তোমরা অনেকেই নিশ্চয় বিখ্যাত লেখক শেক্সপিয়ারের রোমিও জুলিয়েট পড়েছ। তবে আমি তোমাদের এখন অন্য এক রোমিও আর জুলিয়েটের গল্প শোনাব। সঙ্গে থাকবে পিলপিল। এরা সবাই মিলে থাকে সুন্দরবনের করমজলে। কারণ, তারা সবাই লোনা পানির কুমির।
জুলিয়েট আর পিলপিলের ফোটানো ডিম থেকে ২০১৪ সালের ১০ আগস্ট ৭১টি বাচ্চার জন্ম হয়; যদিও মে মাসের দিকে দুজনে মিলে ডিম পেড়েছিল ৯২টি। এরপর কুমিরপ্রেমিক আবদুুর রব ডিমগুলো টানা ৯১ দিন সেখানকার কুমির প্রজননকেন্দ্রের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখেন। ২১টি ডিম নষ্ট হয়ে গেলেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ায় এবারে ফোটানো বাচ্চার ৮০ শতাংশ নারী ও ২০ শতাংশ হয়েছে পুরুষ কুমির।
একসময় বাংলাদেশে ছিল লোনা পানির কুমির, মিঠা পানির কুমির ও গঙ্গোত্রীয় কুমির বা ঘড়িয়াল। এর মধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়ালের বিলুপ্তি ঘটেছে। এখন শুধু লোনা পানির কুমিরের অস্তিত্বই আছে। তাই বিলুপ্তপ্রায় এই লোনা পানি প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালন-পালনের জন্য ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রে বন বিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজননকেন্দ্র।
জেলেদের জালে আটক ছোট ও বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে এই কেন্দ্রের প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কেন্দ্রে রয়েছে লোনা পানির দুটি নারী কুমির—জুলিয়েট ও পিলপিল এবং একটি পুরুষ কুমির রোমিও। ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত জুলিয়েট ও পিলপিল মোট ৫৭৪টি ডিম থেকে ৩৫৬টি বাচ্চা ফুটিয়েছে। লোনা পানির কুমির সাধারণত ৮০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
করমজল কুমির প্রজননকেন্দ্র থেকে ডুলাহাজারা ও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, পটুয়াখালী বন বিভাগ ও সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে ১০০টি কুমির অবমুক্ত করার পর বর্তমানে কেন্দ্রে কুমিরের সংখ্যা ২৫৮। তো রোমিও, জুলিয়েট, পিলপিল আর তার ছানাদের কবে দেখতে আসছ তোমরা সুন্দরবনে?