খোলা প্রান্তরে লাল মাটিতে দাঁড়িয়ে আছ তুমি। হাতে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ। সেই কাপে ফুঁ দিতে দিতে রাতে আকাশে দেখছ মঙ্গলের আকাশে থাকা দুই চাঁদ—ফোবোস আর ডিমোস।
অসম্ভব সুন্দর এই দৃশ্য অনেকদিন ধরেই পৃথিবীবাসীর কল্পনা।
এই কল্পনাকে সত্য করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে নাসা। যে হারে পৃথিবীতে বেড়ে চলেছে কার্বন ডাই অক্সাইড, ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি, তাতে মঙ্গলেও হতে পারে আমাদের আবাস। যেই গ্যাস বেড়ে চলায় ধ্বংস হতে বসেছে পৃথিবীর প্রকৃতি, মঙ্গলের বায়ুমন্ডলে তার পরিমাণ ৯৬ ভাগ। সুতরাং, অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষের পক্ষে কোনোভাবেই মঙ্গলপৃষ্ঠে টিকে থাকা সম্ভব না।
এই বাধা পেরিয়ে স্বপ্ন সত্যি করতে চলেছে নাসা। অক্সিজেন বোধহয় আর সমস্যার কাতারে থাকছে না। কীভাবে?
কিছুদিন হলো মঙ্গলে পৌঁছেছে নাসার রোভার পারসিভারেন্স। রোভারটির সাথে ছিল মক্সি নামের একটি যন্ত্র। মক্সিকে বলা চলে বিজ্ঞানীদের অনবদ্য আবিষ্কার। কারণ এই যন্ত্র তৈরি করতে পারে অক্সিজেন।
বাতাস ঘেটে শূন্য থেকে অক্সিজেন তৈরির চিন্তাও ছিলো দুরুহ। তাই নাসা মক্সিকে নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী ছিলো না। পরীক্ষামূলক মডেল হিসেবেই পাঠানো হয় পারসিভারেন্সের সাথে। কিন্তু লাল গ্রহে এসেই সব্বাইকে চমকে দিয়েছে মক্সি। তৈরি করেছে ৫ গ্রাম অক্সিজেন, যা নিয়ে একজন নভোচারী প্রায় দশ মিনিট শ্বাস নিতে পারবেন। অবিশ্বাস্য না?
তোমার বিজ্ঞানমুখী মন নিশ্চয়ই মক্সি কীভাবে কাজ করে তা জানতে উসখুস করছে। সহজ ভাষায় বোঝানো যাক।
মক্সি মূলত একটা গাছের মতো কাজ করে। প্রথম ধাপে মঙ্গলের বাতাসে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নেয়। আমরা জানি কার্বন ডাই অক্সাইডের (CO2) ভেতরেই দুইটি অক্সিজেনের অণু থাকে। পরের ধাপে, উচ্চ তাপ আর বিদ্যুৎ ব্যবহার করার মাধ্যমে আলাদা করে অক্সিজেন অণুকে। শেষ ধাপে উৎপন্ন হওয়া অক্সিজেন মুক্ত করে দেয় বাতাসে। ব্যস! কাজ শেষ।
আপাতত পারসিভারেন্সের সাথে পাঠানো মক্সির আকার খুবই ছোট। তা দিয়ে পুরো গ্রহ অক্সিজেনে ভরিয়ে দেওয়ার আশা করা বৃথা। কিন্তু নাসা সফলতার দেখা পাওয়ায় আশা করা হচ্ছে পরেরবার এবারের চেয়ে ১০০ গুণ বড় মক্সি পাঠানো হবে মঙ্গলে। যা চাহিদার তিন চতুর্থাংশ অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারবে।
তাহলে অল্প কয়েকদিন পরেই মঙ্গলে দেখা হচ্ছে। চা খেতে খেতে দুই চাঁদের জোছনা উপভোগ করব আমরা। বুক ভরে অক্সিজেন টেনে বলবো, “আহা! কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে।”
কল্পনা করতে তো দোষ নেই। কী বলো?