পানির নিচের বিশাল দুনিয়া নিয়ে আমরা কতটুকুই জানি? ২০১৮ সালের আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফিতে ‘ধ্বংসাবশেষ’ ক্যাটাগরিতে উঠে এসেছিল দুই বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংস হওয়া কিছু জাহাজের ছবি। বেরিয়ে এসেছিল অনেক না বলা গল্প। বরাবরের মতো ২০১৯ সালের আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতাও দেখিয়েছে অনেকগুলো গল্প।
ইংল্যান্ডে ১৯৬৭ সালে প্রথম আন্ডারওয়াটার ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে ধীরে ধীরে আয়োজন করা হয় ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি অব দ্য ইয়ার। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে অ্যালেক্স মাস্টার্ড, ড্যান বোল্ট এবং পিটার রউনাল্ডসের হাত ধরে ইংল্যান্ড থেকে আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফি অব দ্য ইয়ার প্রতিযোগিতার সূত্রপাত। আর ঠিক তখন থেকেই এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।
আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার ২০১৯ নির্বাচিত হন ইংল্যান্ডের রিচার্ড বার্নডেন। জমা পড়া ৫০ হাজারের বেশি ছবি থেকে বিভিন্ন বিভাগে বিজয়ী প্রতিযোগীদের নাম ঘোষণা করা হয়। প্রতিযোগিতার বিজয়ী ফটোগ্রাফারদের কিছু ছবি নিয়েই এই লেখা।
দ্য লগারহেড সি টারটল
আমাদের বেখেয়ালি কাজের খেসারত দিতে হয় অনেক প্রাণীকেই। যেখানে–সেখানে ফেলা ময়লা, প্লাস্টিক, পলিথিন জমা হয় সাগরে। এভাবে আস্তে আস্তে পৃথিবীর সমুদ্রগুলো পরিণত হচ্ছে ডাস্টবিনে।
লগারহেড কচ্ছপ হিসেবে পরিচিত কচ্ছপগুলো জীবনের বেশির ভাগ সময় পার করে খোলা সমুদ্রে। ক্যারিবিয়ান বিচ থেকে আটলান্টিক পার হয়ে তারা চলে আসে ক্যানারি দ্বীপগুলোতে। আর এই সময় তাদের পার করতে হয় জীবনের হুমকিস্বরূপ বিভিন্ন প্লাস্টিক জাল, ময়লা–আবর্জনা। এডওয়ার্ডো অ্যাসিভেডোর তোলা প্লাস্টিকের জালে প্যাঁচানো কচ্ছপটি জিতে নেয় পুরস্কার। এ যাত্রায় কচ্ছপটি ফটোগ্রাফারের কারণে বেঁচে যায়।
ঘোস্ট ফেরি
সমুদ্রে এখন পর্যন্ত ডুবে যাওয়া জাহাজের সংখ্যা অগণিত। এ রকম প্রতিটি জাহাজের পেছনেই থাকে না বলা অনেক গল্প। জাহাজগুলোকে পানির নিচে দেখে মনে হতে পারে বিশাল কোনো দৈত্য ঘুমিয়ে আছে। এমনই এক গাড়ি পরিবহন করা ফেরির নাম ‘দ্য জেমস ডব্লিউ কার্যান অ্যান্ড জন ম্যাকফেইল’, পানির ২১০ মিটার (৬৪ ফুট) নিচে ডুবে যায় ভয়ানক এক ঝড়ে। ছবিটি তুলেছেন বেকি কাগান স্কট।
দ্য গন্টলেট
আনুমানিক ৭০০ হাঙরের একটি দলের সামনে পড়ে যান রিচার্ড বার্নডেন। রাতের খাবারের সন্ধানে দলটি যখন বের হয়, তাদের সামনে পড়ে যান রিচার্ড। একটি মাছের পেছনে যখন শত শত হাঙরকে মারামারি করতে দেখা যায়, সেই ফাঁকে তুলে নেন কয়েকটি ছবি। আর সেটিই হয়ে যায় ২০১৯–এর সেরা আন্ডারওয়াটার ফটো।
ওহ নো, গডজিলা
গডজিলা! ছবিটি প্রথমে দেখলে এটাই মনে হবে। গালাপাগোস আইল্যান্ডে মেরিন ইগুয়ানাসগুলোকে দেখা যায় বেশি। ছবিটি দেখে মনে হতে পারে কাল্পনিক চরিত্র গডজিলার বিশাল কোনো কাণ্ড ঘটানোর আগের হাসি। ছবিটি তুলেছেন ব্রুস সাডউইকস।
গ্রে সিল ফেইস
শত শত বছর ধরে মানুষের আক্রমণের শিকার গ্রে সিল। এভাবে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে এই প্রজাতির প্রাণীগুলো। যদিও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এদের প্রজাতি রক্ষার্থে উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু পানিদূষণ তো আর আটকানো যাচ্ছে না!
ফটোগ্রাফার গ্রেগ লেকোয়ারকে দেখে গ্রে সিলটি একদম ক্যামেরার কাছেই চলে এসেছিল।
কিউরিয়াস ক্র্যাবিটার
জেসিকা ফারার একজন জীববিজ্ঞানী। সে কারণে অনেক বছর ধরেই সামুদ্রিক সিল নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০০৯ সাল থেকে অ্যান্টার্কটিকাতেও গেছেন কয়েকবার। অ্যান্টার্কটিক পেনিনসুলাতে একটি স্থান আইসবার্গ গ্রেভইয়ার্ড নামে পরিচিত বেশ। সেখানেই একদিন তুলে ফেলেন বিশেষ ছবিটি।
প্লেফুল কাফ
মেরিন ওয়াইল্ডলাইফ নিয়ে কাজ করা ফটোগ্রাফারদের প্রাণীর আচরণ সম্পর্কে অবশ্যই বেশ ভালো জ্ঞান থাকতে হয়। নয়তো প্রাণীদের কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব হয় না। প্যাসিফিকের টোঙ্গা আইল্যান্ডে তোলা জেসিকা ফারারের এক মা তিমির ছবি।
তথ্যসূত্র: দ্য আটলান্টিক