সারা বছর মাকে নানাভাবে জ্বালানো হয়। কিন্তু বছরে দুইটা দিন সবারই চেষ্টা থাকে মাকে খুশি করার। একটা তো মায়ের জন্মদিন। আরেকটা হলো মা দিবস। মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মা দিবস। শুধু এই দুই দিনেই না, যেকোনো সময়ই আমরা মাকে খুশি করতে পারি খুব সহজে। ঠিকমতো ঘুম থেকে উঠে, খাওয়াদাওয়া করে, পড়াশোনা করে, তার কাজে সাহায্য করে...কী? খুব বেশি কঠিন মনে হচ্ছে? এর বাইরে নিজের হাতে তৈরি করে মাকে উপহার দাও। নিশ্চিত থাকো, তোমার বানানো উপহার দেখে তোমার আম্মু অনেক খুশি হবেন। কী উপহার তৈরি করবে ভাবছ? চলো, তোমাকে কিছু আইডিয়া দেওয়া যাক!
হরেক রকম কার্ড
উপহার হিসেবে কার্ড তালিকায় একদম প্রথম স্থানে থাকে। এই কার্ড নিজেই তৈরি করে নিতে পারো। একটা কাগজ নাও। রংবেরঙের কিংবা সাদাকালো। কাগজটা মাঝখান থেকে ভাঁজ করো। কিংবা ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত যেকোনো আকৃতিতে কেটে নাও। এবার প্রথম পাতায় নিজের মনমতো কিছু একটা আঁকো। যদি আঁকতে না পারো তাহলে ফিতা, বোতাম, টিপ এমন কিছু দিয়ে ডিজাইন করো। ভেতরের পাতায় সুন্দর করে মাকে কিছু মনের কথা লিখে দাও। ব্যস, কার্ড তৈরি! সুন্দর একটা খাম বানিয়ে এবার মাকে দিয়ে দাও!
বুকমার্ক
তোমার আম্মু যদি বই পড়তে ভালোবাসেন, তাহলে দেরি না করে একটা বুকমার্ক তৈরি করে ফেলো। খুব সহজ। একটা শক্ত কাগজ নাও। এবার কাগজটাকে সুন্দরমতো লম্বা করে কাটো। ডিজাইন করার ঝামেলা এড়াতে আরেকটা কাজ করতে পারো। আম্মুর সঙ্গে তোমার প্রিয় ছবিটা কেটে, আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিতে পারো শক্ত কাগজটায়। একদম ওপরে একটা গোল ছিদ্র করে নাও। একটা রঙিন ফিতে তাতে ঢুকিয়ে ফিতের দুপ্রান্ত বেঁধে দাও। বুকমার্কের এক পাশে ছবি থাকল, আর অন্য পাশে মাকে কতটা ভালোবাসো লিখতে ভুলো না!
ক্রিং ক্রিং-চাবির রিং
মাকে ভালোবাসো এমন দশটা কারণ চিন্তা করো। পেয়েছ? ছোট ছোট কাগজে সেটি লিখে ফেলো। কাগজগুলো একটু শক্ত নিয়ো। এবার কাগজের এক কোনায় গোল করে ছিদ্র করে ফেলো। খেয়াল রেখো, সবগুলো কাগজে যেন সমান করে ছিদ্র করা হয়। এবার একটা জাম্প রিং নাও। যেকোনো স্টেশনারি দোকানেই কিনতে পাবে এটা। আর যদি জাম্প রিং খুঁজে না পাও, তবে ফিতে দিয়ে দিব্যি কাজ চালিয়ে দিতে পারো। সবগুলো কাগজ জাম্প রিংটায় ভরে ফেলো। আর যদি ফিতে ব্যবহার করো, তাহলে একটা পুরোনো চাবির রিং খুঁজে বের করো। ফিতার এক প্রান্তে গিঁট্টু মেরে দাও রিংটায়। অন্য প্রান্তে থাকবে কাগজে লেখা আম্মুকে ভালোবাসার দশটা কারণ। নিজের বানানো চাবির রিংয়ের চেয়ে অন্য চাবির রিং গোটা মার্কেটে খুঁজেও পাওয়া সম্ভব না, কী বলো?
ফুলটুল
কাগজ দিয়ে ফুলের তোড়া বানিয়ে উপহার দিলে কেমন হয়? এর জন্য তোমার লাগবে প্লাস্টিকের চামচ আর গ্লাস। মাত্র একবার ব্যবহার করা যায় এমন প্লাস্টিকের চামচ-গ্লাস নিশ্চয়ই দেখেছ। সেটাকেই কাজে লাগাও। প্রথমে চামচের মুখের আকৃতিটা রঙিন কাগজে আঁকো। সেটা অনেকটা ফুলের পাপড়ির মতো হবে। বেশ কয়েকটা ফুলের পাপড়ি কাটো। চামচের মুখে আঠা দিয়ে ওগুলো বসিয়ে দাও। চামচের হাতলের জায়গায় আরেকটা রঙিন কাগজ লাগিয়ে সেটাকে বানাও ফুলের ডাঁট। এবার প্লাস্টিকের গ্লাসটা রং করে ফেলো। মার্কার, জলরং যেটা দিয়ে তোমার সুবিধে হয় আরকি। সবশেষে গ্লাসটার ভেতর তোমার বানানো অনেকগুলো চামচের ফুল রেখে দাও। নিজের বানানো একটা কার্ডের সঙ্গে ফুলের তোড়া উপহার হিসেবে চমত্কার।
মসলা না চিরকুট
রান্না করতে কত ধরনের মসলা ব্যবহার করতে হয়। আর এই মসলাগুলো আম্মু নিশ্চয় বয়ামে সংরক্ষণ করেন? একটা অব্যবহূত মসলার বয়াম জোগাড় করো। ভালো করে সেটা ধুয়েমুছে নাও। এবার আম্মুর সঙ্গে তোমার মজার কিংবা সুখ-দুঃখের যত স্মৃতি আছে, লিখে বয়ামে ভর্তি করো। একটা রঙিন ফিতে দিয়ে বয়ামের মুখটা ভালোমতো আটকে দাও। মায়ের আড়ালে রান্নাঘরে মসলার বয়ামগুলোর পাশে সুন্দর করে সেটি রেখে দাও। ভাবো তো একবার, রান্না করতে গিয়ে আম্মু যখন এই স্মৃতিগুলো খুঁজে পাবেন, তখন কত খুশি হবেন?
ইরেজার-লেট
আম্মুকে একটা হাতের ব্রেসলেট বানিয়ে দাও। না, না! ব্রেসলেট তো পুরোনো আইডিয়া। তার চেয়ে বরং ইরেজার-লেট বানিয়ে দাও। বুঝতে পারছ না? ইরেজার দিয়ে ব্রেসলেট বানাও। সংক্ষেপে ইরেজার-লেট। দোকান থেকে কতগুলো ছোট ছোট নকশা করা ইরেজার কিনে আনো। সুই-সুতো দিয়ে একটা মালার মতো তৈরি করো। এবার সুতোর দুই প্রান্তে আলাদা দুটি গিট্টু দাও। আম্মুর হাতে পরিয়ে দিয়ে বলো, ইরেজার যেভাবে তোমার দুঃখগুলো সে মুছে দেয়, তুমিও সেভাবে তার দুঃখগুলো দূর করে দেবে (যদি থাকে)।
টু-ডু-লিস্টি
সারা দিন এত কাজ করতে হয় মাকে যে কখনো কখনো টুকিটাকি কাজের কথা ভুলে যান। এই ধরো বিদ্যুত্ বিল দিতে হবে, সেটা হয়তো আজকে জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। কাজের ভিড়ে বিল দিতে আম্মুর মনে নেই। আবার ধরো তোমার সঙ্গে আম্মুর বই কিনতে যাওয়ার কথা। অন্য কাজের ভিড়ে সেটি হয়তো খেয়াল নেই। একটু লিখে রাখলেই সব ঠিকঠাক থাকে। আম্মুর জন্য একটা টু-ডু-লিস্ট বোর্ড তৈরি করে দাও। এর জন্য প্রয়োজন একটা ক্লিপবোর্ডের। বাজার থেকে কিনে আনো সেটা। ক্লিপবোর্ডটা একটু রঙিন বা খবরের কাগজ দিয়ে ডিজাইন করো। এবার ক্লিপবোর্ডে একটা সাদা কাগজ আর পেনসিল আটকে দাও। খেয়াল করো, মা যেন বাজারের ফর্দ না লিখে তাতে প্রতিদিন কী কী কাজ করবেন, সেটাই লেখেন!
উপহার যা-ই দাও না কেন, শুধু মাকে বুঝিয়ে দিয়ো তুমি তাঁকে কতটা ভালোবাসো। এসব বানাতে একটু সময় আর ধৈর্যের দরকার। তবে তুমি যদি একটু অলস শ্রেণির হও, এত কিছু বানানোর ধৈর্য যদি না থাকে তোমার, তাহলে এক কাজ করো। সোজা মায়ের গালে বড় একটু চুমু দিয়ে বলে দাও, ‘আম্মু, তোমাকে অনেক ভালোবাসি।’ এর চেয়ে বড় উপহার আর কিছু নেই, সত্যি!