ঠিকঠাকভাবে একবার সাইকেল চালানো শেখা হয়ে গেলেই সাইকেলটা নিয়ে রাস্তায় বের হতে খুব ইচ্ছা হয়। শহরের সড়কে বিশাল আর দ্রুতগতির যানবাহনের মধ্যে সাইকেল চালানোটা একটু কঠিন অবশ্য। আরাম করে সাইকেল চালানো এ ক্ষেত্রে মুশকিল হয়ে যায়।
তবে নির্দিষ্ট সাইকেল লেনে সাইকেল চালিয়ে কিন্তু বেশ মজা। সাইকেল লেন কী, সেটা আগে তোমাদের একটু বুঝিয়ে বলি। শুধু সাইকেল চলাচলের জন্য যে রাস্তা থাকে, সেটিই সাইকেল লেন। সাধারণত মূল সড়কের পাশেই সাইকেল লেন তৈরি করা হয়। তবে একেক শহরের সাইকেল লেন আবার একেক রকম। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের বড় বড় শহরে সাইকেল লেন আছে। দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন সাইকেল লেনেরও আছে বৈচিত্র্য। কয়েকটি বৈচিত্র্যপূর্ণ সাইকেল লেনের গল্প শুনব আজ।
দ্য হোভেনরিং
নেদারল্যান্ডের আইন্ডহোভেন শহরের ‘দ্য হোভেনরিং’ ব্রিজটি রীতিমতো বিশাল এক স্থাপত্য। শহরটির ব্যস্ত চার রাস্তার মোড়ের ওপর ঝুলে আছে গোলাকার ব্রিজটি। ২০১১ সালে ২৪টি স্টিলের তারের সাহায্যে ২৩০ ফুট লম্বা এক পিলারের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল ব্রিজটিকে। তবে স্টিলের তার ও গোটা ব্রিজ দুটোই কাঁপতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তার খাতিরে ব্রিজটির চার কোনায় পা বসিয়ে দেওয়া হয়। মজার বিষয় হচ্ছে, মূল সড়কে কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি না করে তৈরি হয়েছে ব্রিজটি। এটি তৈরি করতে প্রায় এক হাজার টন স্টিল ও কংক্রিট ব্যবহৃত হয়েছে!
‘দ্য হোভেনরিং’ মূলত একটি সাইকেল লেন। এ ছাড়া পথচারীরাও রাস্তা পারাপারে ব্যবহার করতে পারে এই ব্রিজ। শহরের সাইক্লিস্টদের যেন বিশাল চার রাস্তার মোড়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে না হয়, সে জন্য আইন্ডহোভেনের নগর কর্তৃপক্ষ এই ব্রিজ নির্মাণ করে। নেদারল্যান্ডসহ সারা পৃথিবীর সাইক্লিস্টদের প্রিয় সাইকেল লেনগুলোর মধ্যে একটি ‘দ্য হোভেনরিং’।
সাইকেল সুপার হাইওয়ে
শাঁই শাঁই করে একের পর এক গাড়ি চলে যাচ্ছে—হাইওয়েতে এমনটাই দেখা যায় সব সময়। তাই ব্যস্ত হাইওয়েতে সাইকেল চালানোর সাহস করাটা রীতিমতো দুঃসাহস। তবে পৃথিবীজুড়ে এমন কিছু হাইওয়ে আছে, যেসব শুধু সাইক্লিংয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছে। কোনো ধরনের ট্রাফিক সিগন্যাল ছাড়াই দ্রুত ও লম্বা দূরত্বে সাইকেল চালানো যায় এ ধরনের হাইওয়েতে। এসব সড়ক ‘সাইকেল সুপার হাইওয়ে’ নামে পরিচিত।
সাধারণ সাইকেল লেনের তুলনায় ‘সাইকেল সুপার হাইওয়ে’ একটু ভিন্ন। সব সুপার হাইওয়েতে তিন থেকে চার মিটার প্রশস্ত রাস্তা থাকে। সাধারণত এ ধরনের রাস্তার দৈর্ঘ্য হয় অনেক। তবে একেক দেশের হাইওয়ের দৈর্ঘ্য একেক রকম। জার্মানির ১০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সুপার হাইওয়েটি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত। বেলজিয়ামের ১২০ রুটের সুপার হাইওয়ে জোড়া দিলে হাইওয়েগুলোর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার! এ ছাড়া ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন ও যুক্তরাজ্যে ‘সাইকেল সুপার হাইওয়ে’র দেখা মেলে।
টু টানেল গ্রিনওয়ে
তোমরা নিশ্চয়ই রেলওয়ে টানেল সম্পর্কে জানো। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই রেলওয়ে টানেল আছে। আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে যুক্তরাজ্যের বাথ শহরের দুটি রেলওয়ে টানেল বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ৫০ বছর অব্যবহৃত পড়ে ছিল টানেল দুটি। ২০১৩ সালে টানেল দুটিকে সাইকেল লেনে পরিণত করা হয়। ৫০ বছর আগের টানেল একদম নতুন ও আধুনিক রূপ পায়। টানেল দুটি শুধু পথচারী ও সাইক্লিস্টদের জন্য উন্মুক্ত।
‘টু টানেল গ্রিনওয়ে’ ব্যবহার করা সাইক্লিস্টরা মনে করে, সাইকেল চালিয়ে টানেলে ঢুকলেই নিজেকে শহর থেকে একদম বিচ্ছিন্ন লাগে, টানেলকে মনে হয় যেন অন্য কোনো দুনিয়া। পুরো টানেলের দেয়ালজুড়ে সেকেলে একটা ভাব থাকলেও সেখানে আছে সিসিটিভি, এলইডি বাতি আর মোবাইল নেটওয়ার্ক। সব মিলিয়ে চার মাইল লম্বা এই টানেল দুটি বাথ শহরের সাইক্লিস্ট ও পর্যটকদের খুব প্রিয়।
বড় বড় সব সাইকেল লেন তৈরি করার মূল কারণ, নগরবাসী যেন সাইকেলের প্রতি আগ্রহী হয় এবং সাইক্লিস্টরা যেন খুব সহজেই রাস্তায় সাইকেল চালাতে পারে। রাস্তায় সাইকেল চালানোর সময় সাইকেল লেন ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। আর অবশ্যই রাস্তায় খুব সাবধানে সাইকেল চালাবে।