‘মন খারাপ হলে পুরস্কার পাওয়া বইগুলো পড়ি’ — বিউটি আক্তার

হাত দুটো অকেজো হয়ে গেলে কী করবে তুমি? ভাবো তো একবার! অভাবের সংসারে জন্ম নেওয়া বিউটি আক্তার কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে মোটেও দমে যায়নি। নিজের ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের ফলে পা দিয়ে লিখেই এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে।

নিজেদের দেড় বিঘা আর অন্যের জমি বর্গা চাষ করে কোনোরকমে সংসার চলে তাদের। এক ভাই ও এক বোন তারা। বড় ভাই বগুড়ায় স্নাতকোত্তর পড়ছেন। বাবা বায়েজিদ হোসেন ও মা রহিমা বেগমের অনেক দুশ্চিন্তা ছিল মেয়েকে নিয়ে। সব দুশ্চিন্তা পেছনে ফেলে সে আজ জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার শিবপুর গ্রামের সবার কাছে দৃষ্টান্ত। তার প্রধান শিক্ষক আকাম উদ্দীন জানান, প্রতিবন্ধী হলেও বিউটি কখনো ক্লাস ফাঁকি দিত না। পা দিয়ে লিখলেও অনেকের চেয়ে তার লেখা অনেক সুন্দর। এমনকি পঞ্চম আর অষ্টম শ্রেণিতেও বৃত্তি পেয়েছিল সে।

পা দিয়ে লেখা শেখানোর মূলে বিউটি ধন্যবাদ জানায় মাকেই। তার জন্য মা অনেক কষ্ট করেছেন। মায়ের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে সে করতে শিখেছে প্রায় সব কাজই, বাধা হতে দেয়নি শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে। বড় হয়ে একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে।

বিউটির সাক্ষাৎকার

প্রশ্ন :

দিনে কয় ঘণ্টা পড়ো?

ছয় থেকে সাত ঘণ্টা। ভালো ফলাফল করতে হলে নিয়মিত পড়াশোনার বিকল্প নেই।

প্রশ্ন :

দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন দেখতে চাও?

পরীক্ষাপদ্ধতিটা অন্য রকম হলে খুশি হতাম।

প্রশ্ন :

সবার কাছে তো এখন তুমিই সেরা, তোমার কাছে সবার সেরা কে?

বাবা-মা।

প্রশ্ন :

এক দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে পারলে কী করবে?

আমার মতো শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সাহায্যের ব্যবস্থা করব।

প্রশ্ন :

মন খারাপ হলে কী করো?

গান শুনি। লাইব্রেরি থেকে আনা বা পুরস্কার পাওয়া বইগুলো পড়ি।

প্রশ্ন :

প্রিয় লেখক...

রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প অনেক প্রিয়।

প্রশ্ন :

প্রিয় কবিতার লাইন...

‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই...’

(কিশোর আলোর জুন ২০১৭ সংখ্যায় প্রকাশিত)