চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় জেডেন স্মিথ ও জ্যাকি চ্যান অভিনীত দ্য কারাটে কিড সিনেমাটা দেখে মার্শাল আর্টে আগ্রহ তৈরি হয় ফারহাত তাবাস্সুমের (মৌনতা)। স্কুলে ক্লাস শেষ হলে সে দেখত মাঠে বাংলাদেশ তায়কোয়ান্দো ফেডারেশনের প্রশিক্ষকেরা ছাত্রীদের বিনা মূল্যে আত্মরক্ষামূলক কৌশল তায়কোয়ান্দো শেখাচ্ছেন। একদিন সাহস করে সেটি শিখতে মাঠে দাঁড়িয়ে পড়ল মৌনতা। প্রথম কয়েক দিন শেখার পর প্রশিক্ষক বললেন, ‘তোমার লাথি চমৎকার। চালিয়ে যাও।’ স্যারের কথা শুনে সে অনুপ্রেরণা পেয়ে প্রতিদিন ক্লাস শেষে অনুশীলন করতে থাকে। কয়েক মাস পর বাবার বদলির কারণে মৌনতার স্কুল বদলাতে হয়। বন্ধ হয়ে যায় তায়কোয়ান্দো শেখা। নতুন স্কুলে এক বন্ধুর কাছে কোরিয়ান ব্যান্ড বিটিএসের গান শুনে ব্যান্ডটি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয় সে। জানতে পারে, ব্যান্ডটির সদস্য জন জংগুক তায়কোয়ান্দোতে ব্ল্যাকবেল্ট। হঠাৎ মনে পড়ে, আরে আমি তো তায়কোয়ান্দো ছেড়েই দিলাম! আর দেরি না করে ধানমন্ডির সুলতানা কামাল মহিলা কমপ্লেক্সে তায়কোয়ান্দো ক্লাসে ভর্তি হয়ে যায় সে। এরপর আর কোনো বাধাই তাকে থামাতে পারেনি।
দুই বছরের মাথায় ব্ল্যাকবেল্ট অর্জন করে নিজেকে উৎসাহী খেলোয়াড় হিসেবে প্রমাণ করে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নবম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী। ২০১৭ সালের এপ্রিলে ওয়াল্টন আয়োজিত জাতীয় স্কুল-কলেজ তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতায় পদকও জেতে। সেবছর ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ১৫তম আন্তর্জাতিক ক্লাবস ওপেন তায়কোয়ান্দো চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয় সে। বাংলাদেশ থেকে তার সঙ্গে ছিল আরো ১৭ প্রতিযোগী। প্রতিযোগিতায় তাম্রপদক অর্জন করে মৌনতা। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী ২৬টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় শীর্ষ সক্রিয় দেশ হয় বাংলাদেশ। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এত দেশের সামনে নিজের দেশের পতাকা গায়ে জড়িয়ে খুবই গর্ব হচ্ছিল তার। মৌনতার মতে, শুধু আত্মরক্ষার জন্য নয়, আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য ছেলে-মেয়ে সবারই মার্শাল আর্ট শেখা উচিত!
মৌনতার সাক্ষাৎকার
প্রশ্ন :
প্রিয় তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড় কে?
লি দে হুন।
প্রশ্ন :
অবসর সময়ে প্রিয় কাজ কী?
কে ড্রামা, অ্যানিমে দেখা ও মান্হা পড়া।
প্রশ্ন :
কে বা কী সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দেয়?
তায়কোয়ান্দো বিষয়টাই সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণাদায়ক। সঙ্গে বাবা-মাও অনেক অনুপ্রাণিত করে।
প্রশ্ন :
এমন যদি হয়, পৃথিবী থেকে তায়কোয়ান্দো বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তাহলে কী করবে?
নিজেই বিলুপ্ত হয়ে যাব!
প্রশ্ন :
তায়কোয়ান্দো ছাড়া আর কী কী খেলা ভালো লাগে?
ক্রিকেট আর ফুটবল।
প্রশ্ন :
প্রিয় গানের ব্যান্ড কোনটি?
বিটিএস।
প্রশ্ন :
প্রিয় লেখক কে?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
প্রশ্ন :
আলাউদ্দিনের চেরাগ যদি পাও, তাহলে কী চাইবে?
লি দে হুনের সঙ্গে দেখা করব, বিটিএসের কনসার্টে যাব।
প্রশ্ন :
বাংলাদেশের খেলাধুলার কোন দিকটা বেশি ভালো লাগে?
খেলোয়াড়দের উদ্যম, বিশেষ করে ক্রিকেটারদের।
প্রশ্ন :
কিশোর আলোর পাঠকদের উদ্দেশে কী বলতে চাও?
যেটা ভালো লাগে সেটার পিছে লেগে থাকবে!