জেমস ওয়েবের মহাকাশযাত্রা

২২ ডিসেম্বর ২০২১। ফ্রেঞ্চ গায়ানার ইউরোপিয়ান স্পেসপোর্ট।

এরিয়েন ৫ ইসিএ রকেট উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত। কন্ট্রোল রুমে বসে উদ্বিগ্ন মুখে মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছেন একদল বিজ্ঞানী। শুধু তাঁরাই নন, পুরো পৃথিবীর লাখো বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানপ্রেমী মানুষ অপলক চোখে রুদ্ধশ্বাসে তাকিয়ে আছেন নিজেদের ডিভাইসের পর্দায়। সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে ঘটনাটা। একটু পরই যাত্রা করবে এরিয়েন ৫। রকেটের একদম মাথার অংশটির নাম ফেয়ারিং। তার ভেতরে ভাঁজ করা অবস্থায় আছে হাজারো বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীর প্রায় পঁচিশ বছরের পরিশ্রম। কত নির্ঘুম রাতের ফসল এই অমূল্য রত্ন! জেমস ওয়েব নভোদুরবিন।

ছুটল এরিয়েন ৫। ঘাড়ে তার জেমস ওয়েব। ধীরে ধীরে পেরিয়ে গেল পৃথিবীর সীমানা। ছুটল এবার লক্ষ্যপানে। লক্ষ্য, এল-২ ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট। এমন এক জায়গা, যেখানে পৃথিবী ও সূর্যের মহাকর্ষ একে অন্যকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। মাত্র পাঁচটি এ রকম জায়গা আছে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে। তাদের বলে পাঁচটি ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট। জেমস ওয়েবের লক্ষ্য এর দ্বিতীয়টি।

এক মাস, পুরো একটি মাস মহাকাশের বিশাল শূন্যতার মধ্য দিয়ে ছোটার পর জেমস ওয়েব পৌঁছাবে লক্ষ্যে। যেতে যেতে ভাঁজ খুলবে জেমস ওয়েবের বিভিন্ন অংশের। লক্ষ্যে পৌঁছাতে পৌঁছাতে এটি কার্যকর হয়ে উঠবে পুরোপুরি। ২০৩১ সাল পর্যন্ত সেখানে থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রচুর তথ্য দেবে পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের। খুঁজে বেড়াবে মহাবিশ্বের প্রথম গ্যালাক্সির আলো। মহাবিশ্বের প্রথম আলো!

ওপরের অংশটি একটি দৃশ্যকল্প। এখনো ২২ ডিসেম্বর আসেনি। যেকোনো ছোট্ট কারণে জেমস ওয়েবের উৎক্ষেপণ পিছিয়ে যেতে পারে আবারও। তবে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, জেমস ওয়েব সফলভাবেই যাত্রা করবে লক্ষ্যপানে।

১৯৯৬ সালে প্রথম এই নভোদুরবিন বানানোর পরিকল্পনা করে নাসা। সঙ্গে যুক্ত হয় ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইসা) এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি (সিএসএ)। ১৯৯৭ সালে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করা হয় তখন। এরপর শুরু হয় ঝামেলা। কাজ শুরু করে ‘মারফির সূত্র’! ‘ইফ সামথিং ক্যান গো রং উইল গো রং।’ মানে, কোনো সমস্যা হওয়ার সুযোগ থাকলে সেটা হবেই। এটি কোনো বৈজ্ঞানিক সূত্র নয়, শুধু একটি প্রচলিত বাক্য। তবে পরিসংখ্যান বলে, অনেক ক্ষেত্রেই এমনটা হয়। ঠিক সেটাই হতে থাকে জেমস ওয়েবের ক্ষেত্রে।

২০০৫ সালে আগের পরিকল্পনা বদলে নতুন করে নকশা করা হয় জেমস ওয়েবের। লক্ষ্য ছিল, উৎক্ষেপণ করা হবে ২০০৭ সালে। কিন্তু হলো না। একে একে ঝামেলা হতে থাকে আর পেছাতে থাকে উৎক্ষেপণ। নানা ঝামেলা, ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে, ১৬ বার উৎক্ষেপণ বাতিল এবং প্রায় এক হাজার কোটি টাকা খরচ হওয়ার পর...অবশেষে জেমস ওয়েব এখন উড়তে প্রস্তুত। আগেই বলেছি, নাসার হিসাব অনুসারে ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর এটি ছুটবে মহাকাশপানে।

জেমস ওয়েবের কাজ কী? কেন এটি এত গুরুত্বপূর্ণ? প্রায় ৩১ বছর ধরে পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং বৃহত্তম নভোদুরবিন হিসেবে কাজ করছে হাবল নভোদুরবিন। বিগ ব্যাংয়ের মাত্র ১০০ কোটি বছর পরের মহাবিশ্বের আলোও ধরতে পেরেছে এটি। এই হাবলের উত্তরসূরি হিসেবে তৈরি করা হয়েছে জেমস ওয়েবকে। উত্তরসূরি বললেও দুটি দুরবিনের কাজ খানিকটা আলাদা।

আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ওপর ভিত্তি করে একে অতিবেগুনি, দৃশ্যমান ও অবলাল আলোয় ভাগ করা যায়। অবলালের খুব সামান্য অংশই ধরতে পারে হাবল। তবে বাকি দুটি ধরতে পারে বেশ ভালোভাবেই। এর মাধ্যমে হাবল বিগ ব্যাংয়ের মাত্র ১০০ কোটি বছর পরের মহাবিশ্বের আলোও ধরতে পেরেছে। তবে জেমস ওয়েব কাজ করবে মূলত অবলাল আলো নিয়ে। ৭০০ ন্যানোমিটার থেকে ১ মিলিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকে বলে অবলাল আলো। এ আলো চোখে দেখা যায় না। একে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে বলে নিয়ার-ইনফ্রারেড বা দৃশ্যমান আলোর নিকটস্থ অবলাল আলো। ৩ হাজার ন্যানোমিটার থেকে ২৫ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে বলে মিড-ইনফ্রারেড। এই দুই ধরনের অবলাল আলো নিয়েই মূলত কাজ করবে জেমস ওয়েব। ফার-ইনফ্রারেড, মানে ২৫ মাইক্রোমিটারের বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অবলাল আলো এটি তেমন ধরতে পারবে না।

যে তরঙ্গদৈর্ঘ্যে জেমস ওয়েব কাজ করবে, তা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি, দুরবিন দিয়ে আমরা অতীত দেখতে পাই। আলোর বেগ সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার। অর্থাৎ যত দূর থেকে আলো আসে, তা আমাদের কাছে পৌঁছাতে তত সময় লাগে। তার মানে, যত দূর থেকে আলো আসে, সে আমাদের কাছে নিয়ে আসে তত অতীতের তথ্য।

মহাবিশ্বের বয়স প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর। অর্থাৎ শুরুর দিকের আলোগুলো আমাদের কাছে এসে পৌঁছায় অবলাল আলো হিসেবে। কারণ, যত দূর থেকে আলো আসে, তার রেড শিফট বা লোহিত সরণ হয় তত বেশি।

লোহিত সরণের এ ধারণা এসেছে ডপলার ইফেক্ট থেকে। একটা উদাহরণ দিই। ধরুন, আপনি রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে আছেন। ট্রেন যখন আপনার কাছে আসবে, তখন এর হুইসেলের শব্দ শোনা যাবে তীক্ষ্ণভাবে। এ ক্ষেত্রে তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছোট হয়ে যেতে থাকে, আর কম্পাঙ্ক বেড়ে যায়। সে জন্য হুইসেলের শব্দ শোনা যায় তীক্ষ্ণভাবে। আবার ট্রেন দূরে সরে যেতে থাকলে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেড়ে যায়, কমে যায় কম্পাঙ্ক। ফলে হুইসেলের শব্দ ধীরে ধীরে মৃদু হতে হতে হারিয়ে যায়। একই জিনিস আলোর জন্য খাটানো যায়। সে জন্য জানা দরকার, নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম, আর লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি। তাই যেসব মহাজাগতিক বস্তু, গ্রহ-নক্ষত্র-গ্যালাক্সি ইত্যাদি আমাদের দিকে ছুটে আসছে, তাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের নীল সরণ হয়। অর্থাৎ তরঙ্গদৈর্ঘ্য উৎস থেকে আমাদের কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ছোট হয়ে আসে। আর যেসব নক্ষত্র দূরে সরে যায়, তাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বড় হতে থাকে, অর্থাৎ লোহিত সরণ ঘটে। এডউইন হাবল দেখিয়েছিলেন, যে গ্যালাক্সি আমাদের থেকে যত দূরে, সেটি আমাদের থেকে তত দ্রুত বেগে দূরে সরে যাচ্ছে। সে জন্য যত দূরের আলো, তার লোহিত সরণ হয় তত বেশি। বিগ ব্যাংয়ের ৪০০ মিলিয়ন বছর পর নির্গত আলো আমাদের কাছে এসে পৌঁছাচ্ছে ১৩.৩ বিলিয়ন পরে। অর্থাৎ এর লোহিত সরণ হতে হতে তরঙ্গদৈর্ঘ্য এত বড় হয়ে যায় যে এটি আমাদের কাছে এসে পৌঁছায় অবলাল আলো হিসেবে। তার মানে, বিগ ব্যাংয়ের পর মহাবিশ্বের প্রথম আলো বা মহাবিশ্বে প্রথম জন্ম নেওয়া গ্যালাক্সির আলো দেখতে হলে দুরবিনকে অবলাল আলো ধরতে পারতে হবে। সে উদ্দেশ্যেই বানানো হয়েছে জেমস ওয়েব নভোদুরবিন।

আশা করা হচ্ছে, হাবলের উত্তরসূরি হিসেবে জেমস ওয়েব আরও আগেকার আলো ধরতে পারবে। হয়তোবা ধরা যাবে মহাবিশ্বের প্রথম আলোও! এর হাত ধরে আমরা আরও ভালোভাবে জানতে পারব শিশু মহাবিশ্বের কথা।

জেমস ওয়েবের সানশিল্ডের আকার দৈর্ঘ্যে প্রায় ২২ মিটার ও প্রস্থে প্রায় ১৪ মিটার। নাম শুনেই বোঝা যায়, এটি আলো ও তাপরোধী অংশ। কাজ—টেলিস্কোপের মূল অংশকে (মূল আয়না, রিসিভার ইত্যাদি) বিভিন্ন আলোর উৎস (যেমন সূর্য) ও তাপ থেকে রক্ষা করা। ১৫ লাখ কিলোমিটার দূর থেকে জেমস ওয়েব পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরবে। ধারণা করা হচ্ছে, এ থেকে প্রথম ছবি পাওয়া যাবে মোটামুটি দু-তিন মাস পর।

মূল আয়নাটি ষড়্‌ভুজাকৃতির। ১৮টি ছোট ছোট আয়না মিলে তৈরি এ আয়না স্বর্ণাবরণে মোড়া। এর ব্যাস ৬.৫ মিটার। হাবলের মূল আয়নার ব্যাস ছিল মাত্র ২.৪ মিটার। অর্থাৎ জেমস ওয়েবের মূল আয়না এর দ্বিগুণের চেয়ে বড়! দ্বিতীয় আরেকটি আয়না আছে ওয়েবের। মূল আয়না থেকে প্রতিফলিত আলোকে এটি কেন্দ্রীভূত করবে ইন্টিগ্রেটেড সায়েন্স ইনস্ট্রুমেন্ট মডিউলের ওপর। এই মডিউল গৃহীত আলো থেকে তৈরি করবে ছবি। সেই সঙ্গে টেলিস্কোপটিতে আছে স্টার ট্র্যাকার। এগুলো ছোট ছোট টেলিস্কোপ, নক্ষত্রগুলোর প্যাটার্ন খেয়ালে রেখে মূল টেলিস্কোপটিকে লক্ষ্যের দিকনির্দেশনা দেবে।

পৃথিবী থেকে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরের এল২ ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্টে অবস্থান করবে জেমস ওয়েব। পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে পাঁচটি জায়গা আছে, যেখানে পৃথিবী ও সূর্যের মহাকর্ষ একে অন্যকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ফলে যেকোনো বস্তু ওই জায়গাগুলোতে স্থিতিশীলভাবে থাকতে পারে। এই পাঁচটি জায়গাকেই বলে ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট। পাঁচটির প্রথম তিনটি আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ অয়লার। তবে এই জায়গাগুলো পুরোপুরি স্থিতিশীল নয়। মানে, এসব জায়গা থেকে নভোটেলিস্কোপ বা কোনো বস্তু খানিকটা সরে গেলেই পৃথিবী বা সূর্যের টান খেেয় অনেক দূরে অন্য কোনো দিকে চলে যাবে। এল৪ ও এল৫ আবিষ্কার করেন ল্যাগ্রাঞ্জ, এই দুটি স্থিতিশীল। জেমস ওয়েব অবস্থান করবে এল২–তে।

ইন্টিগ্রেটেড সায়েন্স ইনস্ট্রুমেন্ট মডিউলের (আইএসআইএম) দিকে একটু তাকানো যাক। এতে আছে একটি নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরা (এনআইআর ক্যাম) ও একটি মিড-ইনফ্রারেড ইনস্ট্রুমেন্ট (এমআইআরআই)। একই সঙ্গে ছবি তোলা ও টেলিস্কোপটিকে লক্ষ্যের দিকে ফোকাস করা মূল সেন্সর হিসেবে কাজ করবে এনআইআর ক্যাম। আর এমআইআরআই মাত্র ৭ কেলভিন তাপমাত্রাতেও কার্যকর থাকবে। এটি ক্যামেরা কাম স্পেকট্রোগ্রাফ বা বর্ণালিমাপন যন্ত্র। অবলাল আলো ধরার পাশাপাশি বর্ণালি বিশ্লেষণের কাজও করবে এটি।

সেই সঙ্গে থাকছে একটি ফাইন গাইডেন্স সেন্সর (এফজিএস) এবং নিয়ার-ইনফ্রারেড ইমেজার অ্যান্ড স্লিটলেস স্পেকট্রোগ্রাফ। অতি ম্লান নক্ষত্রের আলো শনাক্ত করে, এর ওপর ভিত্তি করে টেলিস্কোপটিকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে তাক বা ফোকাস করতে পারবে এফজিএস। পাশাপাশি স্পষ্ট ও পরিষ্কার ছবি ওঠাতেও ভূমিকা রাখবে এটি। একটি আলাদা নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকট্রোগ্রাফও (এনআইআরস্পেক) থাকছে। একসঙ্গে ১০০টি গ্যালাক্সির বর্ণালি ধারণ ও প্রক্রিয়াজাত করতে পারবে এই যন্ত্রাংশ। এই হলো জেমস ওয়েবের ইন্টিগ্রেটেড সায়েন্স ইনস্ট্রুমেন্ট মডিউল। আগেই যেমন বলেছি, এর কাজ গৃহীত আলো থেকে ছবি তৈরি করা। এসব ছবি ও তথ্য পৃথিবীতে পাঠাবে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ‘হাই গেইন অ্যানটেনা’।

জেমস ওয়েবের মূল নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার কাজ করবে এর স্পেসক্রাফট বাস। আর এসব বৈদ্যুতিক যন্ত্র চালানোর জন্য মূল শক্তি জোগাবে এর সোলার পাওয়ার অ্যারে বা সৌরকোষ।

জেমস ওয়েবের অন্যতম কাজ শিশু মহাবিশ্বকে আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করা। হাবল যেখানে বিগ ব্যাংয়ের প্রায় ১০০ কোটি বছর পরের আলো ধরতে পারত, জেমস ওয়েবের সেখানে প্রায় ২০ কোটি বছর পরের আলো ধরতে পারার কথা নিশ্চিতভাবে। অর্থাৎ আরও অনেক অনেক অতীতের আলো ধরতে পারবে এটি।

শিশু মহাবিশ্বে জন্ম নেওয়া প্রথম দিকের গ্যালাক্সি ও নক্ষত্রগুলোর আলো সম্ভবত ধরা পড়বে জেমস ওয়েবের চোখে। এর মাধ্যমে বোঝা যাবে মহাবিশ্বের ক্রমপরিবর্তনের বিষয়টি। বোঝা যাবে, গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে এত বৈচিত্র্য কীভাবে এল। এ ছাড়া ডার্ক ম্যাটার, মানে গুপ্তবস্তুর খোঁজ করবে জেমস ওয়েব। মহাবিশ্বের মাত্র ৫ শতাংশের মতো আমাদের জানা পদার্থ দিয়ে তৈরি। বাকি প্রায় ২৭ শতাংশ ডার্ক ম্যাটার ও ৬৮ শতাংশের মতো আছে ডার্ক এনার্জি বা গুপ্তশক্তি। গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং ব্যবহার করে দূর, বহুদূরের গ্যালাক্সির ঘূর্ণন পরীক্ষা করে জেমস ওয়েব বোঝার চেষ্টা করবে, সেসব জায়গায় গুপ্তবস্তু আছে কি না, থাকলে সেসব গ্যাল্যাক্সির ওপরে কী রকম প্রভাব ফেলছে।

সৌরজগতের বাইরে প্রাণের উপযোগী গ্রহে প্রাণের সন্ধানও করবে জেমস ওয়েব। এমনকি সৌরজগতের ভেতরে নেপচুন ও ইউরেনাসকেও আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করবে। তৈরি করবে তাদের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার মানচিত্র (মানে, কোথায় কী রকম তাপমাত্রা সাধারণত থাকে)। তালিকা করবে তাদের মধ্যকার রাসায়নিক পদার্থগুলোর। জানতে চেষ্টা করবে, এগুলো একের থেকে অন্য ও এগুলোর প্রতিবেশী শনি ও বৃহস্পতি থেকে কতটা ভিন্ন।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, আধুনিক প্রযুক্তিবলে জেমস ওয়েব যোগ্য উত্তরসূরি হবে হাবলের। হয়তো এর মাধ্যমে দেখা পাওয়া যাবে মহাবিশ্বের প্রথম আলোর! কে জানে?

কী হবে, তা নিশ্চিতভাবে এখনো জানে না কেউই। তবে সফলভাবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলে জেমস ওয়েব নভোদুরবিন ভবিষ্যতে জ্যোতির্বিজ্ঞান, মহাবিশ্বতত্ত্ব ইত্যাদিতে যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে, এ নিয়ে সংশয় নেই কারোরই।

এখন শুধু ২২ ডিসেম্বরের অপেক্ষা।

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস, বিবিসি, উইকিপিডিয়া, নাসা