সম্প্রতি আফগানিস্তানে ভূমিকম্প হয়ে গেল। হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন এই প্রাকৃতিক দূর্যোগে। ২২ জুন ২০২২ ভোরে এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। এএফপির মতে, রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ৫ দশমিক ৯। রয়টার্সের মতে, ৬ দশমিক ১।
প্রশ্ন হলো, পদ্মা সেতু এলাকায় যদি এই মাত্রার বা এর চেয়ে ভয়াবহ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, পদ্মা সেতুর কী হবে?
অন্যান্য আধুনিক স্থাপনার মতো পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রেও ভূমিকম্পের কথা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েই ভাবা হয়েছে। ভূমিকম্প হলে যেন সেতু ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে রকমভাবেই করা হয়েছে নকশা। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকেই জানা যাচ্ছে, কঠিনতম ভূমিকম্পসহ্যকারী স্থাপনা হিসেবে বানানো হয়েছে আমাদের স্বপ্নের এই সেতুকে।
পদ্মা সেতুর ইঞ্জিনিয়ারিং নকশা করেছে আমেরিকার বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান এইসিওএম (AECOM)। আমেরিকার বিখ্যাত জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, পার্ল হার্বার মেমোরিয়াল ব্রিজ, আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিমানবন্দরসহ বিশ্বের অসংখ্যা মেগা প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত এই প্রতিষ্ঠানটি। স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানের একজন পরিচালক রবিন শ্যাম। স্ট্রাকচার ম্যাগাজিনে এই সেতু বিশেষজ্ঞ লিখেছেন, পদ্মা সেতু এলাকায় ভূমিকম্পের হিসাব কষার সময় দুই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে।
১. ব্যবহার্য (অপারেটিং) পর্যায়ের ভূমিকম্পের রেকর্ড। ধরে নেওয়া হয়, ১০০ বছরের মধ্যে এই ভূমিকম্প আবার হওয়ার আশঙ্কা আছে, ৬৫ শতাংশ আশঙ্কা সেই ভূমিকম্প আরও ভয়ংকর রূপ নিয়ে আঘাত করবে।
২. ঘটতে পারে, কিন্তু ঘটবেই সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না (কন্টিনেন্সি)। এ ধরনের ভূমিকম্পের ৪৭৫ বছরের রেকর্ড হিসেবে ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ১০০ বছরের সেতুর আয়ুষ্কালে ২০ শতাংশ আশঙ্কা আছে এত তীব্র মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার।
পদ্মা কিন্তু ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত। ১৮৯৭ সালে গ্রেট আসাম আর্থকোয়েক হয়েছিল, যার মাত্রা ছিল ৮–এর বেশি। ১৭৮৭ সালে ভূমিকম্পের কারণে ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ বদলে যায়।
আরেকটা কথা শোনা যায়। গঙ্গা নদী ভারতের উত্তরাখন্ডে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বহু পথ বেয়ে এসেছে পূর্ব বাংলায়। তিব্বত থেকে এসেছে ব্রহ্মপুত্র। বরাক থেকে সুরমা কুশিয়ারা এসে মেঘনা হলো। তিনটি বড় নদী পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বাংলাদেশে এসে একটা জায়গায় মিলিত হলো কেন? তাহলে কি এখানে কোনো ভূমিকম্পের খাদ আছে?
সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু এলাকায় ভূমিকম্প হতে পারে। সে জন্যই ৪৭৫ বছরের রেকর্ড বিবেচনায় নিয়েই পদ্মা সেতু নকশা করা হয়েছে।
ভূমিকম্পের আঘাত আসে অনুভূমিকভাবে। অনুভূমিক আঘাত সামলানোর জন্য পদ্মা সেতুতে ওপরের কাঠামো আর পিলারের মধ্যে বিয়ারিং বসানো হয়েছে। এই বিয়ারিং পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম। আর বিয়ারিংয়ের গুণগত মানে একফোঁটা ছাড় দেওয়া হয়নি। সাইসমিক আইসোলেশন বিয়ারিং নামের পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে পদ্মা সেতু নির্মাণে, যা ভূমিকম্পের আঘাত থেকে সেতুকে রক্ষা করবে।
খোদা না করুন, খুব বড় ভূমিকম্প যদি বাংলাদেশে ঘটেই যায়, পদ্মা সেতুর ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। সে ক্ষেত্রে দেশের বহু ভবন স্থাপনা ভেঙে যাবে, কিন্তু পদ্মা সেতু দাঁড়িয়েই থাকবে। আমাদের প্রার্থনা, ভূমিকম্প যেন না হয়।