মেরি শেলির বিখ্যাত উপন্যাস ফ্রাঙ্কেনস্টাইনস মনস্টার হয়তো তোমরা সবাই পড়েছ। খ্যাপাটে বিজ্ঞানী ভিক্টর ফ্রাঙ্কেনস্টাইন তৈরি করেন ৮ ফুট লম্বা একটি দানব; যা পরবর্তীকালে হত্যা করে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের প্রাণপ্রিয় বন্ধু আর স্ত্রীকে। প্রতিশোধের নেশায় দৈত্যের পেছনে ছুটতে গিয়ে মৃত্যু ঘটে ভিক্টর ফ্রাঙ্কেনস্টাইনেরও। বইয়ের পাতার মতো এ রকম দানব সৃষ্টি না করেও নিজের আবিষ্কারের কারণেই প্রাণটা খোয়াতে হয়েছে অনেক আবিষ্কারককে। নিজের মহামূল্যবান আবিষ্কার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে অথবা আবিষ্কারের ক্ষতিকর প্রভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন অনেক বিজ্ঞানী। উইকিপিডিয়া অবলম্বনে এমন পাঁচজন বিজ্ঞানী ও তাঁদের আবিষ্কার সম্পর্কে তোমাদের বলছি—
হেনরি স্মলিনস্কি
হেনরি স্মলিনস্কি ছিলেন একজন প্রকৌশলী। তিনি আমেরিকার এভিই কোম্পানির জন্য উড়ন্ত গাড়ির নকশা করেছিলেন। নিজের নকশায় তৈরি উড়ন্ত গাড়ি ‘এভিই মিজার’ নিয়ে ১৯৭৩ সালে আকাশে উড়তে গিয়েই প্রাণ হারাতে হয় তাঁকে।
ভ্যালেরিয়ান অ্যাবাকোভস্কি
ভ্যালেরিয়ান অ্যাবাকোভস্কি ছিলেন একজন রাশিয়ান আবিষ্কারক। বিমানের ইঞ্জিন ও প্রপেলার ব্যবহার করে তিনি একটি উচ্চগতিসম্পন্ন ট্রেন নির্মাণ করেন। ১৯২১ সালে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকজনকে নিয়ে ট্রেনটি সফলভাবে মস্কো থেকে যাত্রা করে গন্তব্যে পৌঁছায়। কিন্তু ফেরার সময় আর সেই সৌভাগ্য হলো না। ক্র্যাশ করে ট্রেনটি এবং ভেতরে অবস্থানরত ২৬ বছর বয়সী ভ্যালেরিয়ানের করুণ মৃত্যু ঘটে।
হোরেস লসন হানলি
তিনি ছিলেন একজন উকিল, যাঁর সাবমেরিনের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা ছিল। তাঁর তৈরি প্রথম দুটি সাবমেরিন বিভিন্ন কারণে সফলভাবে যাত্রা শেষ না করতে পারায় তৃতীয় সাবমেরিনে তিনি নিজেই যাত্রা করেন আরও কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে। ১৮৬৩ সালের ১৫ অক্টোবর সাউথ ক্যারোলাইনার পানিতে ডুবে যায় সাবমেরিনটি। মারা যান হানলি ও সাতজন ক্রু।
ম্যারি কুরি
মাদাম ম্যারি কুরি তেজস্ক্রিয়া আবিষ্কারের জন্য বিশ্বখ্যাত। দুটি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এই বিজ্ঞানী তেজস্ক্রিয়া আবিষ্কারের জন্য সমাদৃত হলেও এই আবিষ্কার তাঁর ঘাতক হয়ে দাঁড়াবে, তা বোধ হয় তিনি নিজেও জানতেন না। পরবর্তীকালে তেজস্ক্রিয়ার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আবিষ্কার করলেও তত দিনে তিনি ‘অ্যাপলাস্টিক অ্যানিমিয়া’ রোগে আক্রান্ত। তেজস্ক্রিয়ার কারণে সৃষ্ট এই রোগে আক্রান্ত হয়েই ১৯৩৪ সালের ৪ জুলাই মারা যান এই প্রতিভাবান বিজ্ঞানী।
পেরিলোস অব এথেন্স
প্রাচীন গ্রিসের রাজা ফ্যালারিসের নির্দেশে তৈরি করা হয় একটি ভয়ানক যন্ত্র, যার নাম ‘ব্রাজেন বুল’। পেরিলোস নামের একজন কাঁসার কারিগর তৈরি করেন এই ষাঁড় আকৃতির যন্ত্র, যার ভেতর ঢুকিয়ে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হতো অপরাধীদের। যন্ত্রটি তৈরি করা হয়েছিল এমনভাবে, যেন ভেতরে পুড়তে থাকা মানুষটির চিত্কার বাইরে থেকে ষাঁড়ের গর্জনের মতো শোনায়। কিন্তু কে জানত, নিজের তৈরি যন্ত্রের নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হবে পেরিলোসের নিজেকেই! যন্ত্রটির দক্ষতা পরীক্ষা করার জন্য পেরিলোসকেই ভেতরে পুড়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ফ্যালারিসের নির্দেশে। এভাবেই মৃত্যু ঘটে পেরিলোসের। আবার কেউ কেউ বলেন, পুরোপুরি পুড়িয়ে মারা হয়নি পেরিলোসকে। মারা যাওয়ার আগেই তাঁকে ষাঁড়ের ভেতর থেকে বের করে পাহাড় থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া গেলেও এটুকু তো বলাই যায়, পেরিলোসের ভয়াবহ আবিষ্কারই ছিল তাঁর মৃত্যুর কারণ।