দেশে দেশে জন্মদিন

জন্মদিন উদযাপন করার রীতি সব দেশেই রয়েছে। সচরাচর কেক কেটে, বেলুন দিয়ে ঘর সাজিয়ে, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আনন্দ করে জন্মদিন পালন করে সবাই, সেটা যে বয়সী হোক না কেন। তবে সব দেশে কিন্তু উদযাপনটা একইভাবে করা হয় না। কিছুটা সাদৃশ্য থাকলেও অনেক ভিন্নতাও আছে জন্মদিন উদযাপনের ক্ষেত্রে। চলো, জেনে আসি কোন দেশে কেমন রীতিতে জন্মদিন উদযাপন করা হয়।

সুইজারল্যান্ড

ধরো, জন্মদিনে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করছ। হঠাৎ একটা ভয়ংকর চেহারার ক্লাউন এসে তোমার মুখে আস্ত একটা পাই মাখিয়ে দিল। কেমন লাগবে? সুইজারল্যান্ডে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ক্লাউন ভাড়া করা হয় মুখে পাই লাগানোর জন্য। আর গানবাজনা, কেক কাটাকাটি এসব তো থাকেই।

কানাডা

নাকের মধ্যে খানিকটা চর্বিজাতীয় খাবার লাগিয়ে দেওয়া জন্মদিনের বিশেষ রীতি কানাডায়। মূলত সৌভাগ্য বয়ে আনার জন্য এই কাজটি করে তারা। তবে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নাকের মধ্যে মাখন লাগিয়ে ঘুরতে তোমার কি ভাল লাগবে?

ভেনেজুয়েলা

ঘাড় নুয়ে ফুঁ দিয়ে কেকের ওপর বসানো মোমবাতিগুলো নেভালে। আর সে মুহূর্তেই ঘাড়টা ধরে তোমার মুখ একদম কেকের মধ্যে ডুবিয়ে দিল কেউ! পুরো মুখ ভর্তি হয়ে গেল কেকে! কেকের ভেতর মুখ ডোবানোর এই রীতি বহু দেশে প্রচলিত। তবে এটি এসেছে ভেনেজুয়েলানদের কাছ থেকে। কেক কেটে হাতে নিয়ে মুখে তুলবে এত সময় কই। তার চেয়ে মোমবাতি নেভানোর পর মুখটাই ডুবিয়ে দেয় কেকে! কত খাবে, খাও!

চীন

চীনে প্রথম জন্মবার্ষিকীটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাবা-মা শিশুকে একটি কয়েন, একটি পুতুল আর একটি বইয়ের মাঝখানে রাখেন। শিশু যেটা আগে ধরবে, বুঝতে হবে সেদিক থেকেই সমৃদ্ধি অর্জন করবে সে। জন্মদিনে নানা রকম খাবারের ব্যবস্থা করে চায়নিজরা। যার জন্মদিন, তাকে খেতে দেওয়া হয় বিশাল বিশাল সুতার মতো নুডলস। দীর্ঘ মাপের এসব নুডলস খেতে দেওয়া হয় প্রতীকী অর্থে দীর্ঘজীবী হওয়ার জন্য। আর উপহারের ক্ষেত্রে খুব সাবধান। জন্মদিনে চীনের কাউকে ভুলেও ঘড়ি উপহার দিয়ো না। কারণ, ঘড়ি তাদের কাছে মৃত্যুর প্রতীক।

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যে জন্মদিন উদযাপন করার উল্লেখযোগ্য একটি রীতি হলো বার্থডে বাম্পস। বিষয়টি ক্যাচ ধরার মতো। যার জন্মদিন তাকে কয়েকজন মিলে ছুড়ে দেবে শূন্যে। আবার মাটিতে ধপাস করে পড়ার আগেই ক্যাচ ধরে ফেলবে। বয়স যত ঠিক ততগুলো বার্থডে বাম্পস দেওয়া হবে। যার বয়স ৪০ তার কথা ভাবো একবার!

কোরিয়া

জন্মদিনে প্রচুর ভাত রান্না করে কোরিয়ানরা। প্রচলিত আছে, যদি কারও জন্মদিনে ১০০ জনকে ভাত খাওয়ানো হয়, তবে সে শতবর্ষ আয়ু পাবে। ভাত ছাড়াও কিমচি, বিনকেক এসব কোরিয়ান খাবার তো থাকেই।

ক্যারিবিয়ান

জন্মদিনে এক বোল আটা বা ময়দা মুখে ছুড়ে মারার কাজটি করে ক্যারিবিয়ানরা। যার জন্মদিন তার সঙ্গে মোটামুটি লুকোচুরি খেলে কাজটি করা হয়।

হাঙ্গেরি

বড়দের বকুনির সঙ্গে কখনো কানমলা ফ্রি পেয়েছ? এই কাজটি হাঙ্গেরিয়ানরা খুব ভালো পারে। জন্মদিনে উপহার দেওয়ার পর তারা বোনাস হিসেবে দেয় একটা কানমলা। কানের লতি টেনে তারা প্রার্থনা করে, যেন অনেক বছর বেঁচে থাকে মানুষটি আর তার কানের লতি যেন গোড়ালি স্পর্শ করে।

জাপান

জাপানে সব জন্মদিন মোটামুটি এক রকমভাবেই পালিত হয়। কিন্তু তিন, পাঁচ আর সপ্তম বছরটাকে বিশেষভাবে পালনের জন্য তারা একটি উৎসবের আয়োজন করে। নাম ‘শিচি-গো-সান’। যার অর্থ সাত-পাঁচ-তিন। প্রতিবছর নভেম্বরে এই উৎসব আয়োজিত হয়। সাত, তিন বা পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চারা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগ দেয় উৎসবটিতে। নানা ধরনের খেলাধুলা, প্রতিযোগিতায় মেতে থাকে তারা।

যুক্তরাষ্ট্র

রসিক হিসেবে আমেরিকানদের খ্যাতি আছে। আর তাই কেক না খেয়ে সেটাকে ভর্তা বানানোর কাজটি তারা বেশ আনন্দ নিয়ে করে। কেক ভর্তা শুনতে একটু অবাক লাগতে পারে, মোটামুটি তাই করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ঘরে বানানো একটা কেককে ইচ্ছামতো মাড়িয়ে, ছুড়ে রীতিমতো ভর্তা বানানো হয়!