সুধীমণ্ডলী,
আজকের সভায় অন্যতম নির্ধারিত বক্তা জনাব বদরুদ্দীন উমর অনুপস্থিত। খেসারত হিসেবে আমাকে বিনা নোটিশে মঞ্চের ওপর তুলে দেওয়া হলো। তিনি থাকলে আমাকে এভাবে হাস্যকর হতে হতো না। বিদ্যাসাগরের মতো একজন মানুষের বিষয়ে কথা বলা এমনিতেই কঠিন। হঠাত্ হলে আরও কঠিন।
বেশ কয়েকজন বক্তা নানান দিক থেকে বিদ্যাসাগরের ওপর আলোকপাত করেছেন। বিদ্যাসাগরের সব ভূমিকাই স্পর্শ করা হয়েছে। তাই আমি ওই বিষয়গুলোর দিকে না গিয়ে তাঁর একটা ছোট্ট দিক নিয়ে দু-চারটা কথা বলব।
কিছুদিন আগে দৈনিক ভোরের কাগজ-এর একটা বিভাগে আমাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছিল। বিভাগটার নাম ‘আমার আমি’। কী ভালো লাগে, কী মনে হলে হাসি পায়, প্রিয় অভিনেত্রীর নাম কী, এমনি সব হাস্যকর প্রশ্নের জবাব। একেক সপ্তাহে দিতে হয় একেকজনকে। একবার দেখলাম, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া স্বয়ং উত্তর দিয়েছেন। তাতে আমার সাহস বেড়ে গেল। প্রধানমন্ত্রীই যদি পারেন, আমার বাধা কেন? আমিও দিয়েছিলাম। সেখানে অনেক প্রশ্নের একটা প্রশ্ন ছিল: যেসব উপদেশ সারা জীবন পেয়েছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় কোনটি? আমি লিখেছিলাম, ছেলেবেলায় শোনা আব্বার একটা উপদেশ। উপদেশটা হলো, ‘বোকা হোস’। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এখানে ‘বোকা হোস’ অর্থ এই নয় যে ‘বেকুব হোস’। এর অর্থ: নিজের স্বার্থের ব্যাপারে বোকা হোস। স্বার্থ ভুলতে চেষ্টা করিস। ভোরের কাগজ-এর বিভাগীয় সম্পাদক আমার এই উত্তরটা ছাপেননি। হয়তো ভেবেছিলেন, স্বভাব-অভ্যাসে আমি তামাশা করে উত্তরটা দিয়েছি। কিন্তু ব্যাপারটা আদৌ তা ছিল না। খুবই সিরিয়াসভাবে কথাটা আমি লিখেছিলাম।
বিদ্যাসাগরের মধ্যে যে শক্তিকে আমি সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করি তা হলো, এই বোকা হওয়ার শক্তি। যেসব কারণে তাঁকে আমি বড় ভাবি, তার কারণও এই।
আপনারা জানেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের উদ্যোগে আমরা সারা দেশে ছেলেমেয়েদের জন্য একটা বইপড়া কর্মসূচি চালিয়ে থাকি। তাতে আমরা শুধু বই পড়াই না, কে কটা ভালো বই কত ভালোভাবে পড়ল, তার মূল্যায়নের পাশাপাশি তাদের মেধা মূল্যায়নেরও চেষ্টা করি। এই মূল্যায়নের ভিত্তিতে তাদের নানা রকম পুরস্কার দেবার ব্যবস্থা আছে। তো, সেই মূল্যায়ন পদ্ধতির মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের ধীশক্তি, মনন এবং বুদ্ধিমত্তাকে মূল্যায়ন করার ব্যবস্থাই কেবল আছে, মূল জোরটা ওর ওপরেই। আমরা মেধার ভিত্তিতে এতকাল তাদের পুরস্কার দিয়েছি এবং মেধাকেই যোগ্যতার একমাত্র ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছি। কার স্মৃতিশক্তি কত প্রখর, বোধ কত গভীর, মৌলিকতা কত উজ্জ্বল—এসবই ছিল ওই সব মূল্যায়নের ভিত্তি। কিন্তু একদিন এমন একটা ঘটনা ঘটল, যাকে কেন্দ্র করে মূল্যায়নের এই পদ্ধতির ওপরই আমার মনে সন্দেহ জেগে গেল। মনে হলো, কেবল মেধার মূল্যায়ন করে কি একজন মানুষের সম্পূর্ণ সত্তার মূল্যায়ন সম্ভব? মেধা তো মানুষের গোটা শক্তির একটা অংশ মাত্র। তার তো আরও অনেক শক্তি আছে, যা মেধার সঙ্গে সব সময় সম্পর্কিত নয়। যেমন শারীরিক শক্তি, পরিশ্রমক্ষমতা, মূল্যবোধ, দুঃসাহস, উদ্যম, হূদয়ের শুভত্ব, পরার্থপরতা—এমনই আরও অনেক কিছু। কী করে এই সন্দেহটা জাগল সে গল্পটা আপনাদের বলি।
ঘটনাটি ঘটেছিল এই ঘরটার মধ্যেই। একদিন একাদশ শ্রেণির ছেলেমেয়েদের নিয়ে এখানে ক্লাস করছি। ক্লাসে এক শ-সোয়া শর মতো ছাত্রছাত্রী। হঠাত্ পাশের ওই বস্তিতে আগুন লাগল। আমাদের দেয়ালের একেবারে পাশেই বস্তি, কাজেই আগুনের ভয়ংকরতম তাণ্ডবের মধ্যে পড়ে গেলাম। একটা মহল্লাজুড়ে আগুন লাগা ব্যাপারটা যে কতটা ভীতিপ্রদ, তা এত কাছে থেকে এর আগে দেখিনি। মুহূর্তের মধ্যে ডাকাতের মতো হিংস্র উন্মত্ত হাওয়া চারপাশ থেকে যে কী প্রচণ্ডভাবে ছুটে আসে, কী ভয়ংকরভাবে তার লেলিহান জিব সব দিক গ্রাস করার জন্য উন্মত্তের মতো ঘুরে বেড়ায়, সেদিন প্রথম দেখার সুযোগ হলো। আমি আতঙ্কে দুশ্চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়লাম। ভয় হলো এত কষ্টে তৈরি আমাদের এক লাখ বইয়ের লাইব্রেরিটা হয়তো পুড়ে যাবে। এক শ-সোয়া শ ছেলেমেয়ে ক্লাসে; দেখলাম, চোখের পলকে তারা তিনটা দলে ভাগ হয়ে গেল। একদল লেজ তুলে ছুটল কেন্দ্রের গেটের দিকে, যত পেছনে তাকায় তত সামনে দৌড়ায়। আরেকটা দলকে দেখলাম, তারা যাচ্ছে গেটের দিকেই, কিন্তু গেট পেরোচ্ছে না। গেটের কাছাকাছি একটা নিরাপদ জায়গায় দাঁড়িয়ে সেনাপতির মতো নানান জনকে নানান রকম হুকুম দিচ্ছে, ‘পানি আনো, বালু আনো’—শ্রীকান্তের সেই ছিনাথ বহুরূপীর গল্পের পিসেমশায়ের মতো। ‘বন্দুক লাও, শড়কি লাও!’—এখন প্রশ্ন, ‘লাও তো বটে কিন্তু আনে কে?’ ওদের প্রায় সবাই ক্লাসের সবচেয়ে চৌকস ছাত্র। এদের চোখেমুখে কথা, জিব ক্ষুরধার। আমি ভীত-মরিয়া হয়ে আট-দশজন ছেলেমেয়েকে ডেকে স্বল্পবুদ্ধিমতো লাইব্রেরির দেয়ালগুলোতে চারপাশ থেকে বালতি বালতি পানি ঢালতে লাগলাম, যাতে ভেজা-দেয়ালে আগুন সুবিধা করতে না পারে।
যাই হোক, ঘণ্টা দুয়েক পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে এল। আমরা ক্লাসে ফিরে এলাম। ভেগে-পড়া সেই দুই পার্টি পরিস্থিতি নিরাপদ বুঝে বীরদর্পে আবার ক্লাসে এসে বসল, কিন্তু পড়াশোনায় আর মন বসল না। আগুনের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে এলোমেলো কথাবার্তা চলতে লাগল। যারা গেট পেরিয়ে সটকে পড়েছিল বা যারা গেটের এপাশ থেকেই কল্পিত আজ্ঞাবহদের উদ্দেশে বন্দুক-শড়কি জোগানোর হুকুম দিয়েছিল, তাদের গলার স্বরই তখন সবার ওপরে। শুনে মনে হয়, আগুনটা যে নিভেছে তা তাদের জন্যই।
কিন্তু এই বাকসর্বস্বদের বাইরেও আরও একদল অপ্রত্যাশিত ছেলেকে সেদিন দেখতে পেলাম সেই ছেলেমেয়েদের মধ্যে। এই ক্লাসেরই ছাত্র তারা, কিন্তু এতই সাধারণ যে ক্লাসে প্রাত্যহিক পড়াশোনায় তাদের কোনো দিন দেখেছি বলেই মনে পড়ে না। রোজকার ক্লাসের সরগরম আলোচনায় অংশ নিয়ে লাঙুল-আছড়াতে এদের যেন প্রায় দেখিই-নি। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, ওরা প্রায় সবাই কমবেশি আহত, কারও হাতে ফোসকা, কারও গালে ছ্যাঁকা লাগা কালো দাগ, কারও কনুইয়ের পাশ থেকে রক্ত ঝরছে, কারও জামা ছেঁড়া—এমনি। ক্লাসের দৈনন্দিন পড়াশোনার পেছনের বেঞ্চির অতি সাধারণ ছাত্র এরা, অনেকে এতই মেধাহীন যে প্রায় তিন-চার মাস নিয়মিত ক্লাস করার পরও তাদের চেহারা-মনে কোনো রকম ছাপ ফেলেনি। তাদের বিপর্যস্ত অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোথায় গিয়েছিলে? এসব হলো কী করে?’ তাদের অস্ফুট অসংলগ্ন কথাবার্তা থেকে বোঝা গেল, আমাদের বাক্যবাগীশ বীর-পুঙ্গবেরা যখন গেট পেরিয়ে নিরাপদ জায়গার দিকে ছুটছিল, তখন তারা করেছিল উল্টো কাজ। আগুন নেভানোর জন্য চলে গিয়েছিল বস্তির ভেতরে। এ রকম আট-দশটা ছেলে দেখলাম এই দলে। তখন আমার সামনে বসে থাকা ছাত্রদের মধ্যে আমি স্পষ্ট দুটো ভাগ দেখতে পেলাম। একদল—যারা পেছনে তাকিয়েছে আর সামনে দৌড়িয়েছে, নিজেদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করে পেছনের মানবিক বিপর্যয়ের সেই রোমাঞ্চকর দৃশ্য উপভোগ করেছে, হুকুম-হাকাম দিয়েছে, আর একদল—যারা বোকার মতো সেই আগুন নেভাতে ছুটে গেছে।
না, কেউ তাদের যেতে বলেনি সেখানে। নিজেদের তাড়নাতেই তারা চলে গেছে। মানবতা বিপন্ন হচ্ছে টের পেতেই নিজেদের অজান্তে বুক এগিয়ে দিয়েছে, ভালোমন্দ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেনি। হঠাত্ করে বুঝতে পারেনি কী করলে আগুন নেভানো যাবে, তবু এগিয়ে গিয়ে সাধ্যমতো দৌড়াদৌড়ি করেছে, বিপদ দেখেও তার ভেতর ঢুকে গেছে, আহত হয়েছে, সাহায্য করেছে। কাজেই দল দুটো: একদল যারা কাজ করেছিল নিজেদের বাঁচাতে, অন্য দল যারা ছুটে গিয়েছিল অন্যদের সাহায্যে। ছেলেগুলোর জন্য খুব মমতা হলো আমার। মনে হলো আমাদের কেন্দ্রের যে মূল্যায়নব্যবস্থা, তাতে মেধার দিক থেকে সাদামাটা, অথচ হূদয়ের দিক থেকে শক্তিশালী এই ছেলেমেয়েদের পুরস্কৃত করার তো কোনো ব্যবস্থা নেই। নম্বর কি পাবে শুধু স্বার্থপর মেধা? লোভাতুর বুদ্ধিবৃত্তি? হূদয় নয়? ভালোবাসা নয়? মানবিক অনুভূতি নয়?
আপনাদের হয়তো মনে আছে, যখন একাত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলনের ডঙ্কা বেজে উঠেছিল, তখন কীভাবে রাতারাতি একদল জ্বালাময়ী বক্তা ব্যাঙের ছাতার মতো জন্ম নিয়েছিল এই দেশের পথে-প্রান্তরে। স্বাধীনতার আগের অন্তত দুই বছর তাদের অগ্নিময় ভাষণে সারা দেশ প্রকম্পিত ছিল। কিন্তু যখন যুদ্ধ আরম্ভ হলো, পাকিস্তানি সৈন্যরা ক্ষুধার্ত পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল দেশবাসীর ওপর, তাদের সেই সব বাগাড়ম্বর আর উদ্দীপনার ওপর যেন পানি ঢেলে দিল কেউ হঠাত্। সবকিছু মুহূর্তে থেমে নীরব হয়ে গেল। আর সেই বাক্সর্বস্ব যোদ্ধার দল দেশ ছেড়ে গিয়ে উঠল কলকাতায়, ভাষণ-সুযোগহীনভাবে মুক্তিযুদ্ধের বুকের ওপর বসে নিজেদের ভাগ্যান্বেষণ করতে লাগল রাস্তায় রাস্তায়। স্বাভাবিকভাবেই একটা ভয়াবহ উত্কণ্ঠায় পড়ে গেল দেশ। এই অবস্থায় দেশকে বাঁচাবে কে? আমাদের দাসত্বের শৃঙ্খল কি চিরস্থায়ী হয়ে গেল? যুদ্ধ করবে কারা? কোথায় জাতির পরিত্রাণকারী?
এই উদ্ধারহীন সময়ে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল সারা দেশে। একধরনের অপরিচিত অবোধ বেদনাকাতর যুবক জেগে উঠতে লাগল গ্রামবাংলার বুকের ভেতর থেকে; কেউ এদের এর আগে কোনো দিন দেখেনি। গ্রামবাংলার মতোই তাদের হূদয় নির্বোধ ও লাঞ্ছনা-ব্যথিত। আমি তখন গ্রামে। দেখতাম চারপাশের গ্রামগুলো থেকে একেক দিন ২০-২৫ জন করে ছেলে চলে যাচ্ছে যুদ্ধে। একেক দিন সকালে উঠেই দেখা যাচ্ছে, গোটা একটা গ্রামের ছেলেপেলে প্রায় খালি।
এই অবোধ এবং মূঢ় যুবকেরা যুদ্ধ করে তাদের মূল্যহীন রক্তে জাতিকে উপহার দিল স্বাধীনতা।
কিন্তু ১৬ ডিসেম্বরে ঘটল পুরো অন্য দৃশ্য। ওই জ্বালাময়ী বাকসর্বস্ব বক্তারা, চোখের পলকে কীভাবে যেন ফিরে এল রাজধানীসহ সারা দেশের সবখানে। দখল করে নিল জাতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকা মহানগরী। ১৬ ডিসেম্বর তাদের হঠাত্ দেখা গিয়েছিল বলে দেশের হতাশাগ্রস্ত জনসাধারণ বিদ্রূপ করে তাদের নাম রেখেছিল ‘সিক্সটিন্থ ডিভিশন’।
এদিকে যুদ্ধ শেষ না হতেই যুদ্ধক্লান্ত ওই অবোধ যুবকেরা টের পেয়েছিল এই বিজয় তাদের জন্য নয়, এই মহানগরীতে তারা অবাঞ্ছিত, অতিরিক্ত। তারা নিঃশব্দে মুছে গিয়েছিল বাংলার বুকের ভেতরে। যেভাবে একদিন তারা জেগে উঠেছিল, ঠিক সেভাবে। তাদের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। অথচ ওরাই তো ছিল সেদিনকার এই জাতির মূল শক্তি, আশ্রয়, উদ্ধার ও একমাত্র আশ্বাস। জাতির বিবেক, বেদনা, সংগ্রাম আর শক্তিমত্তাকে তো ধারণ করেছিল এরাই—নিজেদের রক্ত আর জীবনের বিনিময়ে। অথচ এর কোনো মূল্য নেই, স্বীকৃতি বা পুরস্কার নেই, অভিনন্দন বা আবাহন নেই—বরং আছে উল্টো আচরণ। যেন জাতির প্রতিপক্ষ এরা। এদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে গুঁড়িয়ে দিতে না পারলে কারও স্বস্তি নেই, নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই।
সেদিন আমাদের আলোচনা ক্লাসে আমার সামনে আগুনে আঁচ লাগা, পুড়ে-ছড়ে যাওয়া ছেলেগুলোকে দেখে আমার মনে নতুন ভাবনা এসে ভিড় করল। মনে হলো কেন্দ্রে আমরা ছাত্রছাত্রীদের মেধা-প্রতিভা অনেক কিছুরই মূল্যায়ন করি, কিন্তু তাদের ভেতর যে আত্মোত্সর্গী হূদয়টা রয়েছে, যে পরোপকারী বেদনাবান মানুষ রয়েছে—একটা জাতির যা সবচেয়ে বড় সম্পদ—তাকে তো সম্মান দিই না। তো ওই ঘটনার পর আমি আমাদের মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন করার উদ্যোগ নিই। আমরা এখন শতকরা ৫০ ভাগ নম্বর দিই মেধার জন্য, আর ৫০ ভাগ দিই নির্বোধ হওয়ার ক্ষমতার জন্য।
ওই যে ছেলেগুলো আগুনের ভেতর চলে গিয়েছিল, কী শক্তি থাকায় ওরা চলে যেতে পেরেছিল? ওদের মধ্যে ছিল নির্বোধ হওয়ার ক্ষমতা, অন্যের দুঃখে নিজের স্বার্থ বা ভালোমন্দকে ভুলতে পারার ক্ষমতা; প্রেমের ক্ষমতা, ভালোবাসার ক্ষমতা, অন্যের কষ্টকে নিজের কষ্ট বলে অনুভব করে নিজের লাভালাভকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা। এ ক্ষমতা যে কেবল অসাধারণ মানুষের মধ্যেই থাকে তা নয়, বহু সাধারণ মানুষের মধ্যেও থাকে। আসলে মেধাবী মানুষ যা দিয়ে সত্যিকার অর্থে অসাধারণ হন, তা তো এই ক্ষমতাই। এই ক্ষমতার একটা উদাহরণ দিই। গল্পটা সেকেলে, কিন্তু এখনো বাতিল নয়।
ঘুমের মধ্যে বায়েজিদ বোস্তামীর মা বায়েজিদ বোস্তামীকে বলেছিলেন এক গ্লাস পানি দিতে। বায়েজিদ বোস্তামী পানি নিয়ে এসেছেন। এসে দেখলেন মা ঘুমিয়ে গেছেন। আমরা যে কেউ হলে এই অবস্থায় কী করতাম? হয়তো গ্লাসটা যত্ন করে কোথাও রেখে দিয়ে মাকে অনুসরণ করে অমনি গভীর ঘুমের ভেতর ঢলে পড়তাম। পরের দিন মা জাগার তিন ঘণ্টা পরে জেগে বলতাম, ও হো হো, তুমি মা তখন রাত্রে এমনভাবে ঘুমিয়ে গেলে যে আমি ভাবলাম সাত-আট ঘণ্টার মধ্যে আর হয়তো উঠবেই না। তাই একটু ঘুমিয়ে নিলাম আরকি।
কিন্তু বায়েজিদের ব্যাপারে কী হলো? এমন কোনো অজুহাত তুললেন না তিনি। পানি নিয়ে এসে দেখেন, মা ঘুমিয়ে গেছেন। মা পানি চেয়েছেন, প্রথম সুযোগে তাঁর হাতে তা তুলে দিতে হবে, কিন্তু তিনি তো এখন ঘুমে। এখন পানি দিতে গেলে ঘুম থেকে তুলে তাঁকে কষ্ট দেওয়া হবে। তাহলে কী কর্তব্য? পানি হাতে বোকার মতো একঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন সারা রাত, যেন মায়ের কল্যাণে শিয়রে প্রার্থনারত স্নিগ্ধ একরাশ হাস্নাহেনা। মায়ের ঘুম ভাঙতেই তাঁর হাতে তুলে দিলেন গ্লাসটা।
আমাদের মতো না করে কেন করলেন তিনি অমনটা? কারণ একটাই। তাঁর মায়ের জন্য তাঁর ভালোবাসা ছিল আমাদের মায়ের জন্য আমাদের ভালোবাসার চেয়ে বেশি। মায়ের সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দের জন্য উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা ছিল আমাদের চেয়ে বেশি। সেটা এতটাই জন্মান্ধ আর অবোধ যে এমন একজন মেধাবী মানুষ হয়েও এমন অবোধ শিশুর মতো আচরণ করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব হয়নি; যা কোনো সাধারণ বুদ্ধির মানুষও হয়তো এটা করত না। কিংবা ধরা যাক, বিদ্যাসাগরের সেই গল্পটা। এখন অবশ্য গল্পটা সত্য নয় বলেই শোনা যাচ্ছে, হয়তো তা প্রমাণিতও হয়েছে: সেই যে ভাইয়ের বিয়েতে মা তাঁকে বাড়িতে আসতে বলেছিলেন। ছুটি না পাওয়ায় চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দুর্দান্ত পার্বত্য নদ দামোদর সাঁতরে মায়ের কাছে গিয়ে বলেছিলেন, ‘মা, আমি এসেছি’, সেই গল্পটা।
গল্পটা হয়তো একটু অতিরঞ্জিত। কিন্তু একটু আগে মিজান ভাই বিদ্যাসাগরের যে গল্পটা করলেন, সেটাও তো মিথ্যা নয়। রবীন্দ্রনাথও তাঁর প্রবন্ধে লিখেছেন গল্পটা।
সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণের অধ্যাপকের পদ খালি হয়েছে। তাঁর উত্কণ্ঠা: একজন যোগ্য মানুষ যেন চাকরিটা পায়। না হলে একজন অযোগ্য লোক সেটা হাতিয়ে নেবে। কিন্তু যোগ্য মানুষটি তারকনাথ তর্কবাচস্পতি—তখন কলকাতায় নেই। তিনি থাকেন ৩০ ক্রোশ দূরে, কলনায়, গ্রামের বাড়িতে। অথচ হার্শেল সাহেব অবিলম্বে তর্কবাচস্পতির সম্মতি ও আবেদনপত্র চান। হাতে সবসুদ্ধ সময় মাত্র এক দিন। দুর্গম মেঠোপথে গাড়িঘোড়া পাঠিয়ে তাঁর দরখাস্ত আনাবার কোনো উপায় নেই। তো কী করেন তিনি? কেবল এই নৈতিক মূল্যবোধের তাড়নায়, নিজেই পায়ে হেঁটে রওনা দিলেন তাঁর গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে। সারা রাত হেঁটে ৩০ ক্রোশ দূরে তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলেন, সেখান থেকে দরখাস্তে তাঁর স্বাক্ষর নিয়ে আর প্রশংসাপত্রগুলো সংগ্রহ করে আবার পরের দিন গোটা পথ হেঁটে কলকাতায় ফিরে সময়মতো দরখাস্তটা জমা দিলেন।
আত্মীয় না, বন্ধু না, কোনো রকম স্বার্থপ্রণোদিত হয়ে না, কেবল একটা শ্রেয়বোধের জন্য ৩০ ক্রোশ এভাবে হেঁটে যাওয়া আর ফিরে আসার ব্যাপারটা কি এতই সোজা? কতটা মূল্যবোধের শক্তি আর মমতার প্রস্রবণ ভেতরে থাকলে মানুষ এটা পারে! এসব ছাড়াও বিদ্যাসাগরের কুলিগিরি করার সেই বিখ্যাত গল্প, সাহেবের ঔদ্ধত্যকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য টেবিলের ওপর চটিসুদ্ধ পা তুলে বসার গল্প, নীলদর্পণ নাটক দেখতে গিয়ে ক্ষেত্রমণিকে বলাত্কারের দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে লম্পট লোকের মুখে চটি ছুড়ে মারার ঘটনা—এসব থেকে কি বোঝা যায় না কী অসীম প্রেমের শক্তি, কী অনমনীয় ও দুর্জয় আত্মমর্যাদাবোধ ও অবোধ ভালোবাসার অথই একটা সাগর ছিল তাঁর মধ্যে।
যে মানুষ এমন সব অবিশ্বাস্য কাজ করতে পারেন, তাঁর মতো একজন মানুষকে নিয়েই কেবল গড়ে উঠতে পারে মাতৃভক্তির জন্য চাকরি ছেড়ে, দামোদর সাঁতরে, ভাইয়ের বিয়েতে উপস্থিত হওয়ার সেই অসাধারণ কিংবদন্তি। মিথ্যা হয়েও সত্যের বিভ্রম জাগিয়ে রেখেছে গল্পটা। দীর্ঘ দেড় শ বছর ধরে কোটি কোটি বাঙালি গল্পটাকে বিশ্বাস করেছে ও অনুপ্রাণিত হয়েছে। আমার বা আমাদের কাউকে নিয়ে কি এই কিংবদন্তি তৈরি হতে পারত? এমন অবস্থায় আমরা কী করতাম। ধরা যাক, যদি ছোট ভাইয়ের বিয়েতে উপস্থিত হতে আমার মা আমাকে তাগিদ দিয়ে ও রকম চিঠি দিতেন আর বড়কর্তার কাছ থেকে ছুটি না পেতাম, কী করতাম আমি? নিশ্চয়ই মায়ের কাছে প্রগাঢ় মাতৃভক্তিমূলক একটা চমত্কার চিঠি লিখতাম: মা, আসিবার অদম্য আকাঙ্ক্ষা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এমন দুর্বৃত্ত এক সাহেব আমাদের বড়কর্তা হইয়া আসিয়াছেন যে মাতৃভক্তির মর্মার্থ পর্যন্ত বুঝিতে পারেন না। কিছুতেই ছুটি দিলেন না। তোমার আদেশ লঙ্ঘন করা আমার পক্ষে যে কতটা দুর্বহ তাহা নিশ্চয়ই বুঝিতেছ। তবু বাধ্য হইয়া থাকিয়া যাইতে হইতেছে। সাধ্যমতো টাকা পাঠাইয়া দিলাম। বিবাহ সুসম্পন্ন করিয়া লইও। আমি প্রথম সুযোগেই তোমার নিকট উপস্থিত হইব। ইতি তোমার বাধ্যগত, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এখন এই যে গল্পগুলো: ৩০ ক্রোশ হাঁটা এবং ফিরে আসা কিংবা বায়েজিদ বোস্তামীর গল্প, অথবা দামোদর নদ সাঁতরে চলে যাওয়া, স্বেচ্ছায় নিজের হাতে সক্রেটিসের বিষপান—এই গল্পগুলো কি মানবজাতির বুদ্ধির গল্প? এসব কি মানুষের ধীশক্তির পরিচয়বাহী? এগুলো তো সব বুদ্ধিহীনতার গল্প। ভালোবাসা মানুষকে কতখানি নির্বোধ করে দিতে পারে, তার সর্বোচ্চ উদাহরণ। মানুষের নির্বোধ হওয়ার ক্ষমতা যেকোনো আত্মঘাতী পর্যায়ে যেতে পারে তার লোকশ্রুত প্রতীক। তাই এরা কেবল সাধারণ গল্প হয়ে থাকেনি, হয়ে উঠেছে মানবজাতির জীবন্ত কিংবদন্তি, তাদের জীবনের আচরণীয় আদর্শ।
আলোচ্য ব্যক্তিরা মানবজাতির শ্রেষ্ঠ ও প্রতিভাবান মানুষদের দলের। সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষদের অন্যতম। তাঁরা কী করে এত নির্বোধ হতে পেরেছেন? তাঁরা যে ওই সব পারেন, আর আমরা পারি না, তার কারণও একটাই। তাঁদের ভেতর ভালোবাসার শক্তি আমাদের চাইতে বেশি। তাই মায়ের ডাক এলে অমন প্রবলভাবে তাঁর সমস্ত কিছু ভেসে চলে যায়। আমাদের যায় না। একজন যোগ্য মানুষ চাকরি হারালে সমাজের ক্ষতি হবে এই উত্কণ্ঠা তাঁর ভেতর এমনই প্রচণ্ড যে এর সামনে তাঁর ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ, লাভালাভ, কষ্ট-যন্ত্রণা সমস্ত কিছু মিথ্যা হয়ে পড়ে। এই ভালোবাসা তাঁর ভেতর যে কত পরিব্যাপ্ত ছিল তা কবি নবীনচন্দ্র সেনের আত্মজীবনী থেকে উদ্ধৃত করছি। নিজের তরুণ বয়সে অপরিসীম দুর্দশার দিনে উজ্জ্বল উদ্ধারকারী হিসেবে তিনিও সেকালে পেয়েছিলেন বিদ্যাসাগরকে, ‘যে এক ভেলার ভরসা করিয়া ভাসিতেছিলাম, তাহাও তো ডুবিয়া গেল। এখন কী করি? অবস্থার ঘোর ঘটায় চারিদিক সমাচ্ছন্ন। মস্তকের উপর ঝটিকা গর্জ্জিতেছে। ঘন ঘন বজ্রপাত হইতেছে। ঘোরতর অন্ধকার ভিন্ন কিছুই দেখিতেছি না। একটি ক্ষীণ জ্যোতিঃ, একটি ক্ষুদ্র নক্ষত্রও কোন দিকে দেখিতেছি না যে, উহাকে উপলক্ষ করিয়া ভাসিয়া থাকি। তরঙ্গের উপর তরঙ্গ আসিয়া এরূপ আহত ও নিমজ্জিত করিতেছে যে, আর ভাসিয়া থাকিবার আশা দেখিতেছি না। একটি কিশোরবয়স্ক কলিকাতার পথের কাঙ্গাল কেমন করিয়া কূল পাইবে? সকল অবলম্বন ভাসিয়া গিয়াছে, সকল আশা নিবিয়া গিয়াছে। একমাত্র আশা সেই বিপদ্ভঞ্জন হরি। ভক্তিভরে, অবসন্নপ্রাণে, কাতর অশ্রুপূর্ণ নয়নে তাঁহার দিকে চাহিলাম। তিনি প্রহ্লাদের মত আমাকেও তাঁহার নবমূর্ত্তিতে দেখা দিলেন। সেই নরনারায়ণ শ্রীঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।...সেই ভগবদ্বাক্য, ‘ধর্ম্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে’—মানবের একমাত্র সান্ত্বনার কথা। ‘পুণ্যং পরোপকারঞ্চ পাপঞ্চ পরপীড়নে’—এই মহাধর্ম্ম সংস্থাপন করিবার জন্য ঈশ্বরচন্দ্রের অবতার। সেই মহাব্রত সাধন করিয়া, তাঁহার অবতারে বঙ্গদেশ পবিত্র করিয়া তিনি তিরোহিত হইয়াছেন মাত্র। তাঁহার মৃত্যু নাই। তিনি চিরজীবী। তিনি চিরদিন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থাকিবেন।’
তাঁর প্রতিটা আচরণের মধ্যে যে দেশপ্রেম, দেশের মর্যাদার জন্য ভালোবাসা, এর মঙ্গলের জন্য আকুতি, প্রতিটা মানুষের কল্যাণের জন্য মমতা, মায়ের জন্য প্রেম, ভাইয়ের জন্য প্রেম, প্রত্যেকটি চেনা-অচেনা মানুষের জন্য প্রেম, মানুষপ্রেম এবং প্রেমের জন্য নিজের সুখ-শান্তিকে বিসর্জন, বুদ্ধিকে বিসর্জন, বৈষয়িক বিষয় বিবেচনাকে বিসর্জন, এর সমকক্ষ শক্তি কোথায় কতটুকু দেখা গেছে এই জাতির জীবনে?
নবীন সেন সেকালের একজন ঝানু ডেপুটি, যথেষ্ট প্রখর মানুষ। কিন্তু তাঁর আত্মজীবনী পড়লেও টের পেতে অসুবিধা হয় না বিদ্যাসাগরের কথা বলতে কেন এভাবে আবেগাপ্লুত হয়ে যান তিনি? মাইকেলের মতো এমন দুর্বিনীত মানুষও কেন তাঁর সামনে এমন অসহায়? গান্ধীর প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলেই নেহরু যেমন শিশুসুলভ আর প্রগলভ হয়ে পড়তেন এ-ও প্রায় তেমনি। কেন? কী ছিল তাঁর ভেতরে। সবাই জানেন কী ছিল। ছিল নির্বোধ-অবোধ ভালোবাসার শক্তি, কিন্তু বুদ্ধি-বিবেচনাকে ভাসিয়ে নেওয়া অমিত, অন্ধ, আত্মবিস্মৃত ও উত্সারিত একটা হূদয়। যে ছোট্ট মেয়েটিকে অকালে বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ির অন্ধকার নিষ্পেষণের মধ্যে চিরদিনের মতো ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তার থেকে শুরু করে অভিশপ্ত জীবনের ভেতর ধুঁকে ধুঁকে শেষ হয়ে যাওয়া বিধবা, এ দেশের শিক্ষাবঞ্চিত কোটি কোটি শিশু, মাইকেল, নবীন সেনের মতো প্রতিভা, তাঁর আশপাশের প্রতিটি মানুষ, তাঁর সমাজ, তাঁর দেশ—কে এই উপচে পড়া ভালোবাসা থেকে, তাঁর নির্বোধ ভালোবাসার অসীম প্রস্রবণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে?
সুধীবৃন্দ, আমি বিদ্যাসাগরকে নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনার মধ্যে যাইনি। আমি হূদয়ের দিক থেকে বিদ্যাসাগরকে অনুভব করার চেষ্টা করেছি। আমার ধারণা, বিদ্যাসাগর এখানেই বড়। আলোচনা সভার অন্যান্য বক্তা বিদ্যাসাগরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। তাঁর কাছে জাতির ঋণ অসীম। এ দেশের ভাষাকে, সাহিত্যকে, সমাজ ও সংস্কৃতিকে বিদ্যাসাগর তাঁর প্রতিভা আর কর্মের দ্বারা ঋণী করেছেন। কিন্তু সবচেয়ে তিনি বড় ছিলেন তাঁর ভেতরকার মানবিকতায়। আপ্লুত হূদয়ৈশ্বর্যে। সবকিছুকে সবল ভালোবাসা ও মমতার চোখে দেখতে পারার ক্ষমতায়। তাঁর জীবনের সমস্ত কর্মকাণ্ড ছিল এই হূদয়-স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন। আমি সেই অমিত ও সম্পন্ন হূদয়কে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।
[বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বিদ্যাসাগরের ওপর আলোচনা সভায় প্রদত্ত বক্তৃতা: ১৯৯৭]
অলংকরণ: সাদমান মুন্তাসির