আধুনিক বিজ্ঞানকে যেসব মহারথী দারুণ থেকে বিস্ময়কর করে তুলেছেন, তাঁদের পূর্বসূরিদের একজন লেওনার্দো দা ভিঞ্চি। ‘মোনালিসা’ বা ‘দ্য লাস্ট সাপার’ চিত্রকর্মের জন্য বিখ্যাত হলেও লেওনার্দো দা ভিঞ্চির বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিভাবনা এখনকার আধুনিক মানুষকে প্রতিনিয়ত বিস্মিত করে যাচ্ছে। ১৪৫২ সালের ১৫ এপ্রিল মধ্যযুগের অন্যতম আলোকিত মানুষ লেওনার্দো দা ভিঞ্চি জন্মগ্রহণ করেন। কি গণিত, কি চিত্রকর্ম, কি প্রকৌশল, কি স্থাপত্য—সবকিছুতেই ছিল তাঁর দারুণ আগ্রহ। তিনি সেই সময়ে এমন কিছু প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনের নকশা করেছিলেন, যা এই একুশ শতকেও আলোচিত। লেওনার্দো দা ভিঞ্চির অনেক কল্পনা এখন বাস্তবতা। সেগুলোই থাকছে কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য।
যন্ত্রমানবের নকশা
‘ভবিষ্যৎ কি রোবটদের দখলে?’ এটা তো এখন বিজ্ঞান দুনিয়ার বেশ আলোচিত বিষয়। ট্রান্সফর্মার, রোবোকপ, আয়রনম্যান সিনেমা যারা দেখেছ, তারা রোবট কিনা করে তা আন্দাজ করতে পারো। এখন যন্ত্রমানবদের নিয়ে হাজারো গল্প-সংবাদ শুনলেও তিন-চার শ বছর আগের বাস্তবতায় তা ছিল অসম্ভব এক আষাঢ়ে গল্প। মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যবচ্ছেদ নিয়ে দারুণ আগ্রহ ছিল ভিঞ্চির। তিনি দারুণভাবে বিশ্বাস করতেন যন্ত্রের মাধ্যমে মানব শরীরের মতো কাজ করা যায়। সেই বিশ্বাস থেকেই ভিঞ্চি মধ্যযুগের নাইটদের মতো পোশাক পরা এক রোবট তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়। সেই রোবট নাকি এখনকার রোবটদের মতোই চলাফেরা করতে পারত।
ভিঞ্চির প্যারাস্যুট
এখন তো আকাশে ভাসতে দারুণ এক মাধ্যম প্যারাস্যুট। মধ্যযুগে প্যারাস্যুটের নামগন্ধও ছিল না। সেই সময় উঁচু পাহাড় থেকে লাফিয়ে নামতে একটি প্যারাস্যুটের নকশা করেছিলেন ভিঞ্চি। সেটা আধুনিক প্যারাস্যুটের মতো অর্ধবৃত্তাকার ছিল না, ত্রিভুজাকৃতির নকশা ছিল প্যারাস্যুটটির। ২০০০ সালে একদল প্রকৌশলী ভিঞ্চির নকশা করা প্যারাস্যুট তৈরি করে দারুণ সাফল্য পেয়েছিলেন। সাধারণ প্যারাস্যুটের চেয়ে ভিঞ্চির নকশার প্যারাস্যুটকে দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
হেলিকপ্টার নকশা
চারজন মানুষ মিলে চালানো যায় হেলিকপ্টারের মতো এমন এক উড়ন্ত যানের নকশা করেছিলেন লেওনার্দো দা ভিঞ্চি। সেই নকশার যানটি এখনকার হেলিকপ্টারের মতোই দেখা যায়। এই নকশাটিকে আধুনিক প্রকৌশলীরা ভিঞ্চির শ্রেষ্ঠ নকশাগুলোর একটি দাবি করে থাকেন। প্রকৌশলী ভিঞ্চি বেশ সময় নিয়ে তাঁর সেই হেলিকপ্টারের মতো যানটির নকশা করেছিলেন।
যন্ত্রদানব ট্যাংকের নকশা
শুধু যন্ত্রমানবই নয়, যন্ত্রদানব ট্যাংকেরও নকশা করেছিলেন লেওনার্দো দা ভিঞ্চি। ট্যাংকের মতো দেখতে সেই যন্ত্র চালাতে চারজন মানুষের প্রয়োজন হতো। সেই যানের নকশায় বেশ কটি কামান ছিল, যা কিনা আজকের আধুনিক ট্যাংকের মতো দেখাত।
স্বয়ংক্রিয় মেশিনগান নকশা
একে-৪৭ রাইফেলটির নাম কে শোনেনি? লেওনার্দো দা ভিঞ্চিও এক মেশিনগানের নকশা কল্পনা করেছিলেন। স্বয়ংক্রিয় সেই মেশিনগান ১১টি ব্যারেল থেকে একসঙ্গে পরপর তিনবার গুলি করার চিন্তা করেছিলেন ভিঞ্চি।
সেই স্প্রিংচালিত গাড়িই এখন ঘড়ি
লেওনার্দো দা ভিঞ্চি সেই পনেরো শ শতকে এমন এক গাড়ির নকশা করেছিলেন, যা এখনও বিস্মিত করে সবাইকে। এখন তো ঘড়িসহ অনেক যন্ত্রে আমরা স্প্রিংয়ের হরহামেশা ব্যবহার দেখি। সেই সময় তিনি স্প্রিংচালিত এক গাড়ির নকশা এঁকেছিলেন। ভিঞ্চির আঁকা নকশায় দেখা যায়, স্প্রিংচালিত সেই গাড়ি নিজেই চলতে পারে। অনেক প্রকৌশলী ভিঞ্চির আঁকা সেই নকশার যন্ত্রকে প্রথম যান্ত্রিক কম্পিউটার হিসেবে সম্মাননা দিয়ে থাকে।
বসফরাসের সেই সেতু এখন নরওয়েতে
১৫০২ সালে অটোমান সুলতান দ্বিতীয় বায়েজিদের জন্য বসফরাসে ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যের এক বিশাল সেতুর নকশা করেন লেওনার্দো দা ভিঞ্চি। সুলতানের ধারণা ছিল এই সেতু কোনো দিনও বানানো যাবে না। ২০০১ সালে নরওয়েতে একদল স্থপতি সেই নকশায় একটি সেতু তৈরি করে ভিঞ্চির কল্পনাকে বাস্তবে নিয়ে আসেন।