ঘরে থেকেই সাইকেল রেস
দুই চাকার সাইকেলে সাঁই সাঁই করে ঘুরে বেড়ানো আমার শখ। কিন্তু আমার এই সাঁই সাঁই করে সাইকেল চালানো হয় শুধু বাসা থেকে স্কুল আর স্কুল থেকে বাসা পর্যন্তই। তবে এখন করোনাভাইরাস মহামারির ফলে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। স্কুলেও যাওয়া হয় না আর সাইকেলও চালানো হয় না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাঝেমধ্যেই কিছু সাইকেল রেসের ভিডিও দেখি। সাইক্লিস্টরা পাহাড়ের ওপর, সাগরের বালুকাবেলায় কিংবা দুর্গম কোনো রাস্তায় সাইক্লিং করছেন। বিভিন্ন দেশের সাইকেল রেসের ভিডিও দেখে ইচ্ছে করে ইশ! আমিও যদি যেতে পারতাম এমন রেসে!
সাইকেল রেসের কথা বললে সবার প্রথমেই মাথায় আসে ‘ট্যুর দ্য ফ্রান্স’-এর কথা। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সাইকেল রেসগুলোর মধ্যে একটি। এই রেস ১৯০৩ সাল থেকে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ইউরোপের সবচেয়ে সেরা ও জনপ্রিয় সাইক্লিস্টদের নিয়ে। ফ্রান্স ও তার পাশের কিছু অঞ্চল নিয়ে এই রেসের ট্র্যাক তৈরি করা হয়। ১৯০৩ সালের পর থেকে দুটি বিশ্বযুদ্ধের সময় ছাড়া প্রতিবছরই হচ্ছে এই আয়োজন। তবে ২০২০ সালে এসে তৃতীয়বারের মতো স্থগিত হয়ে যায় ‘ট্যুর দ্য ফ্রান্স’ সাইকেল রেসের আয়োজন। প্রতিবছর জুলাই-আগস্ট মাসে তিন সপ্তাহ ধরে ধাপে ধাপে এই রেস অনুষ্ঠিত হলেও এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। মহামারি মোকাবিলায় স্থগিত হয়ে আছে সব ধরনের খেলাধুলা।
ফ্রান্সের সাইকেল রেস ছাড়া জুলাই মাসটা কল্পনাও করতে পারেন না সাইক্লিস্টরা। তাই আয়োজকেরা ভিডিও গেম প্রতিষ্ঠান ‘জুইফট’-এর সঙ্গে পরিকল্পনা করে খুঁজে বের করেন একটি ভিন্নধর্মী উপায়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় জুইফটের মাধ্যমে ট্যুর দ্য ফ্রান্স হবে ভার্চ্যুয়ালি। জুইফট মূলত একটি ইনডোর সাইক্লিং ভিডিও গেম অ্যাপ্লিকেশন। এতে সাইক্লিং করতে হলে স্মার্ট ট্রেনিং সাইকেলে বসে প্যাডেল চালাতে হয়। সামনের বড় স্ক্রিনে দেখা যায় সাইকেল ট্র্যাক। এতে নিজের পছন্দমতো স্থান বাছাই করে রেস করা যায়। এটি সাইক্লিস্টদের ট্রেনিংয়েই বেশি ব্যবহৃত হয়। ঘরে বসে এই সাইক্লিং করলেও ঘাম ঝরাতে হয় একেবারে বাস্তবেই। কারণ স্মার্ট ট্রেনিং সাইকেলটি বাস্তবের মতোই কাজ করে। এখানে বড় স্ক্রিনের পাশে সাইকেলের স্পিড, সাইক্লিস্টের স্ট্যামিনা সব দেখা যায়।
‘ভার্চ্যুয়াল ট্যুর দ্য ফ্রান্স’ ঘোষণার পর সাইক্লিস্টরা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়েন। কারণ ঘরে থেকে স্বাস্থ্যবিধিও পালন করা হবে আর জুইফটে সাইক্লিংও হবে একেবারে বাস্তবের মতোই। সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিবছরের মতো ঠিক সময়েই হবে এই আয়োজন। তবে প্রতিযোগীরা সবাই অংশগ্রহণ করবেন ভার্চ্যুয়ালি, জুইফট স্ক্রিনের সামনে। ৪ থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত ৬ ধাপের এই ভার্চ্যুয়াল সাইকেল রেসে অংশগ্রহণ করেন ট্যুর দ্য ফ্রান্সের একসময়ের বিজয়ী ইগান বার্নাল, ক্রিস ফ্রুম, গেরাইন্ট থমাসসহ আরও অনেক জনপ্রিয় সাইক্লিস্ট। ছয় দিনের এই রেসে প্রথম দুদিন রেস করতে হয়েছিল ওটাপিয়া নামের কাল্পনিক জগতের ট্র্যাকে। আর পরের দুদিন সাধারণ রাস্তা ও পাহাড়ে। বাস্তবে এই রেসে পুরুষ সাইক্লিস্টরা অংশ নিলেও ভার্চ্যুয়াল রেসে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল নারীদেরও। আর ছয় দিনের রেসই ছিল দলভিত্তিক।
বড় স্ক্রিনে কাল্পনিক এক ট্র্যাক। তুমি সাইকেলের প্যাডেল চালিয়ে এগিয়ে যাচ্ছ। তোমার গতি কত, সেটা দেখতে পাচ্ছো আবার স্ক্রিনে। সবাইকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত এগিয়ে চলছ তুমি। মাথার ওপর গনগনে সূর্য। ঘেমে নেয়ে অস্থির। পাশেই গভীর খাদ। একটু ভুল করলেই আর খুঁজে পাওয়া যাবে না তোমাকে আর তোমার সাইকেলকে। ‘ভার্চ্যুয়াল ট্যুর দ্য ফ্রান্স’ এতটাই বাস্তব ছিল যে সাইক্লিস্টরা নিজেদের রুমে কিংবা গ্যারেজে বসে সাইকেল চালিয়েই এ রকম ভাবতে শুরু করেছিলেন।
ছয় দিনের রেস শেষে নারী ও পুরুষদের দুটি দল বিজয়ী হলেও ট্যুর দ্য ফ্রান্সের বিখ্যাত হলুদ, সবুজ ও পোলকা ডটেড জার্সি পান বিভিন্ন দলের প্রতিযোগীরা। এই রেসের ভিডিও সম্প্রচারিত হয়েছিল বিভিন্ন অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে। তা থেকে আয়কৃত অর্থ প্রদান করা হয় দরিদ্র শিশুদের পড়াশোনায়।
‘ট্যুর দ্য ফ্রান্স’-এর রেস ভার্চ্যুয়ালি হলেও বাস্তব রেসের সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে আগস্টের শেষে কিংবা সেপ্টেম্বরের শুরুতে। পৃথিবী আবার সুস্থ হয়ে উঠলে সাইক্লিস্টরা আবার সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন পাহাড়, জঙ্গলে। আর আমি ফ্রান্সের সাইকেল রেসে না যেতে পারলেও সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারব আমার চিরচেনা রাস্তায়।
সূত্র : জুইফট