১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬। বরাবরের মতোই বিজয় উৎসবে মেতে উঠেছে দেশ। কিন্তু ভিন্ন এক উৎসবের কথা ভেবেছিল বিডিসাইক্লিস্টস গ্রুপ। সাইকেল দিয়ে যে গিনেস বুকে নাম ওঠাবে বাংলাদেশের।
সকাল ১০টা। হাজার হাজার সাইক্লিস্ট সেদিন জমা হয়েছিল বসুন্ধরা ৩০০ ফিট রাস্তায়। ‘লঙ্গেস্ট সিঙ্গেল লাইন অব বাইসাইকেল মুভিং’ ক্যাটাগরিতে নতুন বিশ্ব রেকর্ডটি যে এখানেই হবে। সেদিন ২ হাজার ৬০০ সাইক্লিস্ট থেকে নির্বাচিত হয়েছিল মাত্র ১ হাজার ১৮৬ জন। তাদের মাঝে একজন গাজীপুরের কিশোর ইফাদ হাসানও।
সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা, এক লাইনবিশিষ্ট দীর্ঘ সাইকেলের রেকর্ড গড়তে পেরোতে হবে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ, বসুন্ধরার ৩০০ ফিট রাস্তায় ১ হাজার ১৮৬ তরুণ এক সারিতে ধীরগতিতে সাইকেলে প্যাডেল ঘোরাচ্ছে, মাথার ওপর জ্বলছে সূর্য, তবু ক্লান্তির ছাপ নেই কারও মুখে। কেননা রেকর্ডটা হয়ে গেলেই যে প্রাপ্তির সঙ্গে মিশে যাবে সব ক্লান্তি। সেই অমায়িক হাসির বিনিময়ে এ রকম হাজারো ক্লান্তি কাঁধে নিতেও মনে বিন্দু পরিমাণ দ্বিধার সঞ্চার করে না।
অবশেষে শেষ হলো সেই রেকর্ড গড়ার প্রথম ধাপ। কিন্তু কেমন ছিল সে সময়ের অনুভূতি জানতে চাইলে কিছুক্ষণ থেমে ইফাদ হাসান জানায়, ‘রেকর্ড করার সময় প্রথম দেশের কথা আগে মাথায় এসেছে, যদি ঠিকভাবে করতে পারি সারা বিশ্ব আমাদের কথা জানবে। কষ্ট হয়েছিল, তবে দেশের জন্য এতটুকু কষ্ট তো করাই যায়।’
রেকর্ড ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর করা হলেও গিনেস বুকে বাংলাদেশের নাম ওঠে ১৭ জানুয়ারি, আর অফিশিয়ালি গোল্ড মেডেল ও সার্টিফিকেট হাতে আসে ২২ এপ্রিল। সার্টিফিকেট পেতে একটু দেরি হলেও এক মুহূর্তের জন্যও ছিল না সেই আক্ষেপ। সে অনুভূতির কথা জানতে চাইলে ইফাদ হাসান বলে, ‘সার্টিফিকেট পাওয়ার পর মনে হয়েছিল, আসলেই দেশের জন্য কিছু করতে পেরেছি।’
ইফাদ হাসান, টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজে এখন দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছে, তবে শুধু বইয়ের জগতে নয়, বাইরের জগৎটার সঙ্গে বেশ পরিচিত সে। তবে সবখানে যাওয়ার জন্য সঙ্গী ওই একটাই, সাইকেল।
‘ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার কোনোটাই না, আমি স্বপ্ন দেখি সাইকেল নিয়ে। ইচ্ছে সারা বাংলাদেশ ঘুরব একদিন আর দেশের বাইরে ক্রসকান্ট্রির প্ল্যান আছে।’
সাইকেলের সঙ্গে ইফাদ হাসানের সম্পর্ক সেই ক্লাস সিক্স থেকে। মনের মধ্যে দারুণ এক জেদ কাজ করত তখন। আশপাশের সবাই কী সুন্দর করে প্যাডেল চেপে সাইকেলে ঘুরে বেড়ায়। আমি কেন পারব না? কারও সাহায্য ছাড়াই সাইকেলের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক গড়ে তোলে ইফাদ হাসান।
এখন সাইকেলের ক্রিং ক্রিং শব্দটা পৃথিবীর মধুরতম শব্দ মনে তার কাছে। ক্রিং ক্রিং শব্দ করতে করতে রোজ সকালে শহরের অলিগলিতে ঘুরে বেড়ানো যেন একধরনের নেশায় পরিণত হয়েছে এই কিশোরের।
কিছু একটা মনে পড়তেই হুট করে রুম থেকে বের হয়ে গেল ইফাদ হাসান। কিছুক্ষণ পর নিয়ে এল সেই রাঙা পঙ্খিরাজকে, যার মাঝেই লুকিয়ে আছে ওর সব স্বপ্ন, আছে সব ভালোবাসা। একটু ছুঁয়ে দেখি সাইকেলটা? জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠল, ‘ও শুধু একটা সাইকেল না, ও আমার পৃথিবী!’