কোন আইসক্রিম আবিষ্কারের পেছনে কিন্তু রয়েছে মজাদার এক গল্প। ১৯০৪ সাল নাগাদ সেন্ট লুইসের একটা মেলায় আইসক্রিম বিক্রেতা প্রতিদিনের মতো মেলায় আইসক্রিম বিক্রি করছিলেন। তিনি হঠাৎ লক্ষ্য করলেন যে তাঁর আইসক্রিম পরিবেশনের প্লেট ফুরিয়ে এসেছে প্রায়। কিন্তু মেলায় তো ক্রমেই ভিড় বাড়ছে। এমন সময় তাঁর সাহায্যে এগিয়ে এলেন সিরিয়া থেকে আগত এক ওয়াফেল (কোন চিপস) বিক্রেতা। তিনি তার চিপসের মাঝে আইসক্রিম পরিবেশনের অনুমতি দেন। এরপর মেলায় দারুণ সাড়া ফেলে এই কোন আইসক্রিম। এখন অবশ্য সেই কোন আইসক্রিমকে সাধারণভাবে বানিয়ে সেগুলোর উপাদানগুলোকে বিভিন্ন স্তর সাজিয়ে নানা রকমের কোনে পরিবেশন করা হয়।
বিশাল কারখানার বাইরে আইসক্রিমের স্বাদ কিন্তু প্রকৃতিতেও রয়েছে। হাওয়ালি শহরে আইসক্রিম শিম নামের একধরনের ফল পাওয়া যায়, যার স্বাদ অনেকটা ভ্যানিলা আইসক্রিমের মতো। স্থানীয় মানুষেরা এটাকে ‘বানরের তেঁতুল’ বলেও চেনে। তবে এ আশা কিন্তু করাই যায় যে একদিন আমাদের দেশের মাটিতেও এমন গাছের অভাব থাকবে না।
আইসক্রিম খেয়ে গলাব্যথা, মাথাব্যথা, টনসিল ফুলে যাওয়া, কাশিসহ নানা রোগের আশঙ্কা থাকে। যদিও ১৯৪০ সালের দিকে গবেষকেরা ধারণা করছিলেন, আইসক্রিম খেলে পোলিও হয়। তবে আরও পরে জানা যায়, গরমে পোলিও বেশি হয়। অন্যদিকে বাচ্চারা গরমে আইসক্রিম বেশি খায়। এ কারণে এমন ধারণা জন্মালেও পরে তা উড়িয়ে দেয় আধুনিক বিজ্ঞান। তবু তোমরা কিন্তু রাস্তার পাশের খোলা আইসক্রিম খাবে না। কারণ, সেগুলো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বানানোর পাশাপাশি পরিবেশনও করা হয় অস্বাস্থ্যকরভাবে।
গোটা বিশ্বে আইসক্রিমের সমাদর গ্রীষ্মে বাড়লেও কানাডার মানুষ কিন্তু শীতেই সবচেয়ে বেশি আইসক্রিম খায়। নানা ধরনের আর ফ্লেভারের আইসক্রিমের ভেতরে রয়েছে কিছু অদ্ভুত ধরনের ফ্লেভার। যেমন: এভোকেডো, জেলেপিনো, আদা, মিষ্টিকুমড়া, বেকন, বিয়ার, সানডায়ে, গ্যালেটো, সরবাট, পেপারনি পিৎজা।
আইসক্রিমের স্বাদ নিয়ে কিন্তু কিছু মানুষ অনেক জটিলভাবে চিন্তা করতে পারেন। এমন একজন হলেন জন হ্যারিসন। বিশ্ববিখ্যাত ড্রেয়েরস আইসক্রিম কারখানার আইসক্রিমের স্বাদ চেখে দেখেন তিনি। আর এ জন্য তাঁর জিবের বিপরীতে প্রায় এক মিলিয়ন ডলার বিমা করাতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। তুমিও চেষ্টা করতে পারো আইসক্রিমের স্বাদ নিয়ে আরও ভালো বিশ্লেষক হয়ে উঠতে। তাহলে হয়তো বিনা মূল্যে গোটা বিশ্বের নামীদামি কারখানার সুস্বাদু আইসক্রিম খাওয়ার সুযোগ পেয়ে যেতে পারো তুমিও। তবে বেশি বেশি আইসক্রিম খাওয়ার কারণে কেউ যদি তোমায় মোটা বলে খ্যাপানোর চেষ্টা করে, তুমিও পারো তাকে বুড়ো আঙুল দেখাতে। কারণ, গবেষকদের মতে, পরিমিত আইসক্রিম খেলে মেদ কমারও সুযোগ রয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোন আইসক্রিম বানানো হয় ইতালিতে। মাইক্রো ডেলা ও অ্যান্ড্রেয়ার তৈরি এই কোন আইসক্রিমের উচ্চতা ছিল প্রায় ৯ ফুট।
এক স্কুপ আইসক্রিম খেতে কতবার চাটতে হয় তোমাকে? আরেহ বাপু, আইসক্রিম হাতে আসার পর আর এত কিছু মনে রেখে গুনে গুনে খাই নাকি? হ্যাঁ, সেটা কি আর সম্ভব বলো? তবে গবেষকেরা কিন্তু ঠিকই এই প্রশ্নের উত্তর বের করেছেন। এক স্কুপ আইসক্রিম শেষ করতে প্রায় পঞ্চাশবার চাটতে হয়। তবে এই সংখ্যা বাড়ে কমে তাপমাত্রা আর আইসক্রিমের ভিন্ন ভিন্ন উপাদান অনুসারে। অন্যদিকে আইসক্রিমের স্কুপ বানাতে হলে সেটাকে প্রায় ৬-১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপে রাখতে হবে। সুস্বাদু এই আইসক্রিম বানাতে কিন্তু কম মাল-মসলার প্রয়োজন হয় না। এক গ্যালন আইসক্রিম তৈরি করতে হলে প্রায় ১২ গ্যালন দুধ ব্যবহার করা হয়। এই হিসাবে একটি গাভি তার সারা জীবনে যে পরিমাণ দুধ দেয় তা দিয়ে প্রায় ৯ হাজার গ্যালন আইসক্রিম বানানো সম্ভব। ১৯৮৫ সালে সানডায়ে ফ্লেভারের সবচেয়ে বড় আইসক্রিম বানানো হয় ক্যালিফোর্নিয়ায়। এর ওজন ছিল প্রায় ৪ হাজার ৬৬৭ গ্যালন।
চকলেট খেয়ে দাঁতে পোকা ধরিয়ে ফেলা বন্ধুদের বলছি, আইসক্রিমের জগতে কিন্তু চকলেটের চেয়ে ভ্যানিলার চাহিদা বেশি। যদিও ভ্যানিলার আগে চকলেটের প্রচলন শুরু হয়েছিল। তবে আইসক্রিমের ওপরের অংশ সাজাতে কিন্তু আবার এগিয়ে আছে চকলেট সিরাপ।