কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় ছোট্ট খুকু কাঠবিড়ালির খাদ্যের বহর শুনে বলেছিল:
‘ছোঁচা তুমি! তোমার সঙ্গে আড়ি আমার! যাও!’
খুকুমণি কাঠবিড়ালির সঙ্গে আড়ি নিলেও ড্যানি কনার কিন্তু আড়ি নিতে পারেননি কাঠবিড়ালিদের সঙ্গে; বরং মাতৃস্নেহে লালনপালন করছেন তাদের।
ভাবছ, ড্যানি কনারটা আবার কে? আচ্ছা, তাহলে সব খুলেই বলি।
পুরো নাম ড্যানিয়েল কনার। ইংল্যান্ডের একজন প্রাণিবিদ্যাবিশারদ। পাশাপাশি বন্য প্রাণীদের ছবিও তুলে থাকেন। তিন মাস ধরে লন্ডন থেকে উত্তর সুইডেনে বাস করছেন তিনি। এরই মধ্যে করা শুরু করেছেন বেশ কিছু চমকপ্রদ কাজ।
কনার বন্য প্রাণীদের ভালোবাসেন। তাদের চলাফেরাসহ অন্য কাজগুলো যেন সাধারণ মানুষও দেখতে পায়, তাই তিনি সেগুলো ক্যামেরাবন্দী করেন। একদিন এক সুন্দর সকালে বনের মধ্যে ছবি তুলতে গিয়ে তার সঙ্গে পরিচয় হয় একটা লাল রঙের কাঠবিড়ালির। তিনি আদর করে কাঠবিড়ালিটির নাম দেন ‘রেমি’। কারণ, কাঠবিড়ালিটি দেখেই তাঁর ‘র্যাটাটুলি’ অ্যানিমেশন মুভির সেই রাঁধুনি ইঁদুরের কথা মনে পড়েছিল। এরপর থেকে তিনি প্রায়ই রেমির ছবি তুলে আনতেন।
মাস দেড়েক আগে বনে গিয়ে ড্যানি তাঁর প্রিয় রেমিকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখলেন। কোনো এক গাড়ির ধাক্কায় সে মারা গেছে!
ড্যানি রেমির মৃত্যুতে খুবই দুঃখ পান। রেমি তাঁর প্রিয় কাঠবিড়ালি ছিল। তার ওপর রেমির বাসায় কিছু বাচ্চা ছিল। তিনি ভাবতে থাকেন, বাচ্চাগুলোর কী হবে। বাচ্চাগুলোকে বনের মধ্যে খুঁজতে থাকেন ড্যানি। বনের মধ্যে কাঠবিড়ালির বাসা খুঁজে বের করাটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার ছিল। তবে সৌভাগ্যবশত সে রেমির বাচ্চাগুলোকে খুঁজে পায়। চারটা বাচ্চা ছিল কাঠবিড়ালিটির। বাচ্চাগুলো এত ছোট ছিল যে এগুলো একা বাঁচতে পারত না। তিনি বুঝতে পারলেন, মা ছাড়া এগুলো মারা যাবে, ওদের অবশ্যই আগলে রাখতে হবে। তাই ড্যানি এগুলোকে মায়ের মতো দেখাশোনা করতে শুরু করলেন।
মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে ড্যানি ওদের বিশ্বস্ততা অর্জন করে ফেললেন। তিনি প্রতিদিন বাচ্চাদের সঙ্গে চার থেকে ছয় ঘণ্টা সময় কাটান। এখন বাচ্চাগুলো তাঁর গলার স্বরও চিনে ফেলেছে। তিনি বাচ্চাগুলোকে সূর্যমুখীর বীজ, চিনাবাদাম, আপেল, নাশপাতি খাওয়ান। পাশাপাশি তিনি বাচ্চাগুলোর দারুণ সব ছবি তুলে টুইটারে শেয়ার করেন।
সম্প্রতি তাঁর শেয়ার করা একটি বাচ্চার ‘কুড়মুড়’ শব্দ করে বাদাম খাওয়ার ভিডিও টুইটারে ১২ মিলিয়নের বেশি মানুষ দেখে ফেলেছে। তিনি টুইটের মাধ্যমে বাচ্চাগুলো সম্পর্কে তাঁর অনুভূতি জানান। দুপুরের পর বনে গিয়ে চিৎকার করে ওদের ডাকেন তিনি, তখন ওরা ঘুমিয়ে থাকে। ড্যানির গলার আওয়াজ পেয়ে ওরা গাছ থেকে নেমে আসে। তিনি ওদের খাওয়ান, ওদের বেড়ে ওঠার ছবি তোলেন। এভাবে কয়েক ঘণ্টা পর বাচ্চাগুলো গাছে ফিরে যায় ঘুমানোর জন্য।
ড্যানি মনে করেন, বাচ্চাগুলো খুব দ্রুত স্বনির্ভর হবে। নিজের খাবার নিজেরাই সংগ্রহ করতে পারবে। তিনি দেখেছেন, বাচ্চাগুলো খাবার জমিয়ে রাখছে, যা তাদের কেউ শেখায়নি। কাঠবিড়ালির অভিযোজনক্ষমতা দারুণ। তারা দ্রুত সবকিছু শিখে নেয়। বাচ্চাগুলো খারাপভাবে জীবন শুরু করেছিল, কিন্তু ড্যানির মাতৃসুলভ আচরণে এখন তারা অনেক ভালো আছে।
আমাদের আশপাশেও কিন্তু অনেক প্রাণী আছে, যারা অসহায়। আমরা চাইলে সেই প্রাণীগুলোর যত্ন নিতে পারি। কারণ, পৃথিবীটা ওদেরও। একটু ভালোবাসা দিলে দেখবে ওরাও কেমন তোমার বন্ধু হয়ে যায়।