খেয়াল করে দেখবে, প্রতিটি ক্লাসেই কিছু ‘বিদ্যাসাগর’ থাকে। যারা নিয়ম করে সামনের বেঞ্চে বসে এবং স্যার যা বলেন, তা দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন, ইনভার্টেড কমাসহ খাতায় তুলে ফেলে। সাধারণ ভাষায় আমরা তাদের ‘ভালো ছাত্রছাত্রী’ বলে থাকি। আর যে জিনিসটা তারা খাতায় তোলে, সেটাকে বলি ক্লাসনোটস। অর্থাৎ ক্লাসনোটস হলো শিক্ষতের মুখনিঃসৃত বাণী, যা পরীক্ষার খাতায় লিখলে তুলনামূলক একটু বেশি নম্বর পাওয়া যায়। তবে ক্লাসনোটস নেওয়ার বেশ কিছু অসুবিধাও আছে। পুরো ক্লাসের সময়টুকু থাকতে হবে মনোযোগী। এর সঙ্গে ফিসফিস করে গল্প করা, ওকে একটা চিরকুট পাঠানো, পাশের মেয়েটার চুল নিয়ে মহাকাব্য লিখে ফেলা একটু কঠিন। হয় ক্লাসনোটস, না হয় দুষ্টুমি।
নোটস নেওয়ার সময় বারবার স্যারকে ইন্টারাপ্ট না করাই ভালো। এতে অন্যের এবং স্যারের অসুবিধা হতে পারে। কোনো বিষয় না বুঝলে পরে স্যারকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়ো।
হলিক্রস কলেজের তানজিনার অভিজ্ঞতার সঙ্গে হয়তোবা অনেকের অভিজ্ঞতাই মিলে যাবে। ‘প্রথম প্রথম অনেকের দেখাদেখি ক্লাসে দুষ্টুমি-ফাজলামি বাদ দিয়ে ভালো ছাত্রীর মতো ক্লাসনোটস নিয়েছি, কিন্তু পরীক্ষা শেষে দেখা গেল ক্লাসনোটসে জং ধরেছে। একবারও ওগুলো স্পর্শ করা হয়নি। কাজেই নো ক্লাসনোটস, কান দিয়ে ঢুকে মাথায় যা থাকে ততটুকুই সম্বল।’ নটর ডেম কলেজের তানভীরের কথাটাও কিন্তু ফেলনা নয়। ‘ভালো রেজাল্টের জন্য ভালো স্যারদের ক্লাসনোটসের বিকল্প নেই। ভালোভাবে ক্লাসনোটস ফলো করলে অর্ধেক পড়া ক্লাসেই শেষ হয়ে যায়। বাসায় নিজে নোটস করতে এই ক্লাসনোটস ব্যাপক সাহায্য করে।’
তবে যে যা-ই বলুক না কেন, ক্লাসনোটস কিন্তু আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। বলছি না যে প্রত্যেক ক্লাসে নাক-মুখ গুঁজে ক্লাসনোটস নাও; বরং বলছি একটু কৌশলী হও। আসলে দেখবে গল্পগুজবও হবে আবার স্যারের বলা মূল কথাটুকুও ঠিকই উঠে যাবে খাতার পাতায়।
ভবিষ্যতে বুঝতে পারার সুবিধার্থে প্রথমেই খাতার ওপর ডান কোনায় সাবজেক্টের নাম, শিক্ষকের নাম, কয়টার ক্লাস, কত তারিখ লিখে ফেলো এবং কোন বিষয় নিয়ে শিক্ষক আজ লেকচার দেবেন, সেটাও টুকে ফেলো।
প্রথম সারিতেই বসতে হবে এমন কথা বলছি না। বসার ক্ষেত্রে এমন জায়গা বেছে নাও, যেখান থেকে শিক্ষকের কথা স্পষ্ট শোনা যায়।
শিক্ষক তো কত কথাই বলেন, সবই কি খাতায় তুলতে হবে? না। তার আগে তোমাকে অবশ্যই বুঝতে হবে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ। সেটা বুঝতে তিনি যে বিষয়ে লেকচার দেবেন, সে বিষয়ে যদি আগে থেকেই একটু চোখ বুলিয়ে আসো তাহলে তোমার জন্য সুবিধা হবে। কোন পয়েন্ট নোট করবে, সেটাও বুঝতে হবে।
কোনো পয়েন্ট বাদ পড়লে সেটার জন্য পাশের জনকে সঙ্গে সঙ্গেই জ্বালিয়ে মেরো না। একটু জায়গা ফাঁকা রেখে পরের অংশটুকু লিখে যাও। ক্লাস শেষে বাদ পড়া অংশটুকু বন্ধুর খাতা থেকে টুকে নাও।
হড়বড় করে লাইন বাই লাইন লেখার দরকার নেই। সারাংশটুকু নিজের ভাষায় টুকে নাও আর বাকিটুকু নিজের রাখো নিজের মাথায়। মূল কথা হলো আগে তোমাকে বিষয়টা বুঝতে হবে। তারপর সেটা যাতে ভুলে না যাও, এর জন্য নোটস। তবে কোটেশন বা সংজ্ঞা নিজের ভাষায় না লেখাই তোমার জন্য মঙ্গল।
নোটস নেওয়ার সময় বারবার শিক্ষককে বিরক্ত না করাই ভালো। এতে তাঁর তো অসুবিধা হয়ই, অন্যরাও বিরক্ত হতে পারে। কোনো বিষয় না বুঝলে পরে শিক্ষককে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়ো।
একেবারে নতুন কোনো বানান হলে শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করতে পারো। তিনি যদি বোঝেন এটা একটু কঠিন, তাহলে মুখে মুখে বলবেন বা বোর্ডে লিখে দেবেন।
নোটস নেওয়ার সময় ডায়েরি থেকে খাতা ব্যবহার করাই সুবিধাজনক। আর আলাদা কাগজে নোটস নেওয়াও কাজের কথা নয়। দুদিন পরেই ওটাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
আমাদের অনেক ব্যস্ত শিক্ষার্থী আজকাল আবার ক্লাসে যাওয়ারও সময় পায় না। সে ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন রেকর্ডার বেশ কাজের। তবে নির্দিষ্ট সময় চলার মতো ব্যাটারি বা চার্জ আছে কি না খেয়াল করো। যান্ত্রিক ত্রুটির দিকেও লক্ষ রেখো, আদৌ রেকর্ড হচ্ছে কি না।
রেকর্ডার স্যারের সামনে রেখে নিজে তুমুল গল্পগুজবে মেতে থেকো না। তাহলে পাশের জনের অর্থাত্ খাতা-কলমই যার ভরসা, তার সমস্যা হতে পারে।