দীপ্তি কেন গপগপ করে খেল?

দক্ষিণ কোরিয়ার মজাদার খাবার
দক্ষিণ কোরিয়ার মজাদার খাবার

দীপ্তি ভীষণ জেদি। খাবার খেতে চায় না। অল্প খেয়ে খেয়ে লিকলিকে হয়ে গেছে শরীর। আর বেশির ভাগ সময়ই খাবার নষ্ট করে সে। প্রতিদিন খাওয়া শেষে দীপ্তির প্লেটে রয়ে যায় বেশ কিছু খাবার। জোর করেও যখন তাকে খাওয়ানো যায় না, তখন খাদ্যের অবশিষ্টাংশ ফেলেই দিতে হয়। রোজ রোজ এত খাবার নষ্ট করায় বিরক্ত বাসার সবাই। দীপ্তির এই অভ্যাস পরিবর্তন করতে তার বড় ভাই দীপ তাকে শোনাল এমন এক দেশের কথা, যেখানে কেউ খাবার নষ্ট করতে চায় না। কারণ, খাবার নষ্ট করলেই দিতে হয় জরিমানা।

খাবার নষ্ট করলেই জরিমানা! দীপ্তির আগ্রহ জাগল শোনার।

দীপও বলতে শুরু করল, ‘অদ্ভুত এই আইন হলো দক্ষিণ কোরিয়ার। সে দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস একটু আলাদা। তারা একসঙ্গে অনেক রকমের খাবার নিয়ে খেতে বসে। সে ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক খাবারই অপচয় হয়। এই খাবার অপচয় রোধে দক্ষিণ কোরিয়া ১৯৮৬ সালে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করে। সেই আইন অনুযায়ী অপচয়কারীকে খাবার অপচয়ের জন্য দিতে হবে জরিমানা। তা অফিস-আদালত বা কল-কারখানার খাদ্যই হোক, কিংবা হোক বাসাবাড়ির। ২০১৩ সালে খাদ্য বর্জ্য আলাদা করে ফেলার এক ব্যবস্থা নেয় সরকার। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে একধরনের বিশেষ ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়, যেখানে শুধু খাবারে উচ্ছিষ্টই ফেলা যাবে। কিন্তু সেই ডাস্টবিনে খাবার ফেলতে হলে দোকান থেকে একটি বায়োগ্রেডেবল ব্যাগ কিনে সেটায় উচ্ছিষ্ট ভরে ফেলতে হবে। সঙ্গে উচ্ছিষ্টের ওজনের ওপর ভিত্তি করে প্রদান করতে হবে জরিমানা। আর কেউ জরিমানা প্রদান না করে ধরা পড়লে গুনতে হবে ৩০০ ডলার বা তারও বেশি জরিমানা।’

রাস্তার ধারের স্পেশাল ডাস্টবিনে খাবার ফেলে দিতে হয় জরিমানা
রাস্তার ধারের স্পেশাল ডাস্টবিনে খাবার ফেলে দিতে হয় জরিমানা

এটুকু শুনে দীপ্তির চক্ষু চড়কগাছ। ‘তার মানে তো কোরিয়ানদের প্রচুর টাকা জরিমানার পেছনেই চলে যায়!’

দীপ বলল, ‘খাদ্য অপচয় করলে একজন কোরিয়ানকে প্রতি মাসে গড়ে ৬ থেকে ৮ ডলার বা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হয়। তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় এই আইন প্রণয়নের পর থেকে খাবার অপচয়ের হার প্রায় শূন্যের কোঠায়। আর জরিমানার অর্থের ৬০ ভাগই কাজে লাগানো হয় অপচয় করা খাদ্য পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে। বিশেষ ডাস্টবিন থেকে খাদ্যের উচ্ছিষ্ট নিয়ে তৈরি করা হয় কম্পোস্ট সার, পশুপাখির খাবার, শক্ত জ্বালানির মতো জিনিস। এতে খাদ্যের উচ্ছিষ্টের দ্বারা পরিবেশদূষণের হারও বেশ কমে গিয়েছে।’

ফেলে দেওয়া খাবার আবার ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়
ফেলে দেওয়া খাবার আবার ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়

‘তাহলে তো কোরিয়ায় গেলে আমার বেশ ঝামেলায় পড়তে হবে।’ মাথা চুলকে বলল দীপ্তি।

দীপ হেসে বলল, ‘খাদ্য অপচয় এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, ফ্রান্সসহ আরও অনেক দেশে খাদ্য অপচয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। দক্ষিণ কোরিয়ার এই অভিনব কৌশলের কার্যকারিতা দেখে বিশ্বের অন্য দেশগুলোও খাদ্য অপচয় রোধে এ রকমই ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাজেই যে দেশেই তুমি যাবে, খাদ্য অপচয়ের জন্য বিশাল ঝামেলায় পড়তে হবে কিন্তু বলে দিলাম।’ 

দীপ্তি কে-পপ ও কে-ড্রামার বেশ ভক্ত। দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি, প্লেটভর্তি মজাদার সব খাবার তাকে টানে। কিন্তু খাদ্য অপচয়ের এই আইনের কথা সে জানতই না। দীপের কাছে পুরো ব্যাপার শুনে খুব চিন্তায় পড়ে গেল সে। তার খাবার অপচয় করার অভ্যাস বদল না করলে দক্ষিণ কোরিয়ায় গেলে কী বিপদে পড়তে হবে, সে কথা ভেবেই শিউরে উঠল। দীপের কথা শেষ হলে প্রতিবেলায় খাবার অপচয়ের জরিমানা হিসেবে তার কত টাকা গুনতে হবে, সেই হিসাব করতে লাগল সে।

সেদিন রাতে অবাক হয়ে সবাই খেয়াল করল, দীপ্তি তার প্লেটের সবটুকু খাবার গপগপ করে খেয়ে নিয়েছে। 


সূত্র: ইন্টেলিজেন্ট লিভিং