ইকারাসের গল্পটা নিশ্চয়ই তোমাদের জানা।
গ্রিক মিথোলজি, মানে প্রাচীন গ্রিসের কিংবদন্তিতে আছে ইকারাসের গল্প। রাজা মাইনস ইকারাস ও তার বাবা ডিডেলাসকে বন্দী করেছিল ডিডেলাসেরই বানানো এক গোলকধাঁধায়, যেখান থেকে পালানো প্রায় অসম্ভব। বাধ্য হয়ে ডিডেলাস তৈরি করে মোমের ডানা। ছেলে ইকারাসকে এই ডানা পরিয়ে দিয়ে সাবধান করে দিয়ে বলে, উড়তে উড়তে সে যেন সূর্যের কাছে চলে না যায়। ওড়ার আনন্দে ইকারাস সেই সতর্কবাণী ভুলে গিয়েছিল। সূর্যের কাছে চলে গিয়েছিল সে। প্রচণ্ড উত্তাপে গলে গেল মোমের ডানা। আকাশ থেকে গভীর সমুদ্রের বুকে আছড়ে পড়ল ইকারাস। তলিয়ে গেল সমুদ্রের নীলে। পিছে রেখে গেল সূর্য ছোঁয়ার স্বপ্ন।
মানুষ ভুল থেকে শেখে। ইকারাসের ভুল থেকেও শিক্ষা নিয়েছিল মানুষ। তবে সূর্যকে ছোঁয়ার স্বপ্ন ভুলে যায়নি। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। ইকারাসের সূর্য ছোঁয়ার স্বপ্ন পুরোপুরি পূরণ না হলেও সে স্বপ্ন আজ অনেকটাই বাস্তব। না, সূর্যকে ছুঁতে পারেনি মানুষ। তবে সূর্যের করোনা অঞ্চলে সম্প্রতি প্রবেশ করেছে মানুষেরই বানানো এক সৌরীয় মহাকাশযান বা সোলার প্রোব—পার্কার।
২
পৃথিবীর সব প্রাণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে সূর্য। সূর্যের আলো ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করে উদ্ভিদ। এসব উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকে তৃণভোজী প্রাণীরা। মানুষ আবার বিভিন্ন উদ্ভিদ যেমন খায়, তেমনি প্রাণীও খায়। তা ছাড়া পৃথিবীর পানি চক্র, নাইট্রোজেন চক্র ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ যেসব চক্রের কারণে ভারসাম্যপূর্ণ এক পরিবেশে আমরা বেঁচে আছি, তার মূলেও আছে সূর্যের আলো। পাশাপাশি সূর্যের মহাকর্ষ ধরে রেখেছে পৃথিবীসহ সৌরজগতের সব গ্রহকে নিজেদের কক্ষপথে।
মানুষ তাই সূর্যকে জানতে চায়। বিজ্ঞানীরা অবশ্য পৃথিবীতে বসেই এর অনেক কিছু জানতে পারেন। সূর্যের আলোর বর্ণালি বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারেন, কী ধরনের পদার্থ দিয়ে সূর্য গঠিত। এর তাপমাত্রা কত, গঠন কী রকম, সূর্যটা জ্বলছে কীভাবে!
সূর্যের কেন্দ্রে দুটো করে হাইড্রোজেন পরমাণু (আসলে প্রোটন) পরস্পর যুক্ত হয়ে তৈরি করে হিলিয়াম। সাধারণ রাসায়নিক বিক্রিয়া নয় এটা। এর নাম নিউক্লিয়ার ফিউশন। এই বিক্রিয়ায় যে হিলিয়াম তৈরি হয়, তার ভর দুটো প্রোটনের মোট ভরের চেয়ে একটুখানি কম। এই হারিয়ে যাওয়া ভরের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় আলবার্ট আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব থেকে। জানা যায়, E = mc2 সূত্র মেনে হারিয়ে যাওয়া ভর আসলে পরিণত হয় শক্তিতে। শক্তির আবার অনেকগুলো রূপ আছে। কখনো তাকে পাওয়া যায় আলো হিসেবে, কখনো তাপ হিসেবে। সূর্যের যে আলো আমরা পাই, তা মূলত এই হারিয়ে যাওয়া ভর। তার মানে, সূর্যটা জ্বলছে তার কেন্দ্রে ঘটে চলা নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার কারণে। সূর্যের উত্তাপের রহস্যও এই বিক্রিয়া।
সূর্য কিন্তু পৃথিবীর মতো কোনো কঠিন বস্তু নয়। এর একেক অংশ একেক রকম। আমরা সূর্যের যে পৃষ্ঠ দেখি, তার নাম ফটোস্ফিয়ার। এই অংশের পুরুত্ব মাত্র ৫০০ কিলোমিটার এবং তাপমাত্রা সাড়ে পাঁচ হাজার কেলভিনের মতো। এরপরের কম ঘনত্বের অংশটির নাম ক্রোমোস্ফিয়ার, তাপমাত্রা প্রায় চার হাজার ডিগ্রি। তবে সূর্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রা কিন্তু অনেক বেশি, ১ কোটি ৫০ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে কেন্দ্র থেকে যত বাইরে আসছি, তাপমাত্রা তত কমে যাওয়ার কথা। কিন্ত ক্রোমোস্ফিয়ারের পর সূর্যের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। সূর্যপৃষ্ঠ থেকে ৫০ লাখ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত করোনা অঞ্চলটির তাপমাত্রা প্রায় ১০ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াস! করোনার তাপমাত্রা সূর্যপৃষ্ঠ থেকে এত বেশি কেন—এ এক অদ্ভুত হেঁয়ালি, যার উত্তর আমাদের জানা নেই। তবে এ অঞ্চলের ঘনত্ব খুবই কম। তাই তাপমাত্রা বেশি হলেও সঞ্চারিত করার জন্য খুব বেশি কণা এ অঞ্চলে নেই। তাপমাত্রাকে বলা যায় কণাদের গড় গতিশক্তি। কণারা ছোটাছুটি করছে, ধাক্কা খাচ্ছে—এসব থেকেই আসে তাপ। কণার পরিমাণ কম হলে তাপশক্তির পরিমাণও কম হওয়ার কথা। তাহলে বেশি কেন? জানা নেই এ প্রশ্নের উত্তরও।
১৯৫৮ সাল। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনরিকো ফার্মি ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার স্টাডিজের এক তরুণ অধ্যাপক দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে প্রকাশের জন্য একটি গবেষণাপত্র পাঠান। এই জার্নালের সম্পাদক ছিলেন সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখর। সূর্যের করোনা অঞ্চল থেকে শব্দের চেয়ে বেশি বেগে, সুপারসনিক গতিতে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে প্লাজমার ঢেউ। তরুণ অধ্যাপক এর নাম দেন ‘সোলার উইন্ড’ বা সৌর বায়ু।
আগেই বলেছি, সূর্য কোনো কঠিন বস্তু নয়। তাই এর ঘূর্ণনের বিষয়টিও একটু ভিন্ন। সূর্য তার বিষুবরেখায় একবার ঘুরে আসতে সময় নেয় ২৬ দিন, কিন্তু মেরু অঞ্চলে সময় লাগে ৩৩ দিন। এ ধরনের ঘূর্ণনগতি সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্রকে পেঁচিয়ে দেয়। অনেক সময় প্যাঁচানো এসব চৌম্বকক্ষেত্র ছিঁড়ে যায় এবং অন্য মেরুর চৌম্বকক্ষেত্রের সঙ্গে মিলে তৈরি করে নতুন গঠন। চৌম্বকক্ষেত্র ছিঁড়ে যাওয়ার সময় বিকিরিত হয় প্রচুর শক্তি, এই শক্তি থেকে সৃষ্টি হতে পারে কণাদের উচ্চগতির। করোনা থেকে প্লাজমা কণাদের ছড়িয়ে পড়ার গতিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। এসব বিষয় নিয়েই তিনি আলোচনা করেন ওই গবেষণাপত্রে। কিন্তু এ রকম অদ্ভুত তাত্ত্বিক হিসাব–নিকাশ সে সময়ের অনেক বিজ্ঞানীই মানতে পারেননি। দুজন পর্যালোচক বিজ্ঞানী এমনকি বাতিলও করে দিতে চেয়েছিলেন ওই গবেষণাপত্র। চন্দ্রশেখর নিজেও একে বলেছিলেন ‘আটার ননসেন্স’। বলেছিলেন, এ নিয়ে সেই তরুণ অধ্যাপকের কিছুটা অন্তত পড়াশোনা করা উচিত ছিল। তবে চন্দ্রশেখর সেই গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন। তিনি জানতেন, বিখ্যাত কেউ এভাবে সমালোচনা করলে কেমন লাগে।
তরুণ সেই গবেষকের নাম ইউজিন পার্কার। তাঁর সম্মানে নাসা প্রথমবারের মতো জীবিত কোনো বিজ্ঞানীর নামে একটি মহাকাশযানের নাম রাখে, পার্কার সোলার প্রোব।
৩
পৃথিবীতে বসেই যদি এত কিছু জানা যায়, তাহলে সূর্যে নভোযান পাঠানোর কী প্রয়োজন? আছে আছে। সূর্যের থেকে যেসব কণা পৃথিবীতে আসে, তা মহাকাশের অন্য কণাগুলোর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে। আবার অন্যান্য উৎস থেকেও একই রকম কণা আসে পৃথিবীতে। কিন্তু সূর্যের একদম কাছাকাছি কোথাও থেকে নমুনা সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করলে, তা থেকে জানা যেতে পারে আরও অনেক কিছু। তা ছাড়া করোনা অঞ্চলে বা সূর্যের কাছাকাছি থেকে এই নক্ষত্রের চৌম্বকক্ষেত্র, করোনার এত উচ্চ তাপমাত্রার কারণ, সৌর প্লাজমার উৎপত্তি ও সৌর বায়ু রহস্য নিয়ে আরও জানার চেষ্টা করা, এই বায়ুর এত উচ্চগতির পেছনের কারণ ইত্যাদি জানার জন্য সূর্যের কাছাকাছি নভোযান পাঠানোর বিকল্প নেই।
তা ছাড়া মহাবিশ্বের আর কোনো নক্ষত্রের এতটা কাছে যাওয়ার সামর্থ্য মানুষের নেই। সূর্য একটি মূলধারার নক্ষত্র। এক মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই এ রকম মূলধারার নক্ষত্র আছে প্রায় ২০ বিলিয়ন। তার মানে, সূর্যকে ভালোভাবে জানতে পারলে আরও অনেক অনেক নক্ষত্রের গল্প আমাদের জানা হয়ে যাবে।
৪
পার্কারের আগেও কিন্তু সূর্যের কাছে নভোযান পাঠানো হয়েছে। সত্তরের দশকে পাঠানো হয়েছিল হেলিওস-এ ও হেলিওস-বি। এই হেলিওস-বিই সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়ার রেকর্ড দখলে রেখেছিল এত দিন। আজ সে রেকর্ড পার্কারের।
এ ছাড়া জেনেসিস নামের একটি নভোযান পাঠানো হয়েছিল সৌর বায়ুর নমুনা সংগ্রহের লক্ষ্যে। দীর্ঘ সময় ধরে নমুনা সংগ্রহের পরে দুঃখজনকভাবে সেই নভোযান পৃথিবীতে ফেরার সময় এর প্যারাস্যুট খোলেনি ঠিকভাবে। ইকারাসের মতোই আছড়ে পড়ে জেনেসিস, সমুদ্রে নয়, মাটিতে। এ রকম আরও অনেক নভোযান পাঠানোর পর অবশেষে পার্কারকে পাঠানো হয় সূর্যের সবচেয়ে কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে।
অনেক কথা হলো, এবার পার্কারের গল্পটা একটু শোনা যাক।
৫
২০১৮ সালের ১২ আগস্ট কেপ ক্যানাভেরাল থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় পার্কার সৌরীয় মহাকাশযান। সে সময় ইউজিন পার্কার নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
পার্কার উৎক্ষেপণের প্রাথমিক পরিকল্পনা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। সে হিসাবে পার্কার উৎক্ষেপণ করার কথা ছিল ২০০৭ সালে। যদিও এর নাম তখনো পার্কার রাখা হয়নি। ২০০৩ সালে নাসা আরও কিছু মিশনের সঙ্গে এটিকেও সাময়িকভাবে বাতিল করে এবং নতুনভাবে পরিকল্পনা করতে শুরু করে সবকিছু। ২০১০ সালে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যায় নাসা। সে সময় মিশনটির নাম দেওয়া হয় সোলার প্রোব প্লাস। ২০১৭ সালে এই সোলার প্রোবের নাম দেওয়া হয় ‘পার্কার’। তারপর ২০১৮ সালের আগস্টে হয় উৎক্ষেপণ।
তরুণ সেই গবেষকের নাম ইউজিন পার্কার। তাঁর সম্মানে নাসা প্রথমবারের মতো জীবিত কোনো বিজ্ঞানীর নামে একটি মহাকাশযানের নাম রাখে পার্কার সোলার প্রোব।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, পার্কারের প্রাথমিক মিশন চলবে সাত বছর ধরে। এ সময় উপবৃত্তাকার কক্ষপথ ধরে সূর্যকে ঘিরে ২৪ বার ঘুরবে পার্কার। প্রতিবার এই কক্ষপথ ছোট হবে। এ জন্য পার্কার সাহায্য নেবে বুধ গ্রহের মহাকর্ষের। ইংরেজিতে একে বলে গ্র্যাভিটি অ্যাসিস্ট। মানে, কোনো বস্তুর (যেমন গ্রহ বা উপগ্রহের) মহাকর্ষ বল ব্যবহার করে গতিবেগ বদলে নেওয়া বা দিক পরিবর্তন করা। বুধ গ্রহের কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় পার্কার মোট সাতবার গ্র্যাভিটি অ্যাসিস্ট নিয়ে কক্ষপথ আরও ছোট করে নেবে। এভাবে প্রতিবার সূর্যের আরও কাছে এগিয়ে যাবে নভোযানটি।
সূর্যের এত কাছে যাবে যে নভোযান, ইকারাসের মতো তারও তো সব যন্ত্রাংশ গলে যাওয়ার কথা। সেটা যেন না হয়, সে জন্য পার্কারের আছে তাপ নিরোধক একটি চার ইঞ্চি পুরু কার্বন-কার্বন কম্পোজিট শিল্ড বা সৌর ঢাল। এটি প্রায় ১ হাজার ৩৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পর্যন্ত পার্কারকে সুরক্ষা দিতে পারবে। পার্কার সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছে গেলেও এই ঢালের পেছনের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রাংশগুলোর তাপমাত্রা হবে মাত্র ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চারটি প্রধান যন্ত্রাংশ বা ইনস্ট্রুমেন্ট আছে পার্কারের। এক, ফিল্ডস এক্সপেরিমেন্ট (FIELDS Experiment)। এসব যন্ত্র ব্যবহার করে তড়িৎ–চুম্বকীয় তরঙ্গ ও ক্ষেত্র, অ্যাবসলিউট প্লাজমা ঘনত্ব, ইলেকট্রন টেম্পারেচার বা তাপমাত্রা ইত্যাদি পরিমাপ করবে নভোযানটি।
দুই, ইন্টিগ্রেটেড সায়েন্স ইনভেস্টিগেশন অব দ্য সান (ISIS)। সূর্য থেকে বেরিয়ে আসা উচ্চশক্তির ইলেকট্রন, প্রোটন, আলফা কণা, ভারী আয়ন ইত্যাদি ধরে, সেগুলো বিশ্লেষণ করে সৌর বায়ু ও করোনার গঠনের সঙ্গে এদের সম্পর্ক কী, তা অনুসন্ধান করবে।
তিন, সোলার উইন্ড ইলেকট্রন আলফাস অ্যান্ড প্রোটনস (SWEAP)। সৌর বায়ুতে যেসব উপাদান সবচেয়ে বেশি আছে, যেমন ইলেকট্রন, প্রোটন, আলফা কণা ইত্যাদি, সেগুলোর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, যেমন গতিবেগ, ঘনত্ব ইত্যাদি বের করে নেবে।
চার, ওয়াইল্ড ফিল্ড ইমেজার ফর সোলার প্রোব (WISPR)। এক জোড়া টেলিস্কোপ, করোনা, সৌরমণ্ডল ও পার্কারের গতিপথের যেকোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা, সৌর বায়ু ইত্যাদির ছবি তুলবে এই ক্যামেরা। অন্যান্য যন্ত্রাংশের সংগৃহীত তথ্য ও বিশ্লেষণকে পূর্ণতা দেবে উইসপারের তোলা ছবিগুলো।
উৎক্ষেপণের মাত্র ৭৮ দিনের মাথায়, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর হেলিওস-বির রেকর্ড ভেঙে সূর্যের সবচেয়ে কাছে পৌঁছানো কৃত্রিম বস্তু হিসেবে রেকর্ড বইতে নাম লেখায় পার্কার। এখন এটি সূর্যের আরও অনেক কাছে এগিয়ে গেছে। ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে নাসার এক বিবৃতিতে জানা গেছে, পার্কার প্রবেশ করেছে সূর্যের করোনা অঞ্চলে। সরাসরি সূর্যের কণার নমুনা সংগ্রহ এবং চৌম্বকক্ষেত্র নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে এটি। সর্বশেষ তথ্যমতে, পার্কার সূর্যপৃষ্ঠ থেকে ৪.৩ থেকে ৮.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত পৌঁছেছে। আর হেলিওস-বি ৪২.৭৩ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছাতে পেরেছিল।
পার্কারের সূর্য অভিযানের সাত বছরের মধ্যে তিন বছর চার মাসের কিছু বেশি সময় পেরিয়েছে কেবল। বাকি সময়টুকুতে সূর্যের আরও আরও কাছে যাবে পার্কার। আরও অনেক তথ্য পাঠাবে বিজ্ঞানীদের। এসব অমূল্য তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও ভালোভাবে জানা যাবে আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রটির কলকবজা।
৬
২০১৮ সালের মার্চের দিকে নাসা মানুষকে নিজেদের নাম সূর্যে পাঠানোর আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। যাঁরা সেখানে নাম দিয়েছেন, একটি মেমোরি কার্ডে করে সেগুলো সঙ্গে নিয়ে গেছে পার্কার। সঙ্গে আছে ইউজিন পার্কারের একটি ছবি ও তাঁর সেই বিখ্যাত গবেষণাপত্র।
পার্কার পৃথিবীতে ফিরবে না। ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে ঝাঁপ দেবে সূর্যের বুকে। যাঁরা নিজেদের নাম লিখে দিয়েছেন, তাঁদের নাম তখন পুড়বে সূর্যের আগুনে। এসব নাম সঙ্গে নিয়ে পার্কার পৌঁছে গেছে সূর্যের করোনা অঞ্চলে। কিছুদিন পর সে ছুটবে সূর্যের প্লাজমার মধ্য দিয়ে।
ইকারাস সূর্য ছুঁতে পারেনি। কিন্তু মানুষ ঠিকই নিজেদের নাম পৌঁছে দিয়েছে সূর্যের বুকে।