থাইল্যান্ডে চলছে তরমুজের মৌসুম। দিগন্ত পর্যন্ত বিস্তৃত তরমুজখেতে ঘাপটি মেরে বসে থাকা বিরাট আকারের তরমুজগুলো দেখলেই তা বোঝা যায়। মৌসুম এসে পড়ায় কৃষকেরা দম ফেলারও ফুরসত পাচ্ছেন না। এত বড় বড় তরমুজ তোলা, বাজারে পাঠানো—সব মিলিয়ে মেলা ঝক্কি। এমনই এক সময়ে যখন সব কৃষক খেতে ব্যস্ত, তখন তরমুজবোঝাই এক ভ্যান পড়ে আছে রাস্তার ধারে। সবচেয়ে বড় কথা, সেটার আশপাশে কোনো পাহারাদারের দেখা মিলছে না। বিষয়টা একটু অদ্ভুত! পুরো ভ্যান হয়তো চুরি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তবে তরমুজগুলো হাওয়া হয়ে যেতে পারে যেকোনো সময়ে। দুষ্ট কিশোরের তো অভাব নেই। তাহলে? এত নিশ্চিন্তে কেন কৃষক নিজের ভ্যান রেখে কাজ করছেন খেতে? কে দিচ্ছে পাহারা তরমুজগুলোকে?
জবাব পেতে ভ্যানের একটু কাছে গিয়ে উঁকিঝুঁকি দিলেই পাহারাদারের দেখা মিলবে। তবে তাকে দেখলেই একটু চমকে উঠতে হয়। ভ্যানে স্তূপ হয়ে থাকা তরমুজগুলোকে পাহারা দিচ্ছে পার্ল নামের এক বিড়াল। মজার বিষয় না?
তরমুজ পাহারা দেওয়ার কাজটি পার্ল করে আসছে ছয় বছর ধরে। এখন তাকে এ কাজে রীতিমতো বিশেষজ্ঞই বলা চলে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, পুচকু এক বিড়াল মোটে সাইজে একটা তরমুজের অর্ধেক। আর এই ছোট্ট সাইজ নিয়ে ও পাহারা দিয়ে আসছে এত্ত এত্ত তরমুজ। এ কেমন পাহারাদার? কে ভয় পাবে ওকে? যদি এটাই ভেবে থাকো, তবে আগেই সাবধান করে দিচ্ছি। পার্লের চোখের দিকে তাকালেই তোমার এ ধারণা চিরতরে বদলে যাবে। ভয়ংকর রাগী চোখ দুটো দেখে মনে হয়, প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ করে আছে বিড়ালটা। আশপাশে কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে আচ্ছা করে ঝাড়ি দেওয়ার জন্য। চোখ দিয়ে পারলে যেন ছাই বানিয়ে দেয় সবাইকে। অমন দৃষ্টি দেখে বেশির ভাগ মানুষের তরমুজ খাওয়ারই তৃষ্ণা মিটে যায়। তা–ও বুকে বল নিয়ে যদি কোনোভাবে হাত রাখার চেষ্টা করো ভ্যানে, তাহলেই সেরেছে। পার্ল যা একটা কাণ্ড বাধাবে, বলার মতো নয়।
পার্লের এই বদরাগী স্বভাব নিয়ে তার মালিক অবশ্য অন্য কথা বলেন। তাঁর মতে, পার্লের চোখ দুটোতে রাগ থাকলেও এমনিতে বিড়াল হিসেবে সে খুবই শান্তশিষ্ট আর ভদ্র। অবশ্য এলাকার ছোট বাচ্চারা কোনোভাবেই এ বিষয়ে একমত নয়। বাচ্চারা পার্লকে খুবই ভয় পায়। অনেকে নাকি তরমুজ খাওয়াই বাদ দিয়েছে পার্লের দৃষ্টির ভয়ে।
তাহলে রহস্য কী পার্লের এমন দৃশ্যটির? আসলেই কি ও রেগে থাকে সব সময়? সামনে যাকে পায় ঝাড়ি দেয়? বহু গবেষণা শেষে জানা গেল, বিষয়টা তা নয়। সত্য হলো পার্লের চোখের আশপাশে থাকা লোমগুলোই এমন যে দেখলেই মনে হয় ও ভীষণভাবে রেগে আছে। এই বৈশিষ্ট্যকে বলা হয় ‘ফারবল’।
তবে এই গোপন কথা এলাকার বাচ্চাকাচ্চারা জানে না বলেই হয়তো পার্ল আর তার মালিক বেশ খুশি মনে করে যাচ্ছে তাদের কাজ। কখনো চেয়ারে বসে কিংবা ভ্যানে শুয়ে পার্ল পাহারা দিয়ে চলে তরমুজগুলোকে আর সারা দিনের কাজ শেষে চারটি ফ্যান একসঙ্গে চালিয়ে ঠান্ডা করে নিজের মাথাকে। এক–দুটি ফ্যানে কাজ হয় না তার।
এভাবেই তরমুজগুলোর সঙ্গে চলে যাচ্ছে পার্লের দিন। থমথমে মুখ আর রাগী রাগী চোখ নিয়েও পার্ল মন থেকে রয়েছে হাসিখুশি। তাই মন থেকে হাসিখুশি থাকো সব সময়, আর হাসি না পেলে দেখতে পারো বিশেষজ্ঞ তরমুজ পাহারাদার পার্লের ছবিগুলো!