অগণিত তারার মাঝে একখণ্ড চাঁদই আমাদের বড় আপন। আমরা দেখি চাঁদকে নিয়ে গল্প, কবিতা বা গানের শেষ নেই।
প্রাচীনকালে জাপানিরা মনে করত, চাঁদের বুকে একটা খরগোশ পিঠা বানাচ্ছে। কোনো কোনো ইউরোপিয়ান চাঁদের বুকে একটি মেয়ের মুখ কল্পনা করত। অনেকে আবার চাঁদের বুকে একটা কাঁকড়ার ছবি দেখত। আমাদের চাঁদের বুকে চরকা কাটা বুড়ির কথা তো তোমরা সবাই জানো। আসলে চাঁদের পৃষ্ঠ দেখে এ রকম কল্পনা করার কারণও আছে। পৃথিবীর মতো চাঁদের বুকেও অনেক পাহাড় আর সমুদ্র আছে। তবে চাঁদের সাগরে কোনো পানি নেই (অবশ্য সম্প্রতি চাঁদের মেরু অঞ্চলে বরফের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া গেছে)। চাঁদের পৃষ্ঠে রয়েছে অসংখ্য খাদ। উল্কাপাতের ফলেই এ রকম খাদ সৃষ্টি হয়েছে। চাঁদের সমুদ্রগুলোকে পৃথিবী থেকে অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখায়। চাঁদের মাটির ভেতর থেকে গলিত লাভা বেরিয়ে এসে এ এলাকা সৃষ্টি করেছে।
এই অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকাগুলোকেই পৃথিবী থেকে দেখলে কখনো মনে হয় চাঁদের বুড়ি চরকা কাটছে, কখনো মনে হয় খরগোশ, কখনোবা কাঁকড়া। তোমাদের অনেকের মনেই হয়তো প্রশ্ন, চাঁদের একটা দিকের ছবিই কেন আমরা দেখি?
পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ হলো চাঁদ। পৃথিবী যেমন সূর্যের চারপাশে পাক খায়, চাঁদও তেমনি পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে চাঁদের ক্ষেত্রে একটা ভিন্ন ব্যাপার ঘটে। চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে আসতে যে সময় নেয়, চাঁদ নিজ অক্ষে ঘুরতেও সেই একই সময় নেয়। এ কারণে আমরা পৃথিবীবাসী চাঁদের একই পিঠ দেখি, আর অন্য পিঠ চিরদিনই আমাদের কাছে অদৃশ্যই থেকে গেছে।
আকাশে কী থাকবে
এই দিনে আকাশের প্রধান আকর্ষণ থাকছে অর্ধেক চাঁদ। এ ছাড়া মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি গ্রহ আকাশে থাকবে। তবে গ্রহগুলো পশ্চিম দিগন্তের কাছে থাকবে। হয়তো গাছের জন্য সেগুলোকে দেখা নাও যেতে পারে।
ঢাকা শহরের আলো এবং ধুলোবালির জন্য শুধু প্রধান তারাগুলোকেই আকাশে দেখা যাবে। রাত নয়টার দিকে সামার ট্রায়াঙ্গেলের ভেগা, দেনেব, আলতেয়ার আকাশের মধ্যভাগে দেখা যাবে। আর আকাশের অলংকার স্করপিয়াস নক্ষত্রমণ্ডলী দক্ষিণ আকাশকে আলোকিত করে রাখবে। পুব আকাশে পেগাসাস আর এন্ড্রোমিডাকে ধীরে ধীরে আকাশপটে এগিয়ে আসতে দেখব। উত্তর-পশ্চিম আকাশে অস্তগামী সপ্তর্ষি নক্ষত্রমণ্ডলীর বিপরীতে উত্তর-পূর্ব আকাশে উদীয়মান ক্যাসিওপিয়া নক্ষত্রমণ্ডলীকে দেখা যাবে।
গ্রিক উপকথায় ইথিওপিয়ার রাজা সিফিয়াসের স্ত্রী হচ্ছেন ক্যাসিওপিয়া। সে কাহিনিতে আমরা দেখি ক্যাসিওপিয়া খুবই অহংকারী ছিলেন। নিজেকে অনেক সুন্দর ভাবতেন। এতে দেবতারা তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে শাস্তি দেন। শাস্তিটা ছিল যে মৃত্যুর পর ক্যাসিওপিয়ার স্থান আকাশে হলেও তার মাথা ছয় মাস ওপরে থাকবে আর বাকি ছয় মাস পা ওপরে থাকবে।
এ কাহিনি তৈরির পেছনে যে বিষয়টি আছে তা হলো, পূর্ব আকাশে ক্যাসিওপিয়াকে দেখতে ইংরেজি ‘এম‘ অক্ষরের মতো আর পশ্চিম আকাশে ‘ডব্লিউ‘ অক্ষরের মতো লাগে।
দক্ষিণ গোলার্ধের কিছু অংশ ছাড়া পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে রাতের আঁধারে ধ্রুবতারাকে খুব সহজেই খুঁজে পেতে বা দিক নির্ণয় করতে সপ্তর্ষি অথবা ক্যাসিওপিয়া নক্ষত্রমণ্ডলী আমাদের সাহায্য করে। ধ্রুবতারার দুই দিকে এই দুটি নক্ষত্রমণ্ডলীর অবস্থান। ফলে সারা বছর আকাশে এদের যেকোনো একটিকে দেখতে পাওয়া যায়। সবার আকাশ মেঘমুক্ত থাকার প্রত্যাশায়।