ধরা যাক, তুমি মাত্র ডিমভাজি আর সবজি দিয়ে রুটি খেয়ে উঠলে। তারপর গরুর এক গ্লাস ধবধবে সাদা দুধ হলেই বা ক্ষতি কী! খাওয়া শেষ করে তুমি তো দিব্যি নিশ্চিন্ত। কিন্তু তার পরই ওদিকে পেটের ভেতর যে লঙ্কাকাণ্ড শুরু হয়, তার খবর রাখো? তুমি যত কিছুই খাও না কেন, সব খাবারই পেটের মধ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ভেঙেচুরে মাত্র ছয়টি উপাদানে পরিণত হয়। সেগুলো হচ্ছে: শর্করা (কার্বহাইড্রেট), আমিষ (প্রোটিন), চর্বি (ফ্যাট), ভিটামিন, খনিজ আর পানি। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খাবারে এসব পুষ্টি উপাদান থাকা খুবই জরুরি। এই পুষ্টি উপাদান পেটের ভেতরে ভেঙেচুরে সেখানেই শোষিত হয়ে রক্তের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন কোষে ছড়িয়ে পড়ে।
আমিষ
আমিষ বা প্রোটিন গঠিত হয় একগাদা অ্যামিনো অ্যাসিড দিয়ে। আর এসব অ্যামিনো অ্যাসিড আমাদের দেহের সব ধরনের কোষ গঠন ও মেরামতে সহায়তা করে। সব ধরনের মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল ও বাদাম আমিষের ভালো উৎস।
শর্করা
দৌড়বিদেরা ম্যারাথনে অংশ নেওয়ার আগে পেট পুরে ভারী খাবার খেয়ে নেয়। কারণ, আমাদের শরীর প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ উপাদান সংগ্রহ করে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট থেকে। আর কার্বোহাইড্রেট থাকে ভাত, রুটি, পাস্তাসহ আরও বেশ কিছু খাবারে।
চর্বি
দেহের কোষে শক্তি সরবরাহ করা ছাড়াও কোষের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কাজে সহায়তা করে চর্বি। যখন খাবারের অভাব দেখা দেয়, তখন কোষে জমে থাকা চর্বি থেকে শক্তি সংগ্রহ করে আমাদের দেহ। চর্বি দেহে তাপ অপরিবাহী হিসেবে কাজ করে শরীরকে গরম রাখতে সাহায্য করে। তবে সব চর্বি তোমার দেহের জন্য ভালো নয়। সম্পৃক্ত চর্বি (স্যাচুরেটেড ফ্যাট) মাখন আর মাংসে পাওয়া যায়। এসব একটু কম খাওয়াই ভালো। আর প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকে অসম্পৃক্ত চর্বি (আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট)। এসব খাবার থেকে দূরে থাকাই উত্তম। তবে বিভিন্ন সবজি থেকে পাওয়া মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশ স্বাস্থ্যকর। তা পাওয়া যায় জলপাই তেল (অলিভ অয়েল), সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, বাদাম তেল ও সরিষার তেলে। এগুলোর মধ্যে জলপাই তেলই সেরা।
ভিটামিন আর খনিজ
দেহের জন্য ভিটামিন আর খনিজ খুব বেশি পরিমাণে দরকার নেই। তবে দেহের স্বাভাবিক কাজের জন্য এগুলো খুবই জরুরি। ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় দুধে। এই খনিজটি দাঁত আর হাড়ের গঠন ঠিক রাখতে প্রয়োজন। গাজর, মিষ্টি আলু ও সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ থাকে। চোখ ভালো রাখতে এই ভিটামিনটি দরকার।
পানি
খাবার ছাড়া তোমার শরীর প্রায় এক সপ্তাহ টিকে থাকতে পারে। কিন্তু পানি ছাড়া অত দিন টিকে থাকা অসম্ভব। দেহের সব কোষ ও টিস্যুতে পানি থাকে। খাবারের পুষ্টি উপাদান বহন এবং বর্জ্য পদার্থ কোষ থেকে বের করে দেওয়ার কাজগুলো করে পানি।
সুপারফুড
সুপারফুড একগাদা পুষ্টি উপাদানে ঠাসা থাকে। এই খাসা খাবার তাই তোমার দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা অনেক শক্তিশালী করে এবং তোমাকে স্বাস্থ্যবান রাখে। এসব খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যত বেশি রাখা যায়, ততই ভালো। নিচে এ রকম খাসা কয়েকটি খাবারের কথা বলা হলো:
মিষ্টি আলু | পুষ্টিকর সবজির মধ্যে মিষ্টি আলু অন্যতম। এতে পটাশিয়াম, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘সি’ এবং লৌহ থাকে।
দানা শস্য | গম বা যবের গুঁড়া, বাদামি চাল ও কিনোয়া (আফ্রিকার একধরনের খাদ্যশস্য) খনিজ পদার্থ, শর্করা, ভিটামিন ‘বি’, ভিটামিন ‘ই’ ও স্বাস্থ্যকর আঁশজাতীয় খাবারের খুবই ভালো উৎস।
দই | দুধ থেকে তৈরি করা দই বা ইয়োগার্ট ক্যালসিয়াম, আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন ‘বি’র ভালো উৎস।
ডিম | আমিষের অন্যতম ভালো উৎস হচ্ছে ডিম। এ ছাড়া ডিমের মধ্যে বেশ কয়েকটি ভিটামিন আর খনিজ পদার্থও পাওয়া যায় পর্যাপ্ত পরিমাণে।