ঘরে বসে বিশ্বভ্রমণ
নেই কোনো স্কুল, নেই কোনো তাড়া। বাইরে যাওয়ার তো একদমই সুযোগ নেই। মাঝেমধ্যে শুধু স্ক্রিনের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে অনলাইন ক্লাস আর ঘুম। দিন দিন কেমন যেন পানসে হয়ে যাচ্ছে সবকিছু। অ্যাডভেঞ্চার করে কোথাও ঘুরতে যাওয়া তো দূরে থাক, উঠান পেরিয়ে একটু প্রাণভরে আকাশ দেখারও সুযোগ দিচ্ছে না এ মহামারি। তবে জীবন যেখানে সংশয়, সেখান অ্যাডভেঞ্চার ও ঘুরতে যাওয়ার চিন্তা করাটা বিলাসিতাই বটে। তাই বলে কি এমন পানসেভাবে প্রতিটা দিন কাটিয়ে দেওয়া যায়?
এ পানসে দিনগুলোকে ১৪ বছর বয়সী ম্যাকায়ার এভারেট ও তাঁর ছোট ভাই ৯ বছর বয়সী ক্যামডেন কিন্তু দারুণ এক উপায়ে রঙিন করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্র্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের লিবার্টিভিলে বাস তাদের। ঘরে বসেই এই দুই ভাইবোন মিলে ঘুরে বেড়াচ্ছে পৃথিবীর এমাথা থেকে ওমাথা। মহাকাশ থেকে সাগর, গ্রেট ওয়াল থেকে মরুভূমি—কিছু বাদ পড়ছে না। কিন্তু কীভাবে?
বড় বোন ম্যাকায়ার হচ্ছে পুরো ঘটনা মূল হোতা। করোনাকালের শুরুর দিকের ঘটনা। মার্চ মাস। ঘরে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে বাড়ির উঠানের পাশে এসে চক দিয়ে ছবি আঁকতে শুরু করে সে। অনেকগুলো বেলুন আঁকা শেষে ডেকে নিয়ে এল ছোট ভাই ক্যামডেনকে। বেলুনের সামনে শুইয়ে চলল ফটোসেশন। এবার ছবি দেখার পালা। ছবি দেখে স্পষ্ট মনে হচ্ছে ক্যামডেন পাহাড়ে দাঁড়িয়ে বেলুনগুলোকে উড়ে যেতে দেখছে!
দারুণ মজা পেয়ে যায় দুই ভাইবোন। প্রতিদিন নতুন নতুন সব ছবি আঁকতে থাকে ম্যাকায়ার। বড় বোনের আঁকায় ভর করে আর কল্পনার সাহায্য নিয়ে ছোট্ট ক্যামডেনও ঘুরতে থাকে দেশ–বিদেশে। আজ আমেরিকা, কাল আবার সিঙ্গাপুর, পরশু হাজির ভেনিসে। টানা ১৫ দিন কেটে যাওয়ার পর দুই ভাইবোন টের পেল, প্রতিবেশীরা সবাই যার যার উঠান থেকে এই আঁকাআঁকি আর ঘোরাঘুরি দেখছে এবং খুব আনন্দ পাচ্ছে। দুই ভাইবোন মিলে শুধু নিজেদের না, প্রতিবেশীদের কোয়ারেন্টিনের সময়টাকেও রাঙিয়ে তুলেছে। ম্যাকায়ার ঠিক করল, আগামী ১০০ দিন সে চক দিয়ে বাড়ির উঠান রাঙাবে। ক্যামডেনও সায় জানায়।
শুরু হলো ১০০ দিনের চ্যালেঞ্জ। মাঝেমধ্যে নতুন আইডিয়া দেয় ক্যামডেন, আবার কখনো ম্যাকায়ার নিজের আইডিয়াও কাজে লাগায়। প্রতিদিন চকের আঁচড়ে রঙিন হয় উঠান। আঁকা শেষে যখন ক্যামডেন নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়ে, সে সময় দুজন এমনভাবে কথা বলে যেন তারা সত্যিই সেই জায়গায় চলে এসেছে। প্রতিবেশীরা সে সময় খুবই মনোযোগী দর্শক।
গত ৪ জুলাই শেষ হয় ১০০ দিনের চ্যালেঞ্জ। তৈরি হয়েছে দারুণ এক সিরিজ। দুজনের কেউই এখানে থেমে যেতে রাজি না। এখনো চলছে আঁকাআঁকি আর ঘোরাঘুরি। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে ম্যাকায়ারের স্কুল খুলে যাবে। অন্তত সে সময় পর্যন্ত ক্যামডেন ঘুরে বেড়াতে পারবে বলে আশ্বস্ত করেছে তাঁর বড় বোন।
ম্যাকায়ারের আঁকা ছবি দেখে আর কল্পনায় ভর করে তুমিও ওদের সঙ্গে ঘুরে আসতে পারো পুরো দুনিয়া। নাকি বাড়ির উঠানে চক দিয়ে দু-একটা আঁচড় দিয়ে দেখবে, কত দূর যাওয়া যায়?