ভূগোল পরীক্ষার খাতায় মানচিত্র আঁকতে হয়তো তোমার খুব একটা ভালো লাগে না। তবে ভূগোল বইয়ের মানচিত্রের ওপর মনমতো আঁকাআঁকি করাটা কিন্তু বেশ আনন্দের একটা ব্যাপার। এক দেশ থেকে অন্য দেশে রেখা টানতে টানতে অনেক সময় অর্থবোধক কোনো কিছুর ছবিও আঁকা হয়ে যায়। তবে বেশির ভাগ সময়ই কিম্ভূতাকার কিছু একটা দাঁড়ায়।
সাইক্লিংয়ের সঙ্গে মানচিত্রের অনেক যোগসূত্র থাকলেও ছবি আঁকার কি কোনো যোগসূত্র আছে? স্বাভাবিক ভাবনায় না এলেও যুক্তরাজ্যের চেল্টেনহাম শহরের অ্যান্থনি হোয়াইট সাইকেল চালিয়ে মানচিত্রে ছবি এঁকে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। সাইকেল চালিয়ে মানচিত্রে ছবি কীভাবে আঁকা যায়? দাঁড়াও ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি।
সাইক্লিস্টদের জন্য বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ রয়েছে। তেমনই জনপ্রিয় এক অ্যাপ ‘স্টাভ্রা’। সারা বিশ্বে জনপ্রিয় এই অ্যাপ মূলত সাইক্লিস্ট ও রানারদের রোড ট্র্যাক করতে পারে ও এ–সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য দেখাতে পারে। এই অ্যাপ চালু করে যেখান দিয়ে সাইকেল চালানো হয়, মানচিত্রের সেই অংশে সাইকেলের চলাচল অনুযায়ী রেখা তৈরি হয়, যা দ্বারা বোঝা যায় সাইকেল কোন পথ ধরে চালানো হয়েছে।
৫৩ বছর বয়সী অ্যান্থনি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মানচিত্রজুড়ে আঁকেন বিভিন্ন ছবি। এই সৃজনশীল ভাবনা থেকে দারুণ এক কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি। অ্যান্থনির এই অদ্ভুত শখের গল্প শুনব আজ।
পেডালিং পিকাসো
সাইক্লিং করে মানচিত্রে ছবি আঁকার বুদ্ধি অ্যান্থনির মাথায় চাপে ২০১৬ সালে। কানাডিয়ান এক শিল্পীর কাছ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই কাজ শুরু করেন অ্যান্থনি। তিনি প্রথম ছবিটি আঁকেন নিজ শহর চেল্টেনহামের রাস্তায়। সে শহরের মানচিত্রে আঁকা কুকুরের ছবিটি আহামরি না হলেও পরবর্তী সময়ে অ্যান্থনি এঁকেছেন দারুণ সব ছবি।
এই কয়েক বছরে অনেক ছবি এঁকেছেন তিনি। বার্মিংহামের রাস্তায় ৬৬ মাইল সাইকেল চালিয়ে অ্যান্থনি এঁকেছেন সান্তা ক্লজ। তা ছাড়া লন্ডনের রাস্তায় বল্গা হরিণ এঁকেছে ৭৯ মাইল সাইক্লিং করে। প্যাডেল চালিয়ে মানচিত্রে দারুণ সব ছবি আঁকার কারণে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাইকেলবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘বাইসাইক্লিং’ অ্যান্থনিকে ‘পেডালিং পিকাসো’ খেতাব দেয়। এই নামেই বেশ পরিচিত অ্যান্থনি। এই নামে অ্যান্থনি একটি ওয়েবসাইট আছে, সেখানে আছে মানচিত্রে অ্যান্থনির আঁকা বেশ কিছু ছবি। সে ছবিগুলো দেখতে www.pedalling-picasso.com/portfolio লিংকে ঘুরে আসতে পারো।
মুভেম্বর ও গোঁফওয়ালার গল্প
তোমরা নিশ্চয়ই ইংকটোবরের নাম শুনেছ। অক্টোবর মাসজুড়ে সারা বিশ্বের চিত্রশিল্পীরা কালো কালি ব্যবহার করে মাসের প্রতিদিন ছবি আঁকেন। মুভেম্বর ব্যাপারটাও একই ধর্মী, তবে বিষয়টা ভিন্ন।
পুরুষদের ক্যানসার ও আত্মহত্যার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর নভেম্বর মাসে বিভিন্ন কার্যক্রম হয় বিশ্বজুড়ে। এই কার্যক্রম ও আন্দোলনকেই মুভেম্বর বলা হয়। ২০০৩ সালে মুভেম্বরের সূচনা। বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে চ্যারিটি সংগ্রহ ও সচেতনতার প্রতীকী অর্থে গোঁফ বড় রাখাটা মুভেম্বরের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। মুভেম্বরের চ্যারিটি থেকে সংগৃহীত অর্থ ব্যয় হয় পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নে ও ক্যানসারের বিরুদ্ধে সচেতনতার লক্ষ্যে।
মুভেম্বরের জন্য চ্যারিটি সংগ্রহের লক্ষ্যে অ্যান্থনি লন্ডনের শহরজুড়ে সাইকেল চালিয়েছেন। স্ট্রাভা অ্যাপের সাহায্যে ভার্চ্যুয়াল মানচিত্রে এঁকেছে গোঁফওয়ালা এক পুরুষের ছবি। ৭৫ মাইল পথ সাইকেল চালিয়ে এই ছবি এঁকে বেশ হইচই ফেলে দিয়েছেন তিনি। লন্ডনের রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে এই ছবি আঁকা যে এতটা কঠিন হবে, অ্যান্থনি রাস্তায় নামার আগে নিজেও বুঝতে পারেননি।
সাড়ে আট ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে ছবিটি এঁকেছেন অ্যান্থনি। তবে এর আগে প্রায় তিন মাস চলেছে পরিকল্পনা। তবু সাইক্লিংয়ের দিন পরিকল্পিত কিছু রুটে সমস্যা তৈরি হয়। তাই সেদিকটা সামলাতেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে অ্যান্থনিকে।
মুভেম্বরে কেন এই কাজ করলেন অ্যান্থনি? বিবিসিকে তিনি এ বিষয়ে বলেছেন, ‘আমি কয়েক বছর ধরে এভাবে সাইকেল চালিয়ে মানচিত্রে আঁকছি। সব কটি আঁকাই আমি আঁকি আনন্দের জন্য, মজার জন্য। কিন্তু এ বছর আমি ভিন্ন কিছু করার সিদ্ধান্ত নিই। বছরের পর বছর ধরে আমি নিজের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে লড়াই করেছি, কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারিনি। তাই আমি মনে করি, এই বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হোক।’
অ্যান্থনি আশা করছেন, এর মাধ্যমে তিনি ২০২০ সালের আত্মহত্যা করা প্রত্যেক পুরুষের জন্য ১ পাউন্ড করে মোট ৩ হাজার ৯২৫ পাউন্ড সংগ্রহ করতে পারবেন। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা। অ্যান্থনির এই কাজ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
ভূগোল বইয়ের মানচিত্রে দেশ বা কোনো স্থান খোঁজার বাইরেও যে আরও মজার কিছু করা যায়, সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ। তুমিও চাইলে অ্যান্থনির মতো নতুন কোনো ‘মানচিত্রশিল্প’ তৈরি করে ফেলতে পারো কিন্তু!