পতাকা, যা দেখে যায় চেনা বিভিন্ন দেশ আর জনপদকে। হাজারো রঙের বৈচিত্র্যের দেখা মেলে বিভিন্ন দেশের পতাকার মধ্যে। একটি দেশের পতাকা শুধু সেই দেশের পরিচয়ই নয়, প্রতিটি পতাকার পেছনেই আছে আরও ইতিহাস-কথা ও গল্প। তেমনি কয়েকটি দেশের পতাকার রকমারি তথ্য থাকছে এবার।
প্রতিবিম্ব পতাকা
আয়ারল্যান্ড ও আইভরিকোস্টের পতাকাকে পরস্পরের প্রতিবিম্ব বলা যেতে পারে। সবুজ, সাদা ও কমলা রঙের আয়ারল্যান্ডের পতাকাকে আয়নার সামনে ধরলে হয় আইভরিকোস্টের পতাকা।
ইথিওপিয়ার রঙে রাঙানো আফ্রিকা
বলা হয়, আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার পতাকার রং অন্য আফ্রিকান দেশের পতাকায় ছড়ানো আছে। ইথিওপিয়ার পতাকার লাল, হলুদ ও সবুজ রং আফ্রিকার প্রায় সব দেশের পতাকায় দেখা যায়।
আইল অব ম্যানের তিন পা
ব্রিটিশ দ্বীপ আইল অব ম্যানের পতাকায় মানুষের তিনটি পায়ের সমন্বিত ছবি, যাকে ট্রাইস্কেলন বলে। মধ্যযুগের যোদ্ধারা যেভাবে পায়ের ওপরে লোহার পোশাক পরতেন, সেভাবে আইল অব ম্যানের পতাকায় তিনটি পা স্বর্ণের আবরণে আবৃত দেখা যায়। ১৯৩১ সালে পতাকাটি চালু হয়।
পতাকায় স্থাপনার ছবি
একমাত্র আফগানিস্তান ও কম্বোডিয়ার পতাকায় স্থাপনার ছবি দেখা যায়। আফগানিস্তানের পতাকায় মসজিদের প্রবেশদ্বার আর কম্বোডিয়ার পতাকায় অ্যাংকর ভাট নামের ঐতিহাসিক মন্দিরের ছবি।
পোলিশ দৌরাত্ম্য
১৯১৯ সালে পোল্যান্ডে লাল ও সাদা রঙের পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার শুরু হয়। প্রতিবেশী চেক রিপাবলিকের পতাকাও একই রকম ছিল। তাই পতাকা নিয়ে দুদেশের সংঘাত এড়াতে ১৯২০ সালে চেক রিপাবলিকের পতাকায় নীল ত্রিভুজ যুক্ত হয়। আবার পোল্যান্ডের পতাকাকে উল্টো করে ধরলেই পাওয়া যাবে ইন্দোনেশিয়ার পতাকা। আর ক্ষুদ্ররাষ্ট্র মোনাকোর পতাকা ও ইন্দোনেশিয়ার পতাকায় রঙের অনুপাত ছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই।
যে পতাকা অসম-পঞ্চভুজ
পৃথিবীর সব দেশের পতাকার আকার চতুর্ভুজাকৃতির হলেও একমাত্র নেপালের পতাকাই আলাদা। অসম-পঞ্চভুজাকৃতির এ পতাকা ১৯৬২ সাল থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
একই রং, ভিন্ন উজ্জ্বলতার পতাকাদ্বয়
ইউরোপের দেশ রোমানিয়া আর আফ্রিকার দেশ চাদের পতাকা দেখে যে কেউ বিভ্রান্ত হবেই। নীল, হলুদ আর লাল রঙের রোমানিয়ার পতাকার উজ্জ্বলতা একটু বাড়ালেই আফ্রিকার দেশ চাদের পতাকা পাওয়া যায়।
একই পতাকার দুই ব্যবহার
দ্বীপরাষ্ট্র ফিলিপাইনের পতাকা সাদা, লাল ও নীল রঙের। তবে যুদ্ধের সময় এই পতাকার লাল রঙের জায়গায় নীল আর নীলের বদলে লাল রং ব্যবহার করে। ১৮৯৮ সালে আলাপান নামের এক যুদ্ধে প্রথম এ পতাকা ব্যবহার হয়। ফিলিপাইনের পতাকার সঙ্গে কিউবা, পুয়ের্তোরিকো, চেক রিপাবলিক, হাইতির পতাকার মিল আছে।
হাইতি ও লিসটেনস্টাইনের মিল
ইউরোপের লিসটেনস্টাইনে ১৯২১ সালে পতাকা চালু হয়। অন্যদিকে মধ্য আমেরিকার হাইতিতে ১৮০৩ সালে প্রথম পতাকার ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৩৬ সালে বার্লিন অলিম্পিকে দুদেশের ক্রীড়াবিদেরা প্রথম টের পান লাল ও গাঢ় নীল রঙের দুই দেশের পতাকা দেখতে একই রকমের। ১৯৩৭ সালে দুই দেশই পতাকায় রাজার মুকুট ও পামগাছের ছবি যোগ করে পতাকায় পরিবর্তন আনে।
সবচেয়ে পুরোনো পতাকা
১২১৯ সালে ডেনমার্কের পতাকার প্রচলন শুরু হয়। এই পতাকাটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো ব্যবহৃত পতাকা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। নর্ডিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশ সুইডেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও ফ্যারো দ্বীপের পতাকা ডেনমার্কের পতাকার মতই, শুধু রং আলাদা।
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের অভিন্ন পতাকা
দূর থেকে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার পতাকা আলাদা করা বেশ কঠিন কাজ। ১৯০২ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডে আর ১৯০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পতাকার ব্যবহার শুরু হয়। দুই দেশের পতাকার মধ্যে তারার সংখ্যা, অবস্থান আর ভিন্ন রং দেখে বুঝতে হয় কোনটি কোন দেশের পতাকা।
সশস্ত্র পতাকা
মোজাম্বিক ও গুয়াতেমালার পতাকাকে বলা হয় সশস্ত্র পতাকা। মোজাম্বিকের পতাকায় একটি বেয়নেটওয়ালা একে-৪৭ রাইফেলের ছবি দেখা যায়। অন্যদিকে গুয়াতেমালার পতাকায় দুটি রাইফেলের ছবি আছে। আসলে স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দিয়ে পতাকায় রাইফেলের ছবি রেখেছে দেশ দুটি।
সুইজারল্যান্ড-রেড ক্রস পতাকা
সুইজারল্যান্ড ও আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড ক্রসের পতাকা দেখতে প্রায় একই রকমের। পাথর্ক্য শুধু রঙের।
১৮৮৯ সালে সাদা ক্রসযুক্ত সুইজারল্যান্ডের পতাকা চালু হয়। অন্যদিকে রেড ক্রসের পতাকা চালু হয় ১৮৬৪ সালে।
পৃথিবীর পতাকা কোনটি?
প্রায় সব দেশের পতাকাই চিনি আমরা অথচ পৃথিবীর পতাকা আছে কিনা সেটাই অনেকে জানি না। সব দেশের সংঘ জাতিসংঘ যে নীল-সাদা পতাকা ব্যবহার করে তা চালু হয় ১৯৪৬ সালে। আর সব রাষ্ট্রের অংশগ্রহণে যে অলিম্পিকে খেলাধুলা হয় তার পতাকার নকশা করেছিলেন ১৯১৪ সালে পিয়েরে দ্য কুবের্তা। ২০৩০ দশকে মঙ্গল গ্রহে মানুষের পায়ের ছাপ পড়তে পারে। সেজন্য ২০১৫ সালে সুইডিশ চিত্রশিল্পী অস্কার পার্নেফেল্ডিট পৃথিবীর একটি পতাকা নকশা করেন।