বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। সেটা কোনো নতুন ঘটনা নয়। বৃষ্টি সাধারণত বাইরেই পড়ে। কিন্তু একি! জানালায় ঠকঠক শব্দ হচ্ছে, তা-ও জোরে জোরে। মনে হচ্ছে যেন রাক্ষসের ভাই খোক্কসের দল জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকবে। এটা অবশ্যই বিশেষ ঘটনা। আর এই বিশেষ ঘটনা কিন্তু সব বৃষ্টির সময় ঘটে না। কেবল যখন শিলাবৃষ্টি হামলা করে, তখনই ঘটে। শিলার বড়-ছোট টুকরোগুলো ধামধুম করে বাজনা বাজাতে থাকে আশপাশে।
আচ্ছা বলো তো, বরফ আর শিলার স্বাদ কি এক রকম? চিন্তায় পড়ে গেলে? ঠিক আছে, একদিন অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখবে। ফ্রিজ থেকে এক টুকরো বরফ বের করে গভীর মনোযোগের সঙ্গে খাবে। আবার যেদিন শিলাবৃষ্টি হবে, তখন এক ছুটে বারান্দায় গিয়ে এক টুকরো শিলা কুড়িয়ে মুখে দিয়ে দেখবে। সেটাও গভীর মনোযোগের সঙ্গে খাবে। তারপর বোঝার চেষ্টা করবে দুইটার স্বাদে কোনো পার্থক্য আছে কি না।
তবে এবার একটু সিরিয়াস প্রসঙ্গে আসি। শিলাবৃষ্টি যাকে ইংরেজিতে বলে হেইলস্টর্ম, সেটা কেন হয়? আসলে আকাশ কালো করা কিউমিউলোনিম্বাস মেঘ থেকে এ ঘটনা ঘটে। আমাদের দেশে সাধারণত বৈশাখ মাসের কালবৈশাখীর সময়ে শিলাবৃষ্টি হয়। শিলাবৃষ্টির সময় মানুষ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে পারলেও অনেক পশুপাখির সেটা পারে না।
ধারণা করা হয়, বৈশাখের প্রচণ্ড গরমে আমাদের আশপাশের বাতাস বেশ অস্থির হয়ে ওঠে। মূলত তাপমাত্রার তারতম্যের জন্যই যত অস্থিরতা। তখন গরম বাতাস হালকা হয়ে খুব দ্রুত ওপরে উঠতে থাকে। আশপাশের অপেক্ষাকৃত ভারী বাতাস পড়িমরি করে ছুটে আসে শূন্যস্থান পূরণের জন্য। ভীষণ এক অস্থির অবস্থা! ওদিকে হালকা যে বাতাসটা ওপরে উঠছে, সেখানে প্রচুর ধূলিকণা থাকে। এ সবকিছু মিলিয়েই ঊর্ধ্বাকাশে ঠান্ডা পরিবেশে শিলা তৈরি হয়।
যেখানে ঊর্ধ্বমুখী বাতাসের চাপ কম থাকে, সেখানে অভিকর্ষের প্রভাবে শিলা নিচে নামতে শুরু করে। মেঘের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় আরও জলীয়বাষ্প নিয়ে আরও বড় হতে থাকে আকারে। এভাবে কয়েকবার বাতাসের চাপের তারতম্যের জন্য শিলাগুলো ওঠা-নামা করে। ঠিক যখন বাতাসের চাপের চেয়ে শিলাগুলো বেশি ভারী হয়ে যায়, তখন ধপাধপ করে মাটিতে পড়তে থাকে। আর আমরা বলি, ওরেব্বাস! শিলাবৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।
শিলাগুলোর ব্যাস সাধারণত ০.২ ইঞ্চি থেকে শুরু করে গলফ বল, বেস বলের মতোও বড় হতে পারে। শিলাবৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হয়, মানুষের বাড়িঘর নষ্ট হয়, এমনকি মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। তাই শিলাবৃষ্টি হতে দেখলেই সব সময় মুখ হাঁ করে দাঁড়িয়ে যেয়ো না, দাঁত ভেঙে যায় যদি! শিলার ঠুসঠাস হামলা থেকে যতটা সম্ভব নিজের মাথা ও পরের মাথা বাঁচানোর চেষ্টা করাই ভালো।