একশ তে একশ সত্যজিৎ

অলংকরণ: রেহনুমা প্রসূন

কলবেলটা চাপার আগে একবার হাতে ধরা কাগজটির দিকে তাকালেন তারিণীচরণ ব্যানার্জি। না, ঠিকই আছে, কাগজে স্পষ্ট করে লেখা, ‘২১, রজনী সেন রোড’। চটপটে এক কিশোর দরজা খুলে দিল। চশমাটা একটু নাকের ওপর ঠেলে দিয়েই বুঝে গেলেন, ছেলেটি তপেশরঞ্জন মিত্র। টেলিফোনেও বেশ বিনয়ী মনে হয়েছিল, এখানেও তা–ই। নইলে কি আর সেই বেনিয়াটোলা লেন থেকে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে আসতেন!

ইদানীং এপ্রিল-মে মাসে নিমন্ত্রণের চিঠিতে লেটার বক্স ভরে যায়। এ ছাড়া আর খবর নেয় কজন! তারিণীবাবু যে সোফাটায় বসলেন, তার ঠিক পাশের আরামকেদারায় বসা যুবকটির মনেও তখন প্রায় একই ভাবনা। তারিণীখুড়োর ঠিক উল্টো দিকের সোফায় বসা লোকটা একমনে ডালমুট খেয়ে যাচ্ছেন। অন্য কোনো ভাবনা তাঁর মাথায় আছে বলে মনে হচ্ছে না।

সবুজ চেক শার্ট আর টেরিলিনের প্যান্ট পরা তপেশরঞ্জন মিত্রই প্রথমে আলাপ শুরু করলেন, ‘আমি জানি আপনাদের অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এখানে আসতে হয়েছে। ব্যস্ততার মধ্যেও আমার জন্য, আমাদের জন্য আপনারা সময় বের করেছেন...’

‘ভূমিকার দরকার নেই। বরং যে কারণে আমাদের এখানে আসা, সেটি নিয়েই কথা হোক।’ রাশভারী কণ্ঠ শুনে প্রায় সবাই ঘুরে তাকালেন সেদিকে। জানালার পাশের সোফায় বসে আছেন প্রোফেসর শঙ্কু। মাথায় চুল নেই বললেই চলে, বুকের ঠিক ওপরে এসে থেমে গেছে দাড়ির দৈর্ঘ্য। তবে চশমার আড়ালে তার কৌতূহলী, অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি কারও চোখ এড়ায় না। আরামকেদারায় বসা যুবক এবার মুখ খোলেন, ‘বেশ, কাজের কথায়ই আসি। কাজটি সহজ হবে না, তবে অসম্ভবও নয়…’ যুবকের কথা শুনতে শুনতে স্মিত হাসেন লালমোহন বাবু। ডালমুট খাওয়া থামিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ফিরে যান পুরোনো দিনে। তখন এই বৈঠকখানায় বসে আড্ডা দেওয়া ছিল তার রোজকার রুটিন। এই নিচু সোফা, অ্যাশট্রে, দেয়ালে যামিনী রায়ের ছবি, শ্রীনাথের চা-ডালমুট তার কত পরিচিত। গম্ভীর আর ভীষণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কণ্ঠে কথা বলছিলেন যে যুবক, সেই প্রদোষচন্দ্র মিত্রও তার বহুদিনের চেনা। ডাকেন অবশ্য ফেলুবাবু বলেই। সেই যোধপুর যাত্রা থেকে পরিচয়। প্রথম দিন থেকেই দেখছেন, কী ক্ষুরধার বুদ্ধি, দুর্দান্ত পর্যবেক্ষণক্ষমতা ছয় ফুটের বেশি উচ্চতার মানুষটির।

বর্তমানে ফিরে আসেন লালমোহন বাবু। মন দিয়ে শোনেন ফেলুদার কথা, ‘এই সত্যজিৎ রায় লোকটাকে আমরা আরও একটু জানতে চাই, আরও একটু বুঝতে চাই। তাই আপনারা যারা তাকে যতটুকু চেনেন, সেটি যদি বলতেন…।’

ধীরে কিন্তু বেশ দৃঢ়কণ্ঠে বলতে শুরু করেন প্রবীণ বিজ্ঞানী, ‘আমার সঙ্গে ওনার সরাসরি কখনো দেখা হয়নি। যেটুকু যা জানি, সে ওনার বই পড়ে, পত্রিকায় ওর সম্বন্ধে ছাপা লেখা পড়ে। তবে আমার পড়ে পাওয়া ডায়েরিটি উনি যেভাবে মূল্যায়ন করেছেন, সে থেকে বেশ বোঝা যায়, লোকটা যুক্তিবাদী। বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা তার ছিল।’

প্রোফেসরের কথা কেড়ে নিয়ে লালমোহন বাবু গড়গড়িয়ে বলতে শুরু করেন, ‘আমার আবার উল্টো…ইয়ে মানে…ছোটবেলা থেকেই তো ওনাকে চিনতাম। আমাদের এই গড়পারে…মানে গড়পার রোডে এক অদ্ভুত বাড়ি ছিল ওনাদের।’ এতক্ষণ শান্ত হয়ে শুনছিলেন, কিন্তু আর বোধ হয় ধৈর্য রাখতে পারছেন না তারিণীখুড়ো। বলে উঠলেন, ‘অদ্ভুত কেন? ভূতের ছানা ছিল নাকি গো?’ কিছুটা থতমত খেয়ে যান টাকমাথা আর স্বল্পদৈর্ঘ্যের জটায়ু। এত বছর পরও জটায়ুসুলভ এই ইতস্ততা, সারল্য দেখে মুচকি হাসে তপেশ।

উপেন্দ্রকিশোর রায় সে বাড়ির নকশা করেছিলেন। শুধু তো বাড়ি নয়, বাড়ির সঙ্গেই আবার ছাপাখানা। বাড়ির সামনের দেয়ালে বড় করে লেখা ছিল, “ইউ রায় অ্যান্ড সন্স প্রিন্টার্স অ্যান্ড ব্লক মেকার্স।”

দ্রুতই সামলে ওঠেন জটায়ু। ‘শুনেছি ওনার ঠাকুরদা, মানে উপেন্দ্রকিশোর রায় সে বাড়ির নকশা করেছিলেন। শুধু তো বাড়ি নয়, বাড়ির সঙ্গেই আবার ছাপাখানা। বাড়ির সামনের দেয়ালে বড় করে লেখা ছিল, “ইউ রায় অ্যান্ড সন্স প্রিন্টার্স অ্যান্ড ব্লক মেকার্স।”’

‘এই ছাপাখানা থেকেই কি সন্দেশ পত্রিকা বেরোত?’ ফেলুদার প্রশ্ন।

জটায়ু একেবারে লাফিয়ে উঠলেন, ‘এক্কেবারে কারেক্ট ধরেছেন, ফেলুবাবু। এই যে স্পষ্ট মনে পড়ে গেল একদম।’ পাশ থেকে ফোড়ন কাটেন তারিণীখুড়ো, ‘তা কী মনে পড়ল, সেটাও যদি একটু অনুগ্রহ করে বলতেন, মশায়!’ ফেলুদাই শুরু করলেন এবার। কেস সলভ করার পর ঠিক যেভাবে কথা বলতেন ফেলুদা, সেই একই আত্মবিশ্বাস আর স্থিরতা তার চোখেমুখে। বসার ঘরে প্রতিধ্বনিত হয় এক নক্ষত্রের শৈশব স্মৃতি, ‘যেটুকু বুঝতে পারছি, গড়পারের এই বাড়িতেই ছোটবেলায় গল্প-ছড়া-ছবির সন্দেশ আর ছাপাখানার সঙ্গে সরাসরি পরিচয় হয় তার। এ বাড়িতে অবশ্য তারা বেশি দিন ছিলেন না। ছয় বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে তিনি চলে আসেন ভবানীপুরে, মামার বাড়িতে। তত দিনে সন্দেশ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে যত দিন গড়পার রোডের বাড়িতে ছিলেন, তত দিনেই তার মনে-মস্তিষ্কে গেঁথে গেছে ছাপাখানার ছবি। এর ফলাফল অবশ্য আমরা সবাই জানি।’ থামলেন ফেলুদা, ঘরজুড়ে সাসপেন্স জমে ওঠার সুযোগ দিচ্ছেন তিনি।

‘ফলাফলের আগে বরং আরও একটু অতীতের কথা শুনি। শৈশবের অনেকটা অংশ একাই কাটিয়েছেন তিনি। সে সময় গড়ে উঠেছে পড়ার অভ্যাস। আমার সঙ্গে আড্ডায় শৈশবের সঙ্গীর কথা বলতে বলতে ১০ খণ্ডের বুক অব নলেজ–এর কথা বলেছেন বহুবার।’

‘সিনেমার নেশাটাও কিন্তু ছিল ওর।’ তারিণীখুড়ো সোফায় হেলান দিয়ে বললেন। জমিয়ে গল্প বলা তার অভ্যাস। ‘আর ছিল ম্যাজিকের নেশা। এক্কেবারে ছোটবেলায় মুগ্ধ হয়েছিল শেফালো আর মাদাম প্যালারমোর ম্যাজিক দেখে। এরপর বই দেখে দেখে হাতসাফাই প্র্যাকটিস করত নিজেই। কলেজ পর্যন্ত অভ্যাসটা ছিল শুনেছি।’

ফেলুদা মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়। তার মনে পড়ে, নয়ন আর জাদুকর রাজেন তরফদারের কেসটায় দারুণ সাহায্য করেছিল লোকটা। পরক্ষণেই আবার অনুসন্ধিৎসু মন জেগে ওঠে, প্রশ্ন করে, ‘ছোটবেলা থেকেই কি ছবি বানাতে চাইতেন?’

তারিণীখুড়ো একটু সময় নিয়ে ভাবেন এবার। ‘তা বলতে পারব না। তবে সেই সাত-আট বছর বয়স থেকেই ওকে দেখেছি মায়ের সঙ্গে, মামার সঙ্গে সিনেমা হলে যেতে। সিনেমায় তখনো শব্দ আসেনি। পর্দায় সিনেমা চলত আর একজন পর্দার পাশে বসে সিনেমার সঙ্গে তাল রেখে পিয়ানো বাজাত। সেই সিনেমাও গোগ্রাসে গিলত ছেলেটা। কী বুঝত জানি না, তবে সিনেমা হলের আলো–আঁধারিতে দেখেছি, চুপটি করে বসে সিনেমা দেখছে সে।’

ফেলুদার ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি ফুটে উঠল এবার। দেখে মনে হচ্ছে, কী যেন একটা হিসাব মিলে গেল ওর! খানিকটা এগিয়ে এসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, ‘আর ঘোরাঘুরি? সেটাও নিশ্চয় অনেক হয়েছে ছোটবেলায়?’

উত্তরটা এবার জটায়ুর দিক থেকে আসে, ‘গড়পারে থাকতে শুনেছি, বাবার সঙ্গে সোদপুর গেছে, গিরিডিতে গেছে।’ গিরিডির কথা শুনেই যেন উৎসাহ ফিরে পান প্রোফেসর শঙ্কু। বলতে থাকেন, ‘হ্যাঁ, গিরিডিতে তিনি এসেছিলেন। লোকমুখে শুনেছি। তবে বইতে পড়েছি যে মায়ের সঙ্গে সেই সাত-আট বছর বয়সে লক্ষ্ণৌ গেছেন, দার্জিলিং ঘুরেছেন।’

সিনেমার চারুলতা আর উপন্যাসের চারুলতার পার্থক্যই হয়তো তাদের তর্কের বিষয়। আবার পরক্ষণেই দুজনে একমত। গুপী গাইন বাঘা বাইন হতে পারলে নাকি জীবনে তারা আর কিচ্ছুটি চায় না!

মুখের হাসিটা খানিকটা বিস্তৃত হয় ফেলুদার। তপেশই প্রশ্নটা করে, ‘ফেলুদা, ফলাফলের কথা কী যেন বলছিলে?’ চোখ চকচক করছে ফেলুদার। তবু ধীর, স্থিতধী ভাব বজায় রেখেই জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় সে। দূরে কী যেন দেখতে দেখতে বলতে শুরু করে ফলাফলের কথা, ‘একটা মানুষ লিখলেন, আঁকলেন, ছবি বানালেন। লিখলেন মানে যে যেনতেন লেখা, তা–ও নয়। সেরা সব লেখা! আমার মতো, এই যে আমাদের মতো কালজয়ী চরিত্রদের সৃষ্টি করলেন। আপনি আঁকার কথাতেই আসুন। সেখানেও তিনি সেরা! কর্মজীবনের শুরুতেই বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদশিল্পে নতুন ধারা এনেছিলেন। নিজের বইয়েও আঁকতেন নিজেই। আর ছবি বানানোর কথা নতুন করে কী আর বলব!’

এবার সবাই মিলে যেন একযোগে বলতে শুরু করলেন। কেউ বলছেন নিজের জমানো টাকা, ভারতীয় সরকারের অনুদান মিলিয়ে কীভাবে প্রথম ছবি পথের পাঁচালী বানিয়েছিলেন তিনি। কেউ বলছেন তাঁর প্রথম ছবির সেই অবিস্মরণীয় দৃশ্যের কথা, যেখানে ভাই–বোন কাশবনে দৌড়াতে দৌড়াতে ট্রেন দেখে আচমকা থেমে গেল। কেউ বলছেন তার হাত ধরে গ্রামের একেবারে সাধারণ দুই কিশোর-কিশোরীর বিস্ময়, তাদের ঘরদুয়ারের নিজস্বতা, তাদের ছোট্ট আনন্দ আর জীবনব্যাপী দুঃখ কেমন করে বিশ্ব জয় করে ফেলল। ক্রমেই সিনেমা নিয়ে কথা বাড়তেই থাকে। কথা বলতে বলতে কিছুক্ষণের জন্য প্রোফেসর শঙ্কুর নিজেকে মনে হয় আগন্তুক–এর মনমোহন মিত্র, যিনি আফ্রিকার গহিনে ঘুরে বেড়িয়েছেন, দেখেছেন নাবিকের জীবন। আবার তারিণীখুড়ো বাস্তবতা ভুলে তর্কে মেতে ওঠেন জটায়ুর সঙ্গে। সিনেমার চারুলতা আর উপন্যাসের চারুলতার পার্থক্যই হয়তো তাদের তর্কের বিষয়। আবার পরক্ষণেই দুজনে একমত। গুপী গাইন বাঘা বাইন হতে পারলে নাকি জীবনে তারা আর কিচ্ছুটি চায় না!

খুব শান্ত হয়ে, মুগ্ধ দৃষ্টিতে এদের দেখে আজকের এই বৈঠকের আয়োজক শ্রীমান তপেশরঞ্জন মিত্র। থামাতে ইচ্ছা করে না তাদের। তবু যখন জানালা দিয়ে চোখে পড়ে, লালমোহন বাবুর সবুজ অ্যাম্বাসেডরের ওপর থেকে মুছে যাচ্ছে সূর্যের শেষ আলোটুকু, সে বলতে শুরু করে, ‘কিন্তু ফলাফলের হিসাবটা তো এখনো বুঝলাম না!’

ফেলুদা যেন আকাশ থেকে পড়ে, ‘সেকি! এখনো বুঝিসনি? লোকটি তার পুরো জীবনকে, সব অভিজ্ঞতাকে ধারণ করেছেন মনে আর মস্তিষ্কে। আর শুধু ধারণই করেননি, ধারণকৃত স্মৃতির প্রকাশও ঘটিয়েছেন ভীষণ যত্নে। আমরা প্রত্যেকে তার স্মৃতির অংশ। স্মৃতির চেয়ে বড় শক্তি আর কী আছে?’

একটু থেমে যোগ করে ফেলুদা, ‘লালমোহন বাবু, তিনি যখন আপনার কথা বলছেন, তার গল্পে ফুটে উঠছে এথিনিয়াম ইনস্টিটিউট, মানে তার বাড়ির পাশের স্কুলটা। তিনি যখন আমার কথা বলছেন, সেখানে চলে আসছে তার নিজের উচ্চতা, শারীরিক গঠন। এমনকি তার যুযুৎসু, তার চোখে দেখা নেপাল-দার্জিলিং-বেনারস-পুরোনো কলকাতা—সব এক হয়ে গেছে এই আমার মধ্যে।’

বাদ সাধেন প্রোফেসর শঙ্কু। তার মতামত ভিন্ন, ‘আমি অবশ্য মনে করি না স্মৃতি আর অভিজ্ঞতাই তার একমাত্র শক্তি। অতুলনীয় কল্পনাশক্তি আর সৃজনশীলতাও কিন্তু ছিল। নইলে কি আর ষাটের দশকে বাঙালি বিজ্ঞানীকে তিনি অচেনা গ্রহে পাঠিয়েছেন!’

এই সুযোগে তারিণীখুড়ো কথা বলার সুযোগ ছাড়েন না, ‘অভিজ্ঞতা না কল্পনা, কোনটার ফলাফলে যে একটা লোক এমন সেরাদের সেরা হয়ে গেল, সে নিয়ে তর্ক করলে শেষ হবে না। কিন্তু একটা কথা আমার অনেক দিন ধরে মনে হয়। নিজের লোকের কথা, নিজের চারপাশের কথা একেবারে নিজস্ব ভঙ্গিতে, কাউকে নকল না করে বলার যে ব্যাপার, এইটাই মনে হয় লোকটার সবচেয়ে বড় শক্তি।’ আবারও কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা নেমে আসে ঘরে। সত্যকে উপলব্ধি করার সময় নিচ্ছে সবাই।

আরও একবার পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে নেয় তপেশ। লালমোহন বাবু ডালমুটের বাটি হাতে স্বভাবমতো বাঁ দিকে হেলান দিয়ে বসেছেন। ঠোঁটের ফিসফিস দেখে বোঝা যায়, ‘হাইলি সাসপিশাস!’ বলার একটা মৃদু চেষ্টা করছেন ভদ্রলোক। ফেলুদার চোখে শরতের আকাশ, যেন মগনলালের জালিয়াতি ফাঁস করে দিয়ে সবে দশ্বাশ্বমেধ ঘাটে এসে বসেছে সে। তারিণীখুড়োর চোখেমুখে দুর্দান্ত এক গল্প বলে শেষ করার আত্মতৃপ্তি স্পষ্ট। আর প্রোফেসর শঙ্কু কী যেন এক মহা আবিষ্কারের কথা ভেবে ঠোঁটের কোনায় হাসি ঝুলিয়ে রেখেছেন।

রাস্তার মোড়ে সোডিয়ামের বদলে এলইডি বাল্ব জ্বলে উঠেছে ততক্ষণে। আশপাশের ফ্ল্যাটবাড়ি থেকে রেডিওর শব্দের বদলে শোনা যায় টিভির আওয়াজ। শুধু একই রয়ে যায় ২১, রজনী সেন রোড। একই রয়ে যান বইয়ের পাতায়, সেলুলয়েডের ফিতায়, মনে ও মননে সত্যজিৎ রায়!