কাচের ছোট্ট সুইমিংপুল। তাতে হরদম সাঁতরে বেড়াচ্ছে রঙিলা সব মাছ। কেমন হবে যদি এমন একখানা সুইমিংপুল তোমার ঘরেও থাকে? চাইলে ‘সঙ্গী–সাথী পশু–পাখি’র সঙ্গে মাছও যোগ করতে পারো তাহলে। বলছি অ্যাকুয়ারিয়াম জারে জল থই থই মাছের কথা।
জারে চাই যেমন মাছ
বিক্রেতাকে শুরুতেই বলে নেবে, যাদের ‘কই মাছের প্রাণ’, এমন মাছ দিতে—যাদের সহজেই ‘অক্কা পাওয়া’র কারণ নেই। এর তালিকায় সবার আগে আসবে গাপ্পি মাছের নাম। তারপরে নিতে পারো গোল্ডফিশ, অ্যানজেল, রেইনবো, পার্ল গৌরামি, প্লাটিস, মলি, নিওন টেট্রা ইত্যাদি মাছ। তবে ছোট জারে ফাইটার ফিশ বা বড় আকারের কোনো মাছ না রাখাই ভালো।
চাইলে ছোট্ট ‘থাই কচ্ছপ’ও পালতে পারো জারে। তবে ভুলে যেয়ো না, ‘থাই’ হোক আর যা–ই হোক, কচ্ছপ কিন্তু মাছ খেতে ওস্তাদ! অতএব কচ্ছপ পালতে গেলে মাছের আশা ছেড়ে দাও আর মাছ পালতে গেলে কচ্ছপের আশা ছেড়ে দাও। কোনোটার আশাই না ছাড়তে পারলে সহজ সমাধান, পাশাপাশি দুটো জার কিনে নাও! তাতে সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না! কচ্ছপও পালা হলো, কিন্তু মাছও মরল না।
দরদাম
৬ ইঞ্চি, ৮ ইঞ্চি, ১০ ইঞ্চি থেকে ১২ ইঞ্চি আকারের জার যাবে কেনা। দাম পড়বে ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা। আলাদাভাবে কিনতে গেলে জারের তলানিতে দেওয়ার জন্য কয়েক মুঠো পাথর ৫০ টাকা, প্লাস্টিকের গাছ ৪০-৬০ টাকা।
মাছের মধ্যে প্রতি জোড়া গোল্ডফিশের দাম পড়বে ৫০ থেকে ৫০০ টাকা। লম্বাটে গড়নের এক জোড়া টাইগার শার্ক ৮০ থেকে ১৬০ টাকা। কমেড ফিশের দাম প্রতি জোড়া ৪০ থেকে ১২০ টাকা। রুপচাঁদা মাছের মতো দেখতে মাঝারি অ্যাঞ্জেল ফিস পেতে পারো ২০০ টাকার মধ্যে। বিচিত্র রঙের ডিসকাস ফিশ কিনতে হলে গুনতে হবে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। কিছুটা ভিন্নতা আনতে ধূসর শরীর ও গুচ্ছ লেজের ব্ল্যাকমুর ফিশ বেছে নেওয়া যাবে ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। ...থাক আমি আর বলছি না। কত যে রংবাহারি বিচিত্র সব মাছ, বিক্রেতার মুখে শুনে দোকান ঘুরে ঘুরে দেখে পছন্দেরটা বেছে নিয়ো। ও হ্যাঁ, থাই কচ্ছপ জোড়া নিতে পারো ৬০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে।
একই সঙ্গে মাছের খাবার কিনে নিতে পারো। সে ক্ষেত্রে ১০০ গ্রাম খাবারের দাম পড়বে ৫০ টাকা এবং প্রিমিয়াম ১০০ গ্রাম খাবারের দাম হতে পারে ২৫০ টাকা। সাজানোর জন্য আরও নিতে পারো সিলিকন দিয়ে তৈরি কোরাল, পাওয়া যাবে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। আকৃতিভেদে প্লাস্টিকের জেলিফিশ পাওয়া যাবে ১০০ থেকে ৫০০ টাকায়।
জারের যত্নআত্তি
যে পাত্রে বা প্লাস্টিকের ব্যাগে মাছ নিয়ে আসবে, সেটার পানিটুকু নতুন জারেও রাখো। না হয় সম্পূর্ণ নতুন তাপমাত্রায় নতুন পানিতে মাছগুলো খাপ খাইয়ে নিতে পারবে না। অস্বস্তিতে পড়বে। এমনকি মারাও যেতে পারে।
প্রতিদিন মাছদের খাবার দিতে হবে নির্দিষ্ট একটি সময়ে। সকালে দেওয়াই ভালো। প্রতিটি মাছের জন্য দিনে ৩–৪টি দানাদার খাবারই যথেষ্ট। তবে বেশি আদর করতে গিয়ে খাবারের পাল্লাটাও বাড়িয়ে দিয়ো না আবার। তুমি-আমি বেশি খেলে যেমন বদহজম হয়, মাছের বেলায়ও তা–ই! বেশি খাওয়াতে গিয়ে মাছের মরণ ডেকে এনো না যেন।
জার যেহেতু এমনিতেই ছোট, তাই তাতে জীবন্ত গুল্মজাতীয় গাছ না রাখাই ভালো। জীবন্ত গাছের আদলে প্লাস্টিকের গাছই ভালো।
জারের পানি সাধারণত ৭-১০ দিন পরপর পরিষ্কার করতে হয় ( মানে ঘোলাটে পানি বদলে নতুন পানি দিতে হয়)। তবে ৭ দিন ‘ফিল-আপ’ হওয়ার জন্য বসে থেকো না আবার। জারের পানি ঘোলাটে হলেই পরিষ্কার করা চাই।
পানি বদলানোর সময় খুব সতর্ক থাকতে হবে। জারের পুরো পানি একবারেই পরিবর্তন করা যাবে না। ভুলেও মাছ তুলে অন্যত্র রাখা যাবে না। জারের পানি এমনভাবে পাল্টাতে হবে যেন জারে অন্তত এক–তৃতীয়াংশ পুরোনো পানি থেকে যায়। মাছগুলোও সেই পানিতেই থাকবে। এবার প্রয়োজনমতো নতুন পানি যোগ করতে পারো। তাতে নতুন ও পুরোনো পানির মিশেলে মাছগুলো স্বচ্ছন্দে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে।
ছোট জারে অক্সিজেন দেওয়ার সুযোগ থাকে না, তাই সময়–সুযোগ পেলে পরিষ্কার হাতে অথবা কাঠি দিয়ে পানি নেড়েচেড়ে দিতে পারো। এর ফলে মাছগুলো ভালোভাবে অক্সিজেন পাবে।
কোথায় পাবে
রাজধানীর কাঁটাবনসহ বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া যায় বৈচিত্র্যময় অ্যাকুয়ারিয়াম ও জার। ঢাকার বাইরেও প্রতিটি শহরের কোনো না কোনো দোকানে পেয়ে যাবে। খোঁজ নিয়ো।
সীমাবদ্ধতা/সতর্কবাণী
জারের পানির পরিমাণ অনেক কম থাকে। আমরা যেসব মাছ পালন করি, তার মধ্যে ভালো পানির রিকুয়ারমেন্ট সবচেয়ে কম, তা–ও ২.৫ গ্যালন বা ১০ লিটার।
জারের মধ্যে কোনো ফিল্টার ব্যবহার করার জায়গা নেই। শীতের দিনে হিটার তো নেই–ই!
জারের এই ছোট্ট সুইমিংপুলে মাছের সাঁতার কাটার জন্য যথেষ্ট জায়গা নেই।
জারের ছোট আকৃতির কারণে সার্ফেস-টু-এয়ার রেশিও কম, তাই গ্যাস এক্সচেঞ্জ কম হয়, ফলে পানিতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। মাছের বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে।
আকারে খানিকটা বড় অ্যাকুয়ারিয়াম মাছের জন্য বেশ আরামদায়ক হতে পারে। অ্যাকুয়ারিয়ামও মাছের জন্য বদ্ধ জেলখানা, তবু জারের চেয়ে ভালো। সম্ভব হলে একই দোকানের জার ছাপিয়ে নজর দিতে পারো অ্যাকুয়ারিয়ামের দিকে।