মায়ের শেষ স্মৃতিটি যেভাবে ফিরে পেলেন মেয়ে
খেলনা পুতুল আমার বেশ পছন্দ। ছোটবেলায় উপহার পাওয়া সোনালি চুলের নীলচোখা পুতুলটা ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয়। ওর নাম দিয়েছিলাম মিনি। মিনিকে কখনো চোখের আড়াল হতে দিতাম না, মিনির সঙ্গেই খেলতাম। একবার বেড়াতে গিয়ে মিনিকে হারিয়ে ফেললাম। মিনির জন্য কেঁদেকেটে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছিলাম। এ রকম ছোটবেলায় প্রিয় পুতুলটি হারিয়ে যাওয়ার কষ্ট ভুলতে পারে না অনেকেই।
কিছুদিন আগে কানাডার ভ্যানকুভার শহরের বাসিন্দা মারা সোরিয়ানোও তাঁর প্রিয় টেডিবিয়ার হারিয়ে হয়ে যায় পাগলপ্রায়। ছোট বাচ্চাদের টেডিবিয়ার হারিয়ে কাঁদাটা স্বাভাবিক। কিন্তু ২৮ বছর বয়সী মারা কেন টেডিবিয়ারের শোকে কাতর, তা জানা গেল তাঁর ভাইরাল হওয়া টুইট থেকে।
মারার হারিয়ে যাওয়া টেডিবিয়ারটি বহন করছে তাঁর মায়ের শেষ স্মৃতি। দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভুগে গত বছর মারা যান তাঁর মা। এই টেডিবিয়ারও তাঁর মায়ের উপহার।
মায়ের চলে যাওয়ার পর মারা টেডিবিয়ারটিকে বিশেষভাবে সাজান। তাঁর মা যে রকম পোশাক পরিধান করতেন, সে রকম পোশাক পরান টেডিবিয়ারটিকে। সঙ্গে যুক্ত করেন একটি বোতাম, যাতে চাপ দিলেই শোনা যায় অডিও রেকর্ড করা তাঁর মায়ের কণ্ঠ। মা বলছেন, ‘আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি তোমাকে নিয়ে গর্বিত। আমি সব সময় তোমার সঙ্গে থাকব।’
মায়ের মৃত্যুর পর এই টেডিবিয়ারটিই হয়ে গিয়েছিল মারার বেশ আপন। কখনো খুব খারাপ লাগলে তিনি টেডিবিয়ারটিকে জড়িয়ে ধরে বোতাম চেপে মায়ের আদুরে কণ্ঠস্বর শুনতেন। ভেবে নিতেন, মা আছেন তাঁর পাশেই।
কিন্তু গত ২৪ জুলাই বাসা বদলের সময় হারিয়ে যায় মারার প্রিয় টেডিবিয়ারটি। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মারা যখন ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত, তখন তাঁর টেডিবিয়ার ও অন্যান্য জরুরি কাগজপত্র, আইপ্যাডসমেত কাঁধের ব্যাগটি এক অপরিচিত লোক নিয়ে যাচ্ছে। মারার মনে হয়, তিনি দ্বিতীয়বারের মতো তাঁর মাকে হারিয়ে ফেলেছেন। শোকে কাতর হয়ে ভেঙে পড়লেও হাল ছেড়ে না দিয়ে টেডিবিয়ারটি খুঁজে পাওয়ার জোর চেষ্টা চালান তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় টেডিবিয়ারটি ফিরে পাওয়ার আকুতি জানান। বাকি জিনিসপত্রের পরোয়া না করে প্রিয় টেডিবিয়ারটির হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পোস্টার বিলি করেন শহরে।
ভ্যানকুভার পুলিশও এগিয়ে আসে মারার সহযোগিতায়। পুলিশের টুইটার থেকে টুইট করা হয় টেডিবিয়ারটি কোথাও পেলে যেন ফিরিয়ে দেয়। তারপর থেকেই ঘোষণাটি ছড়িয়ে পড়ে টুইটারে।
এটি দেখতে পান তারকারাও। মারার টেডিবিয়ার খুঁজে পেতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাঁরা। ডেডপুলখ্যাত তারকা রায়ান রেনল্ডস রিটুইট করে জানান, মারার টেডিবিয়ার কেউ ফিরিয়ে দিতে পারলে তাকে পাঁচ হাজার ডলার পুরস্কার দেবেন কোনো রকম জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই। রায়ানের দলে যোগ দেন আরও অনেক তারকা ও বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমকর্মীরাও।
হঠাৎ করেই ২৮ জুলাই তারিখ রাতে একটা অপরিচিত নম্বর থেকে আসা ফোনকল পেয়ে মারা জানতে পারেন, তাঁর টেডিবিয়ারটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। পরদিনই মারা দুজন ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে ফিরে পান সেটি। ব্যক্তি দুজন জানান, তাঁরা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চোরকে চিনতে পারেন এবং তার কাছ থেকে টেডিবিয়ারটি উদ্ধার করে আনেন। মারা তাঁর প্রিয় টেডিবিয়ারটি ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
মারার টেডিবিয়ার হারানোর সংবাদটি যেমন ছড়িয়ে পড়েছিল, তেমনই সেটি ফিরে পাওয়ার সুসংবাদটিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিশ্বে। খুশি হয় সবাই। এই সুসংবাদটিও টুইট করে জানান ডেডপুল তারকা রায়ান। তিনি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান, যারা মারার টেডিবিয়ার খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে এবং সেটিকে সুরক্ষিত রেখেছে।
মারা সিদ্ধান্ত নেন, একমুহূর্তের জন্যও মায়ের স্মৃতিকে আর হাতছাড়া করবেন না। এখন মারা আবারও যখন খুশি বোতাম চেপে মায়ের কণ্ঠস্বর শুনতে পারবেন, প্রিয় টেডিবিয়ারটি জড়িয়ে ধরে অনুভব করতে পারবেন মাকে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি