ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় সাইকেল চালানো শেখেন বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ জামিলুর রেজা চৌধুরী। সে আজ থেকে ৬২ বছর আগের কথা। বাসায় কেউ সাইকেল নিয়ে এলেই হলো। সেটা নিয়ে চালানো শুরু করতেন। নিজের একটা সাইকেল হলো উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময়। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (এখনকার বুয়েট) চারটি বছর কেটেছে সাইকেলে যাতায়াত করে। সে সময় কলেজে সাইকেল রাখার বড়সড় স্ট্যান্ড ছিল। ১৯৬৩-এর দিকে সেই কলেজেই প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তখনো তিনি সাইকেল ছাড়েননি। সে সময় তাঁর মতো অনেক শিক্ষক সাইকেলে চড়ে কলেজে আসা-যাওয়া করতেন।
তখন ঢাকার রাস্তায় সাইকেলের জন্য সংরক্ষিত জায়গা বা আলাদা লেন ছিল বলে জানালেন তিনি। পথচারী, সাইকেল ও গাড়ি পৃথক তিনটি লেনে চলাচল করত। কিন্তু সত্তরের পর থেকে সাইকেলের সংখ্যা কমতে থাকল। সম্প্রতি আবার সাইকেলের জোয়ার দেখা যাচ্ছে। এটা আশাব্যঞ্জক দিক। তাঁর মতে, রাস্তায় সাইকেলের জন্য আলাদা লেন থাকা উচিত বলে মনে করেন এই নগর পরিকল্পনাবিদ।
জীবনের প্রথম সাইকেল চালানোর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে মুহূর্তেই নিজের ছেলেবেলায় ফিরে গেলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। পাশের বাসার একজনের সাইকেল নিয়ে প্রায়ই চালাতেন। আট কি দশ বছর বয়সে চালানো শিখেছিলেন। তাও বেশ কায়দা করে চালাতে হতো। ডান হাতে সিটপোস্ট আঁকড়ে, বাঁ হাতে হ্যান্ডেলবার চেপে ধরে। আর ডান পা’টা সাইকেলের ফ্রেমের ভেতর গলিয়ে ওপাশে ডান প্যাডেলের ওপর রাখতেন। এভাবেই চালানো শিখেছিলেন।
বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার যে সাইকেলপাগল ছিলেন, এটা কি তোমরা জানো? শচীনের আত্মজীবনী প্লেয়িং ইট মাই ওয়েতে তিনি নিজেই বলেছেন, ‘ছেলেবেলায় আমি ভীষণ একগুঁয়ে আর জেদি ছিলাম। সেই জেদি ছেলে বাবার কাছে একদিন একটি সাইকেলের বায়না ধরল। বাবা মানা করেননি। শচীনরা তখন মুম্বাইয়ের এক কলোনিতে থাকতেন। এদিকে দিন গড়ায়, কিন্তু সাইকেল তো আর আসে না। শেষে জেদ করে ঘরের বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন শচীন। ছেলের জেদের কাছে হার মানলেন বাবা। সাইকেল এল। কিন্তু প্রথম দিনই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসলেন। পাড়ার এক সবজিওয়ালাকে গিয়ে ধাক্কা মেরে বসলেন। ডান চোখের খানিক ওপরে কেটে গিয়েছিল। সেলাই লেগেছিল কয়েকটা। সেরে উঠে আবার সাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামেন শচীন। একসময় মহল্লার সবচেয়ে দক্ষ সাইকেলচালক হয়ে ওঠেন তিনি।
সাইকেল নিয়ে কোনো অঘটন ঘটাননি। তারপরও সাইকেলের সঙ্গে আইনস্টাইনের একটা যোগসূত্র আছে। আর সেটা এই বিজ্ঞানীর বিখ্যাত সেই উক্তির জন্য। তিনি বলেছিলেন, ‘জীবনটা হচ্ছে সাইকেল চড়ার মতো। ভারসাম্য রাখতে পারলে তুমি চলতে পারবে।’
সাইকেল সম্পর্কে প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী বাংলাদেশি মুসা ইব্রাহীমের ভাষ্য, ‘সাইকেল হচ্ছে স্বাধীনতার প্রতীক। কৈশোর পার করে তারুণ্যে পা রাখার সময় একটা ছেলে বা মেয়েকে স্বাধীনতা এনে দেয় সাইকেল। বাবা-মা শুরুতে হয়তো বাধা দেন। একসময় কিন্তু ঠিকই সন্তানকে একা বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেন।’
মুসা নিজেও ছোটবেলায় সাইকেল নিয়ে নানা স্থানে ঘুরে বেড়াতেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতা পেয়ে তার বরখেলাপ করা যাবে না। কেউ চাইলে সাইকেল চালিয়ে তার নিজের এলাকায় ঐতিহাসিক স্থান বা স্থাপনাগুলো ঘুরে দেখতে পারে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে তিনিও সাইকেলে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। ২০ জনের এক দল নিয়ে ২৫ দিনে তিনি ৪০টি জেলা ঘুরেছিলেন। এ সময় তাঁরা জেলায় জেলায় স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েদের বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ ও মাদককে না বলার শপথ করিয়েছেন।
শুধু বাংলাদেশের গুণীজনই নয়, সাইকেল ভক্তের তালিকায় আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, সিইও স্টিভ বলমারসহ আরও অনেকে। আছেন শাহরুখ খান, সালমান খানসহ বলিউডের নামীদামি তারকারাও।