ঢাকার সাইক্লিস্টদের প্রিয় রাস্তার নাম জিজ্ঞেস করলে প্রায় সব সাইক্লিস্ট বলবেন হাতিরঝিল কিংবা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর নাম। ব্যস্ত রাজধানীতে তুলনামূলক ভালো রাস্তা আসলে খুবই কম, যেখানে সাইক্লিং করা যায় ভালোভাবে। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ বা হাতিরঝিলকে সেই হিসেবে সাইক্লিংয়ের জন্য ‘তুলনামূলক’ ভালো রাস্তা বলা যায়।
ভালো রাস্তা খুঁজলে হয়তো আরও পাওয়া যাবে। কিন্তু অ্যাডভেঞ্চার না করলে কেউ কেউ আবার সাইক্লিংয়ের মজাই পান না। পৃথিবীতে এমন কিছু সাইক্লিং রুট আছে, যেখানে সাইকেল চালালে একই সঙ্গে পাহাড়ে চড়াও হয়ে যায়। সেসব রাস্তা সব সময় থাকে সাইক্লিস্টদের পছন্দের তালিকায়। আজ শোনাব তেমন কিছু সাইক্লিং রুটের গল্প। দেখো তো, তোমার পছন্দ হয় কোনটি।
দ্য ফ্রেন্ডশিপ হাইওয়ে (চীন-নেপাল)
চীন–নেপাল সীমানা এলাকায় এই হাইওয়ের অবস্থান। তিব্বত ও চীনের লাসা শহরের সংযোগমাধ্যম এই হাইওয়ে। চীন-নেপাল হাইওয়ে নামেও পরিচিত এই রাস্তা। পাহাড়ের গা ঘেঁষে যাওয়া মসৃণ এই রাস্তার দৈর্ঘ্য ৮০৬ কিলোমিটার (প্রায় ৫০১ মাইল)।
তবে এটা মানতে হবে, এই হাইওয়েতে সাইক্লিং সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তিন ভাগে ভাগ করা এই হাইওয়ে পাড়ি দিতে হলে একপর্যায়ে তোমাকে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার মিটার ওপরে সাইকেল চালাতে হবে। এত বিশাল উচ্চতায় পৌঁছাতে পারলে পরিষ্কার আবহাওয়ায় দেখা মিলবে এভারেস্টের কিছু অংশ। পাহাড়ের পাশে বিশাল উচ্চতার এই হাইওয়েতে ভয় পাওয়ার মতো আরও একটি ব্যাপার আছে। সীমান্তের টানা ১ হাজার ৭৫০ মিটার রাস্তা নিচের দিকে নেমে গেছে। প্রায় ছয় ফুট দৈর্ঘ্যের রাস্তা বেয়ে নামার সময় স্নায়ুচাপ ও সাইকেলের গতি দুটিই ধরে রাখা চ্যালেঞ্জের!
গ্রেট ডিভাইড মাউন্টেন বাইক রুট (উত্তর আমেরিকা)
সবচেয়ে উঁচু পাহাড় মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার। কানাডা আর মেক্সিকোর মাঝখানে থাকা গ্রেট ডিভাইড মাউন্টেন বাইক রুটটি পাড়ি দিতে সাইকেল চালিয়ে উঠতে হবে ৬১ হাজার মিটার, যা এভারেস্টের উচ্চতার তুলনায় প্রায় সাত গুণ!
কানাডার আলবার্টা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো পর্যন্ত চলে যাওয়া এই রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৯৬২ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ উচ্চতা হিসাব করলে এই রাস্তা পাড়ি দেওয়ার একপর্যায়ে অবস্থান করতে হবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ৬৩১ মিটার ওপরে।
বিশাল এ পথ পাড়ি দিতে রীতিমতো পর্বতারোহণের মতোই প্রস্তুতি নিতে হয় সাইক্লিস্টদের। কঠিন এই রাস্তার অনেকটা বনের ভেতর দিয়ে চলে গেছে। তাই এই রাস্তায় ভালুক বা সিংহের দেখা মিলতেই পারে। বন থেকে পাহাড়, তুষার থেকে বৃষ্টি—সবকিছুর দেখা মিলবে এই রুটে। সাহসী ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় সাইক্লিস্টরা চাইলেও জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের বাইরে আবহাওয়ার কারণে এই রুটে সাইকেল চালাতে পারেন না। তবে এ সময় কখনো কখনো আবহাওয়া বাগড়া দিতে পারে। একই সঙ্গে ভয়ংকর ও সেরা এই রুটটি বিশ্বজুড়ে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের প্রিয়।
কল্লে দিলে ফিনেস্ত্রে (ইতালি)
পাহাড়ের আশপাশের রুটের কথা তো জানলে। পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া সাইক্লিং রুটও আছে পৃথিবীতে। ইতালির পিয়েদমন্তের একটি পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে এই রাস্তা। সর্বোচ্চ ২ হাজার ১৭৮ মিটার উচ্চতায় সাইক্লিং করা সম্ভব এই রুটে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস অবধি খোলা থাকে ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রাস্তা। বিশ্বজুড়ে সাইক্লিস্টদের পছন্দের রাস্তাগুলোর মধ্যে এটি বেশ ওপরে জায়গা করে নিয়েছে।
পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া মসৃণ এই পথে সাইকেল চালানোর সময় চোখে পড়বে আশপাশের পাহাড়গুলো। সাইক্লিস্ট ছাড়াও পর্যটকেরাও ইতালির এই জায়গাটি বেশ পছন্দ করেন। সাইক্লিং গ্র্যান্ড ট্যুরের প্রথম রেস জিরো ডি’ইতালিয়ার রুট হিসেবে চারবার ব্যবহার করা হয়েছে এই রাস্তা। বুঝতেই পারছ এ পাহাড়ি রাস্তার আন্তর্জাতিক কদর কতটা।
সাইকেল চালিয়ে হাতিরঝিলের ব্রিজে ওঠাই অনেকের জন্য কষ্ট হয়ে যায়। তবে ভেবে দেখো, এত উঁচু রাস্তায় চড়া কতটা কঠিন। হাতিরঝিলের ব্রিজ দিয়েই প্র্যাকটিস চালাতে থাকো আপাতত। ইংরেজি একটা প্রবাদ আছে—প্র্যাকটিস মেকস পারফেক্ট। একদিন হয়তো এই রাস্তাগুলোয় সাইক্লিং করা তোমার জন্য ডাল-ভাত হয়ে যাবে।