অনেকে বলে, ‘বইমেলা থেকে যত বই কিনেছি, সব পড়া শেষ। বাসার শেলফের সব বইও পড়ে ফেলেছি। পড়ার মতো কোনো বই-ই নেই। এখন কী করব?’ খুবই চিন্তার বিষয়। বইমেলা ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় শিশু-কিশোরদের জন্য খুব বেশি বই বের হয় না। তাহলে কি বছরের ১১ মাস বই না পড়ে থাকবে? একদমই না। দেশের সবচেয়ে বড় গ্রন্থাগারটা আছে কী জন্য? ওখানে গিয়েই তো বই পড়তে পারো।
শাহবাগের সুফিয়া কামাল কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের কথা নিশ্চয়ই শুনেছ সবাই, যা সবার কাছে ‘পাবলিক লাইব্রেরি’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই গণগ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছিল ১৯৫৪ সালে। গণগ্রন্থাগার বা লাইব্রেরিতে শুধু যে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া কিংবা প্রফেসর শঙ্কুর মতো মোটা ফ্রেমের চশমা পরা প্রফেসররাই জটিল গবেষণা করতে আসবেন, তা কিন্তু নয়; এখানে এসে তুমিও গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস, জীবনী কিংবা বিজ্ঞান, এমনকি কৌতুকের বইও পড়তে পারো। কেউ বাধা দেবে না। আর তোমাদের জন্য, বিশেষ করে যারা স্কুলে পড়ো, তাদের জন্য গণগ্রন্থাগারে ‘শিশু-কিশোর পাঠকক্ষ’ নামে আলাদা একটি পাঠকক্ষই আছে, যেখানে বসে নিশ্চিন্তে তুমি বই পড়তে পারবে। কেউ বলবে না, ‘অ্যাই, অনেক “তিন গোয়েন্দা” পড়া হয়েছে, এখন অঙ্ক করতে বসো।’
শিশু-কিশোর পাঠকক্ষের চারপাশে বইভর্তি তাক। মাঝখানে পড়ার জন্য টেবিল আর চেয়ার। পাঠকক্ষের তাক থেকে পছন্দমতো বই বেছে নিয়ে চেয়ারে বসে পড়তে পারবে; তবে বাসায় বই নিয়ে যেতে পারবে না। এটা একটু সমস্যাই বলা যায়। ধরো, হাতকাটা রবিন বইয়ের টানটান উত্তেজনাময় একটা অধ্যায় পড়ছো, হঠাত্ ঘড়িতে পাঁচটা বেজে গেল। কিচ্ছু করার নেই। ওখানেই বই রেখে তোমাকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবে তুমি যদি পাঠকক্ষের সদস্য হও, তাহলে ১৫ দিনের জন্য দুটি বই নিয়ে যেতে পারবে বাসায়। ১৫ দিনের মধ্যে বই পড়া হয়ে গেলে আবার এসে নিতে পারবে আরও দুটি বই।
পাঠকক্ষের সদস্য হওয়ার নিয়মটাও সহজ। তবে একটাই শর্ত, শুধু স্কুলের শিক্ষার্থীরাই সদস্য হতে পারবে। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অনুমতি, তোমার তিন কপি স্ট্যাম্প সাইজ ছবি আর ২১০ টাকার সঙ্গে পাঠকক্ষের সদস্য ফরমটা পূরণ করে জমা দিলেই তুমি হয়ে যাবে একজন সম্মানিত সদস্য। তবে বই নিয়ে হারিয়ে ফেললে বা ছিঁড়ে গেলে বইয়ের গায়ে লেখা দামের দ্বিগুণ জরিমানা দিতে হবে। সদস্যপদ বাতিলও হয়ে যেতে পারে। এটাও মনে রেখো।
সুফিয়া কামাল কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের ফটক দিয়ে ঢুকে বাঁ দিকে তাকালেই দেখা যাবে শিশু-কিশোর পাঠকক্ষটি। চাইলে সারা দিনই এখানে বসে বই পড়তে পারো। শিশু-কিশোরদের জন্য উন্মুক্ত এই পাঠকক্ষ খোলা থাকে রবি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। গণগ্রন্থাগার চত্বরে একটি ক্যানটিনও আছে। মোটামুটি অল্প টাকায় প্রায় সব ধরনের খাবার পাওয়া যায় সেখানে। বই পড়তে পড়তে যদি খিদে পায়, খেতে পারো ক্যানটিনের ভাত, বিরিয়ানি, খিচুড়ি বা শিককাবাব আর নানরুটি। তবে শুক্র, শনি কিংবা অন্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতে পাঠকক্ষ বন্ধ থাকে। তাই ছুটির দিন আছে ভেবে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে পাঠকক্ষে চলে এসো না কিন্তু।
আর ঢাকার বাইরের বন্ধুদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশের সব কটি বিভাগেই সরকারি গ্রন্থাগার আছে। এমনকি দেশের অধিকাংশ জেলাতেও আছে সরকারি গ্রন্থাগার। এসব গ্রন্থাগারে গিয়ে সব বই পড়ে ফেলাও একটা অ্যাডভেঞ্চার! www.publiclibrary.gov.bd—এ ওয়েবসাইটে গেলেই তোমার বিভাগ বা জেলার সরকারি গ্রন্থাগারের ঠিকানা ও তথ্য জানতে পারবে। ওয়েবসাইটে ঢুকলেই দেখবে সুন্দর করে লেখা আছে, ‘পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে রই’। অন্ধকারে কে থাকতে চায়? মহাসমারোহে চলুক বই পড়া।