বেলুনে করে ইন্টারনেট
ইন্টারনেট কি ধরা যায়? ছোয়া যায়? দেখা যায়? না কোনোটাই না। ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য আমরা বাসায় ওয়াইফাই সংযোগ নিই। কেউবা মোবাইলে ডেটা কিনে ব্যবহার করি। কিন্তু, এমন অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল রয়েছে, যেখানে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া খুবই কঠিন। কেনিয়ার এমনই এক জায়গায় ঘটেছে মজার ঘটনা।
কেনিয়ার দূরদূরান্তে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিচ্ছে লুন নামের এক কোম্পানি। এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বেলুন৷ কর্তৃপক্ষের ধারণা, এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ সেবা পৌঁছে দিতে এটা অনেক সহজ ও সস্তা পদ্ধতি হতে পারে।
গুগলের বিশেষ প্রকল্প হিসেবে লুন কাজ শুরু করে। পরে নিজেরাই তৈরি করে ফেলে একটি কোম্পানি। বর্তমানে টেলকম কেনিয়া নামের এক সেল সার্ভিসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করছে তারা৷
অনেক প্রশ্নই তোমার মনে আসতে পারে। কেন বেলুন ব্যবহার করা হচ্ছে? আর বেলুন দিয়েই কীভাবে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া যায়?
উন্নত দেশগুলোতে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হয়। যেমন ধরো কেব্ল লাইন বা সেল টাওয়ার ব্যবহার করে। অনুন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের সেবা সীমিত৷ আর শুরুতেই সেবার মান কতটা ভালো থাকবে, তা নিয়ে সন্দেহ থাকে।
অনেকের বাসার ছাদে বা মাঠে-ঘাটে বিভিন্ন জায়গায় সিম কোম্পানিগুলোর বিশাল বিশাল টাওয়ার দেখতে পাও। লুন আসলে এ ধরনের ছোট আকৃতির টাওয়ার ব্যবহার করছে৷ বেলুনে ভেসে বেড়ানো ছোট ছোট এ সেল টাওয়ার খুব সহজে মানুষের কাছে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হচ্ছে, তা তুলনামূলকভাবে বেশ সস্তা। কারণ ২০১৯ সালেও আফ্রিকাতে ৩০ শতাংশের কম মানুষ ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করত৷
বুঝতেই পারছ লুন মূলত এক ধরনের ভাসমান টাওয়ার ব্যবহার করছে। বেলুনগুলো বিশালাকার, একেকটা টেনিস কোর্টের সমান। বেলুনগুলো পৃথিবীর ১২ মাইল (২০ কিলোমিটার) ওপর দিয়ে ভেসে বেড়ায়। অধিকাংশই প্লেনের ওপর দিয়ে যায়।
সোলার পাওয়ারে চলমান বিশাল বিশাল প্লাস্টিক বেলুনগুলো ১০০ দিনের বেশি উড়ে বেড়াতে পারে৷ বর্তমানে এ রকম ৩৫টি বেলুন ব্যবহার করছে কোম্পানিটি। যারা প্রায় ৫০ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গার মানুষকে এ সেবা দিচ্ছে।
দুই বছর ধরে এই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করেছে লুন। ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার মানুষ এই ইন্টারনেট সার্ভিস ব্যবহার করছে। এর আগে মূলত বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতিতে লুন ইন্টারনেট সেবা দিত। যেমন ২০১৭ সালে হারিকেন মারিয়াতে পোর্তে রিকোর সেল টাওয়ারগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর লুন এ সেবা দিয়েছিল। আবার ২০১৯ সালে পেরুর ভূমিকম্পের পরও এ সেবা দেওয়া হয়৷
প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ ধরনের ইন্টারনেট সার্ভিস দেওয়ার জন্য লুন একমাত্র কোম্পানি না। আফ্রিকার বেশকিছু অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য ড্রোনের ব্যবহার করেছিল ফেসবুক। কিন্তু শেষমেশ তা সফল হয়নি৷
লুন কর্তৃপক্ষ এখন পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও এ সেবা দিতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে পেরু ও মোজাম্বিকের সঙ্গেও চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তারা।
সূত্র : কিডস নিউজ ডট কম