নামটা দেখেই হ্যারি পটার-ভক্তরা নিশ্চয় নড়েচড়ে বসেছ, তাই না? অবাক এক জাদুর দুনিয়া, ঐন্দ্রজাল-রোমাঞ্চ-হাসি-বন্ধুত্ব-রহস্য নৈতিকতা-কাহিনির মোড় সবই জে কে রাওলিংয়ের এ অনবদ্য সিরিজটাকে অমর করে রেখেছে। হ্যারি পটারের শেষ বই, হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোজ প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৭ সালে। এরপর সিরিজের অষ্টম মুভি ডেথলি হ্যালোজ পার্ট-২ দিয়ে শেষ হয়েছে ফিল্ম সিরিজটাও। তার পরও, পটারহেডদের উন্মাদনা কি আর থেমে থাকে? রাওলিংয়ের কাছে আসতে থাকে লাখ লাখ চিঠি, ভক্তদের নতুন কিছু চাই-ই চাই!
২০১১ সালের ২৩ জুন লেখিকা জে কে রাওলিং সনির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ঘোষণা দিলেন এক নতুন চমকের, হ্যারি পটারের বইগুলোকে আবার নতুন করে, আরও গভীরভাবে, দারুণ সব সংযোজনের সঙ্গে উপভোগ ও অনুভব করার মতো একটি ওয়েবসাইটের। এমন একটি জায়গা, যেখানে পটারভক্তরা একটা ঐন্দ্রজালিক অভিজ্ঞতা অনুভব করতে পারবে! নানান জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০১২ সালের ১৪ এপ্রিল পটারমোর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এটি একই সঙ্গে একটা অনলাইন গেম, ফ্যান ওয়েবসাইট আর একটা ডিজিটাল এনসাইক্লোপিডিয়া।
আচ্ছা, হ্যারির মোটা আংকেল ভার্নন আর আন্টি পেটুনিয়ার বিয়ের আগে দেখা হয়েছিল কীভাবে? বা শর্টিং হ্যাটের ধারণা লেখিকার মাথায় কীভাবে এসেছিল? অথবা ডার্ক লর্ড ভোল্ডেমর্টের ছোটবেলাটার ঘটনাগুলোই বা কেমন ছিল?
এসব বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবে তুমি, একদম জে কে রাওলিংয়ের নিজের ভাষাতেই! ওয়েবসাইটটার একটা অংশ হ্যারির কাহিনির সঙ্গে এগিয়েছে। ব্যবহারকারীরা একদম নতুনভাবে প্রতিটি বইকে নতুন আঙ্গিকে দেখতে পারবে। প্রতিটি অধ্যায়ের একটা ইন্টারঅ্যাক্টিভ দৃশ্য আসবে ব্যবহারকারীদের কাছে। সেই দৃশ্য থেকে তুমি হঠাত্ই দারুণ দারুণ জিনিস আবিষ্কার করতে পারবে, পারবে দৃশ্যের সঙ্গে সঙ্গে কাহিনি এগিয়ে নিতে। তা ছাড়া প্রত্যেক দৃশ্যেই খুঁজে খুঁজে বিভিন্ন কিছু আবিষ্কার করা যায়, যেখানে প্রতিটাতেই পুরস্কার হিসেবে আছে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জে কে রাওলিংয়ের নতুন নতুন লেখা! ইন্টারঅ্যাক্টিভ দৃশ্যগুলো এখন পাওয়া যাবে সিরিজের ষষ্ঠ বই হাফ ব্লাড প্রিন্সের শেষ পর্যন্ত। শেষ বই ডেথলি হ্যালোজ বর্তমানে নির্মাণাধীন আছে। রাওলিং ২০০৭ সালে শেষ বই প্রকাশের পর বলেছিলেন, হ্যারিকে নিয়ে আর লিখবেন না তিনি। কিন্তু কিছুদিন আগে নিজেই ভাঙলেন সেই শপথ, প্রাপ্তবয়স্ক হ্যারিকে নিয়ে একটি লেখা কিছুদিন আগেই প্রকাশ করেছেন তিনি। এখন লিখছেন ম্যালফয়কে নিয়েও। এগুলোসহ আরও হাজার হাজার লেখা তুমি খুঁজে পাবে এখানে।
‘ইশ্! আমিও যদি একজন জাদুকর হতাম!’ হ্যারি পটারের বইগুলো পড়তে গিয়ে এই আফসোসটা হয়নি, এমন কেউ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বইগুলো পড়তে পড়তে হগওয়ার্টস স্কুল অব উইচ ক্র্যাফটস অ্যান্ড উইজার্ডি; মানে হ্যারির জাদুর স্কুল হোগওয়ার্টসে পড়ার ইচ্ছাটাও জাগে ভালোমতোই! সে জন্যই পটারমোর এনে দিয়েছে সবাইকে হগওয়ার্টসের এই জাদুর দুনিয়ায় প্রবেশ করার সুযোগ! এই দুনিয়ায় একজন জাদুকর হিসেবেই তুমি প্রবেশ করতে পারবে! এ জন্য সবকিছু করতে হবে একদম প্রথা অনুযায়ীই! লাগবে শুধু একটা ই-মেইল আইডি।
হেডমাস্টার অ্যালবাস ডাম্বলডোরের চিঠি পাওয়ার পর তোমাকে যেতে হবে ডায়গন অ্যালি, সেখানে গল্পের মতোই ফ্লরিশ অ্যান্ড ব্লটস, অলিভ্যান্ডারস, গ্রিংগটস ব্যাংক থেকে একে একে তোমাকে লিস্ট অনুযায়ী কিনতে হবে হগওয়ার্টস ইউনিফর্ম, পোষা প্রাণী, পোশন বানানোর উপকরণ, কলড্রন ইত্যাদি। এ ছাড়া ওয়ান্ডমেকার অলিভ্যান্ডারের কাছ থেকে বেছে নিতে হবে নিজের ব্যক্তিত্বের জন্য জুতসই ওয়ান্ড, কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে। সবকিছু কেনা হয়ে গেলে তারপর তুমি রওনা দিতে পারবে হগওয়ার্টসের পানে, দ্য হগওয়ার্টস এক্সপ্রেস ট্রেনে করে।
নিয়মানুযায়ী এখানে হবে তোমার হাউস শর্টিং। গ্রিফিন্ডর, স্লিদারিন, হাফলপাফ আর র্যাভেনক্ল, শর্টিং হ্যাট তোমার ব্যক্তিত্ব যাচাই করে এই চারটি হাউসের একটার অংশ বানাবে। শর্টিংয়ের আগেই পাবে তুমি জে কে রাওলিংয়ের কাছ থেকে একটি ভিডিও মেসেজ, যেখানে শর্টিংয়ের ব্যাপারে তোমাকে বুঝিয়ে দেবেন। শর্টিংয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন দিয়ে তোমাকে যাচাই করে তোমার জন্য সঠিক হাউস সিলেক্ট করে দেবে শর্টিং হ্যান্ড। এখানে প্রিয় হাউস গ্রিফিন্ডর না পেয়ে স্লিদারিন পেলে মন খারাপ কোরো না আবার! সে জন্য তোমাকে বোঝাতে তোমার কাছে আসবে হাউস হেডপ্রিফেক্টের লম্বা একটা চিঠি। তারপর তুমি যাবে তোমার হাউসের কমন রুমে, ব্যস, হয়ে গেলে তুমি হোগওয়ার্টসের বাসিন্দা!
এর পর থেকে তোমার কাজ হচ্ছে তোমার হাউসের জন্য হাউস পয়েন্ট অর্জন করা। তুমি সেটা করতে পারো পোশন বানিয়ে, নতুন নতুন কালেক্টেবলস খুঁজে পেয়ে অথবা ডুয়েলিংয়ের মাধ্যমে। ডায়গন অ্যালি থেকে কেনা পোশন আর চার্মসের বই থেকে তোমাকে শিখতে হবে পোশন বানানো, জাদুমন্ত্র করতে শেখা। সিলেবাসের বইগুলো থেকে শিখে ও নিজের হাউসের অন্য কারও সঙ্গে ডুয়েলিং করে তুমি যাচাই করে নিতে পারবে নিজের দক্ষতা, অন্য হাউসের কাউকে হারিয়ে অর্জন করতে পারবে হাউস পয়েন্টস। পোশন ক্লাসে উপস্থিত থেকে তালিকা অনুযায়ী ডায়গন অ্যালি থেকে কিনতে হবে পোশন তৈরির উপকরণ, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দক্ষতার সঙ্গে বানাতে পারলে এখানেও পাবে তুমি হাউস পয়েন্ট। এভাবে নিজের হাউসের জন্য পয়েন্ট অর্জন করে হাউসকে এগিয়ে নিতে হবে হাউস কাপের জন্য। গ্রেট হলে গেলেই দেখতে পাবে হাউসগুলোর পয়েন্টের অবস্থান। এভাবে প্রতি পাঁচ-ছয় মাস পরপর হাউস কাপ নির্ধারণ করা হয়, জয়ী হাউসের বাসিন্দারা পায় নানান পুরস্কার! এ ছাড়া ইস্টার, ক্রিসমাসসহ বিশেষ বিশেষ দিনে থাকে নিত্যনতুন সব চমক! এখন বর্তমানে হোগওয়ার্টসে শিক্ষার্থী আছে মোট ৯৮ লাখের বেশি!
এ রকম মায়াজালে আবদ্ধ করে রাখার মতো ওয়েবসাইট www.pottermore.com। যখন ইচ্ছে তখন ডুব দিতে পারবে এই জাদুর জগতে, সারা বিশ্বের লাখ লাখ পটার ভক্তের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে পারবে এই মোহনীয় রাজ্যে। ২০১২ সালের টাইম ম্যাগাজিন-এর টপ ৫০-এ ছিল দারুণ এই ওয়েবসাইটটার নাম, ‘ফ্যামিলি অ্যান্ড কিডস’ ক্যাটাগরিতে চতুর্থ। প্রতিনিয়তই সাইটটিতে আসছে নতুন নতুন আপডেট। কী, অবসরে জাদুকরি এই দুনিয়ায় একবার ঢুঁ মেরে আসবে নাকি!