কার্টুন হোক আর একেবারে সত্যিকারের দৃশ্য হোক, মাঝেমধ্যে দু-একটা গাছ সবাইকেই আঁকতে হয়। আর সেটা জোড়াতালি দিয়ে বেশি দূর করা যায় না। সবচেয়ে বড় বিপদ যেটা হয় সেটা হলো সব গাছ দেখতে লাগে একই রকম। এবার সেটার কীভাবে সমাধান করা যায়, তার একটা উপায় দেখব আজ। প্রথম কাজ হলো সত্যিকারের কিছু গাছ দেখা। এটা না করলে আমাদের মনের মধ্যে যে একটা গাছের ছবি আছে, সেটাই আমরা বারবার এঁকে যাব। তাই অন্য রকম কিছু গাছ আগে আশপাশে খুঁজে দেখার চেষ্টা করি। একেকটা একেক রকম হলে ভালো। আর গাছ দেখতে গিয়ে এই প্রথম আমরা আবিষ্কার করব গাছ যে আসলে কত রকমের হতে পারে! এতদিন কেন সেটা দেখিনি সেটা ভেবেও খুব অবাক লাগবে তখন।
যেমন ওপরের গাছগুলো আর যা-ই হোক একেবারে একরকম নয়। প্রথমটা ঝোপানো আমগাছ। পরেরটা রেইনট্রিগাছ, এর পরেরটা দেবদারু। আমাদের নাম মনে রাখার দরকার নেই, খালি একেকটার আকার খেয়াল করি। একটা প্রায় গোল। একটা গোল কিন্তু নিচের দিকে আবার একটু বেঁকে গেছে। অন্যটা তো পুরো ত্রিভুজ। প্রথম প্রথম কিন্তু আমাদের চোখে পড়বে খালি পাতা, ডাল, শিকড়। কিন্তু যখন আমরা একটা গাছের দিকে তাকাব, একেবারে মোটা দাগে কোন আকারটা দেখা যাচ্ছে, মানে সেটা কি তিনকোনা? চারকোনা? নাকি ত্রিভুজ, নাকি একেবারে গোল? তখন কিন্তু সব বিশদ জিনিসপত্র না দেখে আমাদের চোখে খালি জ্যামিতিক আকারটাই চোখে পড়বে। এভাবে দেখতে শেখা আঁকা শেখার একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কাজটা কিন্তু সহজ নয়! যাহোক, আমরা এখানে কষ্টেসৃষ্টে ওপরের ছবিগুলো থেকে নিচের অবয়বগুলো খুঁজে বের করলাম।
আমগাছটা একটা বৃত্তের প্রায় পুরোটাই এসে নিচে কাটা পড়েছে। সেখান থেকে শাখা-প্রশাখার অংশটা একটা ছোট্ট ত্রিভুজ হয়ে সেখান থেকে আবার আয়তাকার কাণ্ড নেমে গেছে সোজা মাটিতে। একেবারে সহজ একটা অবয়বে এটাকে আটকে ফেলা গেছে। পরের রেইনট্রি প্রায় কাছাকাছি হলেও এটার নিচের দিক আগের আমগাছের মতো না। একটু বাঁকা হয়ে নেমেছে সেটা, আর মূল অবয়বটা থেকে বৃত্তাকার কিছু অংশ দুই দিক থেকে আবার নেই হয়ে গেছে হঠাৎ। সেটাকে আমরা আরও দুটি বৃত্তাকার দাগ দিয়ে কেটেছি। আর একেবারে ডান দিকের দেবদারু তো আরও সরেস, সে আর কিছুই নয়। একটা ভদ্র গোছের ত্রিভুজ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এভাবে কোনো কিছুর অবয়বটা আগে হালকা করে পেনসিলে এঁকে আটকে নিলে পরের কাজ কিন্তু সহজ হয়ে যায়।
প্রথমে জটিল ছবিগুলো আগে সরাই, খালি অবয়বগুলো রাখি। এই অবয়বের দাগগুলো আসলে পেনসিলে এঁকে নিলেই হবে।
এবার খালি ভেতরের জায়গাগুলো রং করে ফেলি ইচ্ছামতো। জলরঙে আঁকলে কাজটা অনেক সহজ হওয়ার কথা। রং পেনসিলে একটু সময় বেশি নিতে পারে। তবে মূল আইডিয়াটা হলো অবয়বটা ভরাট করা। চাইলে কিছু হালকা গাঢ় কাছাকাছি রঙের সাহায্যে কিছু পাতার মতো দাগাদাগি করে নেওয়া যায়।
পেনসিলের দাগ (এখানে বোঝানোর সুবিধার জন্য লাল করে আঁকা দাগ) সরিয়ে ফেলি।
এবং যারা আরও অনেক ভালো আঁকতে পারো, তারা চাইলে আরও কিছু পাতা এদিক-ওদিক দিয়ে বের করে দিতে পারো। কারণ, সত্যিকারের গাছ তো এমন নিরেট একটা অবয়ব হয় না। এদিক-ওদিক দিয়ে বেশ কিছু পাতা বের হয়ে থাকে। তাই সবশেষে কিছু পাতা গাছের নিচেও ফেলে রাখা যায়। শিকড়ের জন্য বা শাখা-প্রশাখার জন্য দু-একটা ডাল এদিক-ওদিক দিয়ে বের করে দিলেও ক্ষতি নেই।
পাতার কথা যেহেতু উঠলই, আমরা চট করে একটা ছোট্ট টিপস জেনে নিই। ধরা যাক, কেউ দাঁড়িয়ে আছে, তার পেছন দিয়ে গাছপালা দেখা যাবে। এখন এত এত গাছ আঁঁকা সহজ কথা নয়। কিন্তু আবার বোঝাতেও হবে যে সে বাড়ির বাইরে কোনো একটা বনে বা গাছের সামনে দাঁড়ানো। এটার উপায় হলো পেছনে খালি পাতার লাইন এঁকে দেওয়া। পাতার লাইন বলতে বোঝানো হচ্ছে ইংরেজি M অক্ষরের মতো যদি টানা কিছু M পাশাপাশি এঁকে যাই। পাশের ছবির ওপরেরটার মতো। তবে একেবারে খাড়া খাড়া সব M না এঁকে একটা এদিক-ওদিক করে দিলে ব্যাপারটা আরও সুন্দর লাগে। যেমন প্রথম গাছের পাতার লাইনটা। একইভাবে আরেকটা করা যায় ইংরেজি 3-এর মতো করে যদি টানা লাইন আঁকতে থাকি। তাহলে পাতা হবে গোল গোল। চাইলে এই দুটি একসঙ্গে একই দৃশ্যে রাখা যায়।
ওপরে একটা কার্টুন চরিত্রের পেছনে আমরা দুই ধরনের গাছের পাতার লাইন ব্যবহার করলাম, যে যার ইচ্ছামতো পাতার লাইন বেছে নিতে পারো। শর্টকাটে গাছ বোঝানোর এর চেয়ে সহজ উপায় আর নেই।
আপাতত এ পর্যন্তই থাকুক, বরং একটা বাড়িতে বসে করার কাজ দেওয়া যাক। তোমার আশপাশে থাকা অন্তত তিন রকমের তিনটি গাছ এঁকে পাঠাও। সেই সঙ্গে কোথায় সমস্যা হচ্ছে বা বুঝতে পারছ না, সেটাও জানাও। আমরা সবাই মিলে সেটার সমাধান করার চেষ্টা করব। গাছ কিন্তু আরও অনেক জটিল আকারেরও হয়। একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ সেগুলো আঁকা। আর হ্যাঁ, অবশ্যই যে গাছ আঁকবে সেটার নাম জেনে নেবে কারও থেকে। সঙ্গে লিখেও দেবে। আঁকাআঁকি চলুক তবে।