প্রিন্সটন থেকে ট্রেনে চেপে একবার কোথায় যেন যাচ্ছিলেন মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইন। একপর্যায়ে কন্ডাক্টর এল টিকিট চেক করতে। আইনস্টাইন তখন নিজের পকেটে আঁতিপাঁতি করে টিকিট খুঁজতে লাগলেন। না পেয়ে শেষে যখন সিটের তলায় খুঁজতে আরম্ভ করলেন, তখন কন্ডাক্টর বলল, ‘ড. আইনস্টাইন, আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে বসুন। টিকিট না দিলেও চলবে।’ আইনস্টাইন জবাব দিলেন, ‘তোমার চললেও আমার তো চলবে না বাপু। আমার কোন স্টেশনে নামা দরকার সেটা বেমালুম ভুলে গেছি, টিকেটের গায়ে লেখা দেখলে মনে পড়ত!’
আইনস্টাইন এমন ভুলোমনা হলেও তাঁর কীর্তি কিন্তু ভোলার নয়। তাঁর স্মরণে আয়োজিত হয় কত সভা-সমাবেশ আর আলেখ্যানুষ্ঠান। বুড়ো বুড়ো বিজ্ঞানীরা গম্ভীর মুখে সব কটমটে বৈজ্ঞানিক বিষয়বস্তু আলোচনা করেন। এমনটা হতে পারত এবারের ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স ফেস্টিভ্যালেও (IISF)। কিন্তু ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ড. হর্ষবর্ধন ভাবলেন, সেই ১৯৩০ সালে চন্দ্রশেখর রমনের পর আজ অবধি কোনো ভারতীয় বিজ্ঞানের কোনো শাখায় নোবেল পাননি। শিশুরা কি বিজ্ঞানে আগ্রহ হারাচ্ছে? তাদের বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট করতে তাহলে অন্য রকম কিছু করা দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। তাঁর উদ্যোগে গত ১০ ডিসেম্বর ভারতের পিউসা রোডের জাতীয় ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে প্রায় ৫৫০ শিক্ষার্থী আইনস্টাইনের বেশে হাজির হলো, গড়ে ফেলল বিশ্ব রেকর্ড। অষ্টম ও নবম শ্রেণিপড়ুয়া এই খুদে শিক্ষার্থীদের পরনে ছিল সবুজ সোয়েটার আর ঝাঁটার মতো গোঁফের সঙ্গে বিশাল সাদা উইগ। এনপিএল অফিসার ও গিনেস পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে এ সম্মেলনের ভিডিও ধারণ করা হয়, তা পরবর্তী সময়ে পাঠানো হয় লন্ডনের গ্লোবাল হেডকোয়ার্টারে।
মজার ব্যাপার হলো, উপস্থিত শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ নাকি জানতই না সেদিন বিশ্ব রেকর্ড গড়া হবে! এক ছাত্র তো বলেই বসল, আমি তো ভেবেছিলাম এখানে থিওরি অব রিলেটিভিটি আর ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্টের ওপর আলোচনা সভা হবে!
তবে ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরে খুশি ওরা সবাই। মানবস্থলি বিদ্যালয়ের গাভী আহুজা আর তার বন্ধু সাহেজ প্যাটেল তো সরাসরি আইনস্টাইনের বাণীই উদ্ধৃতি দিয়ে বসল, জ্ঞানের চেয়ে কল্পনাশক্তি উত্তম। জ্ঞান সীমাবদ্ধ, কল্পনার কোনো সীমা নেই।
এই ফাঁকে জানিয়ে রাখি, খুদে আইনস্টাইনের সমাবেশ কিন্তু এটিই প্রথম নয়। আগের বিশ্ব রেকর্ডটি গড়া হয়েছিল এর মাত্র এক বছর আগে, ক্যালিফোর্নিয়ার ব্ল্যাক পাইন স্কুলের ৩২৪ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে।
আগের রেকর্ড ভাঙতে পেরে উচ্ছ্বসিত ড. হর্ষবর্ধন আশাবাদ ব্যক্ত করেন, অচিরেই আরও প্রতিভাবান ভারতীয় বিজ্ঞানীর আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
সেই ৫৫০ শিক্ষার্থী কিন্তু এরই মধ্যে ভীষণ আগ্রহী হয়ে পড়েছে বিজ্ঞানের প্রতি। আইনস্টাইন সম্পর্কে জানার পাশাপাশি তারা পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছে পদার্থবিদ্যা এমনকি থিওরি অব রিলেটিভিটি নিয়েও।
ড. বর্ধনের আশা তাহলে বৃথা যাচ্ছে না, কী বলো?
তথ্যসূত্র: আইআইএসএফ ওয়েবসাইট