদ যায়নি এক চাকার সাইকেল হুইলি। হুইলি কিং নামে পরিচিত ক্যালিফোর্নিয়ার কার্ট ওসবার্ন হুইলি চেপে করেছেন দুটি বিশ্বরেকর্ড। টানা ১১ ঘণ্টা হুইলি চড়ে করেছেন সবচেয়ে বেশি সময় হুইলি চালানোর রেকর্ড। আর হলিউড থেকে অরল্যান্ড পর্যন্ত ২ হাজার ৮৪০ মাইল পাড়ি দিয়ে গড়েছেন এক চাকায় দীর্ঘতম রাস্তা সাইক্লিং করার রেকর্ড।
সাইকেলে চেপে রেকর্ড গড়তে কিন্তু পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। ২০১৭ সালে এক সারিতে চলমান সাইকেলের দীর্ঘতম লাইন তৈরি করার বিশ্বরেকর্ড করে বাংলাদেশ, যার উদ্যোক্তা ছিল বিডি সাইক্লিস্ট নামে একটি সংগঠন। ১১৮৬ জন সাইক্লিস্টের অংশগ্রহণে তৈরি হয় এ রেকর্ড।
এ তো গেল সাইকেল চেপে বিশ্বরেকর্ড করার গল্প। সাইকেল তৈরি করেও বিশ্বরেকর্ড করেছেন একদল ডাচ সাইক্লিস্ট। ১১৯ দশমিক ৫ ফুট লম্বা এই সাইকেল বানিয়েছেন মিজিল ভ্যাব মেয়ার্স ইওরকপ্লেইজ নামের একটি সংঠনের সদস্যরা। সাইকেলটি তৈরি হয়েছে অ্যালুমিনিয়াম দ্বারা। অ্যালুমিনিয়ামের টুকরা জুড়ে জুড়ে বানানো সাইকেলটি চালাতে হয় দুজন মিলে। সামনের আরোহী হাতল ধরে ভারসাম্য রাখেন ও পেছনের আরোহী প্যাডেল ঘুরিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান সাইকেলটিকে।
এবার বিশ্বাস হলো তো আমার কথা? তবে আর দেরি কিসের, আজই বসে পড়ো তোমার বিশ্বজয়ের প্ল্যান বানাতে। তবে দুই চাকার অভিযানে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ আর পানি কিংবা হেলমেটের মতো আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিয়ে নিতে ভুলো না যেন!
তোমাদের চিঠি
প্রিয় কিআ,
আমি প্রায় এক বছর আগে Guerrilla-71 নামের একটি সুন্দর সাইকেল কিনেছিলাম। প্রথম প্রথম ভালো চললেও পরে এটা বাজে হতে শুরু করে। চালানোর সময় বারবার সাইকেলের চেইন পড়ে যায়। ব্রেক ঠিকমতো কাজ করে না। স্ট্যান্ড করলে ঢিলা হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। সাইকেলটিতে হাইড্রোলিক ব্রেক থাকলেও সিটের নিচের স্প্রিং থেকে আওয়াজ আসে। বারবার সারালেও ঠিক হয় না। এখন এটা ঠিক করলেও আর ঠিক হবে না। পরামর্শ দাও।
কিআ: তোমার চিঠি পড়ে যতটুকু বুঝতে পারলাম, তোমার সাইকেলের অবস্থা এখন খুব বেশি ভালো নয়। এই মডেলের সাইকেলগুলোতে অফিশিয়ালভাবে ‘ভি’ ব্রেক ব্যবহার করা হয়। হাইড্রোলিক ব্রেক আলাদাভাবে লাগালেও সেটা বেশি দিন টিকবে না। ‘ভি’ ব্রেকের ফলে টায়ারের রাবারের অংশে চাপ পড়ে। ফলে ব্রেক জলদি নষ্ট হয়। তোমার প্যাডেল সেটের দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার জন্য চেইন পড়ে যায় বারবার। সব মিলিয়ে এমন মডেলের সাইকেলগুলো এক থেকে দেড় বছরের বেশি টিকে না। তুমি কয়েকবার মেকানিকসের কাছে নিয়ে গিয়ে সাইকেল ঠিক করাতে পারো। নইলে একটু অপেক্ষা করে নতুন সাইকেল কেনাই সেরা সিদ্ধান্ত হবে।