কার্টুন শব্দটা শুনলেই একটা দারুণ চনমনে বোধ হয়। মনে হয় বেশ একটা মজার কিছু ঘটতে যাচ্ছে। একটা দারুণ কিছু, কিছু অ্যাডভেঞ্চার, কিছু রহস্য, কিছু আনন্দ সব মিলে যেন কী একটা ব্যাপার ঘটে যায় একসঙ্গে। কার্টুনের কত শত ধরন, আছে কার্টুন ছবি (অ্যানিমেশন), কমিকস, স্ট্রিপ, ক্যারিকেচার। আর ডিজিটাল দুনিয়ায় তো এর ধরনের অভাবই নেই, একেকটা গেমও তো আসলে একেকটা কার্টুন ছবিই। কার্টুনের এই বিরাট দুনিয়ায় আমরা আর পিছিয়ে থাকি কেন? কার্টুনের বিরাট যজ্ঞে কীভাবে তবে লগ ইন করা যায়? দেখা যাক। কার্টুন যাদের ভালো লাগে, বিশেষ করে যারা আঁকতে চায়, তাদের জন্যই এই সিরিজ।
কার্টুনের আসলে দুইটা অংশ। আঁকা আর লেখা বা আইডিয়া। মজার ব্যাপার হলো, আমরা আসলে খালি চোখে আঁকাটাই দেখি কিন্তু এর মূল মজাটা কিন্তু এর পেছনের আইডিয়াটা। আমরা এখানে আগে আঁকাআঁকির অংশটা নিয়ে কথা বলব। আর শেষের দিকে বলব কমিকস কীভাবে আঁকা হয়, আইডিয়া কীভাবে আসে, গল্প কীভাবে বলে ইত্যাদি। আশা করি খুব একটা খারাপ হবে না ব্যাপারটা ‘কার্টুন’ বলে কথা।
প্রথমে আমরা একেবারে মূল বিষয়ে চলে যাই। কার্টুনে সবচেয়ে বিপদ হয় মানুষ আঁকতে। কোত্থেকে শুরু করব, কীভাবে এগোব এটা আসলেই বিপদের কাজ। এটা করার একটা সহজ পথ হলো আগেই গোটা মানুষটা না এঁকে দুইটা গোল্লা আঁকা। মূলত পুরো ফুটবলের মতো গোল্লা না। অনেকটা ডিমের মতো। আসলে এই দুইটা ডিম হলো শরীরের দুইটা অংশ। বুকের খাঁচা আর কোমর। আর এই দুই অংশ একটা রাবারের মতো সুতো দিয়ে আটকানো থাকবে, যেটা আসলে মেরুদণ্ড। কথা না বাড়িয়ে আমরা সরাসরি কাজে চলে যাই। তবে চাইলে মানুষ ছাড়া অন্য কিছু দিয়েও কার্টুন আঁকা সম্ভব। মানুষ আঁকা শিখতে আলসেমি লাগলে দুটো ডিম কথা বলছে এমন করেও শুরু করতে পার।
ভালো কথা, দুটো ডিম বোঝার জন্য আমরা দুই রং দিয়েছি। আর দুইটা ডিম কিন্তু দুভাবে রাখা। কালো বৃত্তগুলো বোঝাচ্ছে সেগুলোর মাঝ বরাবর যদি কোনো লাইন টানা হয় তার পথটা। এখানে লাল ডিমটা আসলে মানুষের বুকের খাঁচা। এই অংশটাই শরীরের মধ্যে সবচেয়ে বড়। আর নিচে নীল ডিম হলো কোমর। এবার তিন নম্বর ছবিটায় দেখা যাচ্ছে এই দুইটাকে একটা কালো সুতামতো কিছু দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। বাস্তবে এইটা আসলে মেরুদণ্ড। বোঝার সুবিধার জন্য পাশে ছোট করে উল্টে ব্যাপারটা বোঝানো হলো। মেরুদণ্ড অনেকটা রাবারের মতো এই দুইটা অংশকে আটকে রাখে। মাথার খুলির গোড়া থেকে শুরু করে কোমরের শেষ পর্যন্ত এটা নামে। ব্যস! পুরো শরীরের এটুকু ভালোমতো যদি আমরা বুঝি তবে বাকিটুকু জলবত্ তরলং। এবার আমরা এই জোড়া ডিমের কিম্ভূত বস্তুটা বিভিন্নভাবে আঁকার চেষ্টা করব। দেখা যাক সেটা কেমন হয়।
সোজা, বাঁকা, উল্টো, ডানে-বাঁয়ে মুচড়ে মোটকথা যতভাবে মাথায় আসে সেভাবে করে এটা আঁকা শুরু করতে হবে এখনই। আমরা যদি কার্টুন না এঁকে একেবারে রিয়েলিস্টিক দ্য ভিঞ্চি স্টাইলেও আঁকতে চাই, তাহলেও কিন্তু বেসিক এটাই! সুতরাং এটা আরও যতভাবে মাথায় আসে এঁকে ফেলা যাক। তবে ব্যাপারটা অঙ্ক ক্লাসের মতো, মানে ‘কেন এই অঙ্ক করছি জানি না’ টাইপ হওয়ার আগেই এটা করে কী উপকার হবে, তা একটু আড়চোখে চুরি করে পরের ড্রয়িংটা দেখে নিই।
অর্থাত্, যে ধরনের আঁকাই হোক না কেন, ডিটেইল বা সিম্পল—সবগুলো শরীর কিন্তু সেই ডিম দুইটার প্রথমে আঁকা একেবারে সহজ ভঙ্গির ওপরেই ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। এখনই এসব দেখে মাথা গরম করার কিছু নেই। আশা করি আমরা এই সিরিজের শেষ নাগাদ এই ধরনের যেকোনো ভঙ্গির মানুষ আঁকতে শিখে যাব।
এবার আমরা একটু ডিটেইলে যাই। প্রথমে কিছু অস্ত্রোপচার করে নিই। ডিম দুটো (ধরে নিই সেদ্ধ ডিম) চাক চাক করে কিছুটা কেটে নিই। মানে যে দিকগুলো তাদের মুখোমুখি সেদিকে। তাতে করে ওপরের ছবিটার মাঝখানের মতো একটা ব্যাপার ঘটবে। মানে মনে হবে দুইটা অংশই কিছুটা বাঁকা করা। পাঁজর ওপরের দিকে, কোমর নিচের দিকে। ব্যাপারটা আসলেই তাই। এবারে স্কন্ধকাটা ভূতটার একটা মাথা দিই। মাথা বলতে আসলে খালি খুলির ওপরের অংশটাই বলা হচ্ছে এখন। আসলে খালি মাথা আমরা পরে আরও ডিটেইল দেখব।
হুম। আর খুলির নিচের পার্টটা যদি বুঝতে চাই সেটা আসলে সহজ। উপরে খেয়াল করি। খুলির সঙ্গে চোয়ালটা আসলে একটা স্ক্রুর মতো করে আটকে থাকে। কথা বলা বা হাঁ করার সময় খালি ওই পার্টটাই নড়ে। কেউ যদি ‘রোবটস’ অ্যানিমেশনটা দেখি তাহলে দেখব ওখানে রডনি কপারবটম নামের মূল চরিত্রটা ঠিক আমাদের এই ডিম মানুষের মতোই।
প্রথম পর্বের জন্য আশা করি যথেষ্টই বলা হলো। পরের পর্ব আসতে আসতে যদি এই সেদ্ধ ডিমগুলো মোটামুটি কড়া তেলে ভেজে ফেলতে পারি, তবে অন্য পর্বগুলো বেশ উপাদেয় হবে। ভালো কথা। চাইলে অন্যান্য সত্যিকারের ছবি বা আঁকা দেখে এখন তাদের ডিমগুলো কীভাবে কোনটার সঙ্গে কোনটা আছে সেটা বের করে আঁকার চেষ্টা করলে এই পর্বের কাজটা আরও সহজ হবে। আপাতত এখানেই থামি এবার।