আমিরার বয়স চার বছর। বিভিন্ন ঈদে আর উৎসবে আতশবাজি দেখতে ওর অনেক ভালো লাগে। প্রায়ই দাদার কাছে আবদার করে আতশবাজি ফোটানোর জন্য। আতশবাজির আলো চারদিকে বিচ্ছুরিত হয় আর আমিরার চোখে–মুখেও আনন্দের রেখা ফুটে ওঠে। কিন্তু চার আগস্টের পর আমিরার আর আতশবাজি ভালো লাগে না। কারও হাত থেকে কোনো জিনিস যদি মেঝেতেও পড়ে যায়, তবু আমিরা এখন চমকে ওঠে।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১৫০ মেইল দূরের এলাকাও কেঁপে ওঠে। ছোট্ট আমিরার মনে এখনো সেই কালো দিনটির ছোঁয়া লেগে আছে। মানসিকভাবে প্রচণ্ড আঘাত পাওয়া আমিরা এখন ঘরে একা থাকতে পারে না।
প্রায় তিন হাজার টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরিত হওয়ার সময় সে তার দাদার বাসায়ই ছিল। খেলা করছিল যত্নের কালারিং বুকটি নিয়ে। আমিরার বাবা ও মা তখন রুটিন চেকআপের জন্য ছিলেন হাসপাতালে। আমিরাকে রেখে যান দাদার কাছে। সেন্ট জর্জ হাসপাতালটিও বিস্ফোরণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিস্ফোরণ বা ভূমিকম্পের সময় মানুষ স্বাভাবিকভাবেই বিল্ডিংয়ের বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করে। হাসপাতালের মানুষও তা–ই করেছিল। কিন্তু দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে কেউ কেউ বাইরে বের হচ্ছিলেন, কেউ কেউ ভেতরে ঢুকছিলেন। আমিরার মা হিবা যখন বাইরে এসে দেখলেন চারদিকের বিধ্বংসী অবস্থা, তখন তিনি চিন্তায় পড়ে যান। ভয় পান নিজের মেয়ের কথা ভেবে। আমিরা তখন কোথায় আছে, কেমন আছে, সে সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণাই ছিল না। বিস্ফোরণের আঘাতে আমিরার বাবা ওয়াসিম এখনো ওই দিনের কোনো ঘটনা মনে করতে পারছেন না।
বিস্ফোরণের পর আহত হিবা ও ওয়াসিমকে নেওয়া হয় দক্ষিণের শহর সায়দাতে। অন্যদিকে, বিস্ফোরণের পর ট্রমার মধ্যে আমিরা তার দাদার সঙ্গেই ছিল। সে বুঝে উঠতে পারছিল না কী হয়েছে আসলে! সেভ দ্য চিলড্রেন ও ইউনিসেফের একটি দল তার সঙ্গে ছিল। তাকে পুরোটা সময় দেখভাল করে সেই দলটিই।
বিস্ফোরণের সাত দিন পর আমিরাকে কাছে ফিরে পান তার মা। আগলে ধরেন পরম মমতায়। নিজের জীবনের চেয়ে মেয়েকে কাছে পাওয়ার আনন্দ অনেক বেশি তাঁর কাছে। পুরো পরিবার একসঙ্গে হয় সাত দিন পরেই।
আমিরাদের মতো শত শত পরিবার এখন প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে আছে। বিশেষ করে শিশুরা। ছয় হাজারের বেশি মানুষ আহত ও তিন লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন এই বিস্ফোরণে। লেবাননের ১৯৭৫-১৯৯০ সালের গৃহযুদ্ধ এবং ২০০৬ সালের ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর সমস্যার থেকেও বেশি প্রভাব ফেলেছে এই ঘটনা।
লেবানন হয়তো পুনরায় স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বড়রাও হয়তো মানিয়ে নেবে। আবার মানুষ রাস্তায় বের হবে, কাজে যাবে। কিন্তু আমিরাদের মানসিক অবস্থা কি স্বাভাবিক হবে?
(দি গার্ডিয়ান অবলম্বনে)