জানি, লেখাটির শিরোনাম দেখেই লাফিয়ে উঠেছ তোমরা। অয়ন-জিমি যে তোমাদের কত প্রিয়, কিশোর আলোয় পাঠানো চিঠিগুলোই তো তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। সেই সব চিঠিতে অয়ন-জিমির নতুন কাহিনি ছাপানোর জন্য নিয়মিত তাগাদা দিয়ে থাকো তোমরা।
যারা জানো, তারা তো জানোই। তবে এখনো যাদের অয়ন-জিমির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি, তাদের সঙ্গে আজ পরিচয় করিয়ে দেব কিশোরদের উপযোগী অসাধারণ একটি রহস্য সিরিজের।
শখের গোয়েন্দা ওরা, রহস্যের পূজারি। দুজনেরই বয়স তোমাদের মতো। স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে। থাকে আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসে।
অয়ন বাংলাদেশি। লস অ্যাঞ্জেলেসের বিরাট এক ফার্মের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওর বাবা শাহাদাত হোসেন। অয়নের জন্মের আগে আমেরিকায় স্থায়ী হন শাহাদাত ও ফাহমিদা হোসেন দম্পতি। পরে ওই দেশের নাগরিকত্ব পেয়ে যান তাঁরা। যুক্তরাষ্ট্রেই জন্ম অয়ন হোসেনের।
ওর প্রিয় বন্ধু জিমি পারকার অবশ্য পুরোদস্তুর আমেরিকান। জিমির মা–বাবা গ্যারি পারকার ও ক্যাথরিন পারকার দুজনই লস অ্যাঞ্জেলেস জেনারেল হাসপাতালের বড় চিকিৎসক।
অয়ন আর জিমির বাড়ি একই পাড়ায়। ফলে খুব সহজে ওদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছে। স্কুলের পরীক্ষায়ও বেশ ভালো ফল করে ওরা।
তোমাদের জন্মের অনেক আগে, ১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে স্বনামধন্য সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছিল অয়ন-জিমি সিরিজের প্রথম বই কালকুক্ষি। লেখক ইসমাইল আরমান তখন দশম শ্রেণির ছাত্র, কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজে পড়েন। বইটি অবশ্য আরও বছরখানেক আগে লেখা। সেবা প্রকাশনীর কনিষ্ঠ লেখক হিসেবে বই বেরোয় তাঁর।
সে সময় বেশ ভালো সাড়া ফেলে দিয়েছিল কালকুক্ষি। কিন্তু তখন সিরিজটি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি লেখকের পক্ষে। শুরুতে স্কুল-কলেজের লেখাপড়া, আর পরে চাকরির ব্যস্ততায় লম্বা বিরতি পড়ে গিয়েছিল। ফাঁকে ফাঁকে অবশ্য কিছু গল্প লিখেছেন, যেগুলো অধুনালুপ্ত কিশোর পত্রিকা ও কিশোর তারকালোক–এ ছাপা হতো। এ কারণে দ্বিতীয় বই বেরোতে সময় লেগে যায় প্রায় সাত বছর। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয় সাবাস অয়ন! সাবাস জিমি!! নামের বইটি।
ইসমাইল আরমানের কাছে অয়ন-জিমির ৩০ বছর পূর্তির অনুভূতি জানতে চাইলে বলেন, ‘অয়ন-জিমির ৩০ বছর হয়ে গেল, এটা ভাবতেই অবাক লাগছে।’
এই লেখা যখন পড়ছ তোমরা, তত দিনে ৩০টি কাহিনি বেরিয়ে গেছে অয়ন-জিমি সিরিজের, যার অনেকগুলোই লেখকের মৌলিক রচনা। কাহিনিগুলো হলো: কালকুক্ষি, এক বোতল বিষ, গায়েবি আওয়াজ, গোপন সংকেত, জমছে খেলা কার্নিভালে, পাগলা ডাক্তারের প্রেতাত্মা, কালো নাইটের বর্ম, নেই ভেদাভেদ, কালো মেঘ, হারানো শুশুক, মাঞ্চুরিয়ান মুখোশ, কিংবদন্তি, প্রাসাদবাড়ির রহস্য, বিপদের ছয়টি আঙুল, পাথরপিশাচ, হিরের নেকলেস, রেলগাড়ি ঝমাঝম, হ্যারোভিলের রহস্য, বানরের হাত, কালো জাদু, কনডরের ডানা, রাত নিশুতি, এমিলির চোখ, নিষিদ্ধ দ্বীপ, মৌ-চোর, জল টলমল, পিকাসোর পেইন্টিং, রহস্যবাড়ি, বরফ বিভীষিকা ও পাইন রিজের ভ্যাম্পায়ার। কিশোর আলোয় প্রকাশিত কয়েকটি বাদে বাকি সব কাহিনিই প্রকাশিত হয়েছে সেবা প্রকাশনী থেকে। তোমরা যারা কিশোর আলোর গল্পগুলো মিস করেছ, সংগ্রহ করতে পারোনি পুরোনো সংখ্যাগুলো, তাদের জন্য সুখবর হচ্ছে, শিগগিরই এগুলোর সংকলন আসছে। এ ছাড়া লেখক এ-ও জানান, কিশোর আলোর জন্য ‘লকড রুম মিস্ট্রি’ ধাঁচের নতুন একটি গল্প লিখছেন তিনি। আর যারা পাইন রিজের ভ্যাম্পায়ার হাতে পেয়ে গেছ, তারা তো জেনেই গেছ, সিরিজের পরবর্তী বইয়ের নাম: আজব কারিগর।
নেই ভেদাভেদ কাহিনিতে আবির্ভাব ঘটেছিল বড়লোকের জেদি মেয়ে ভিক্টোরিয়া ওয়েস্টমোর ওরফে রিয়ার। দুই বন্ধুর সঙ্গে তার পরিচয়ের শুরুটা রেষারেষি দিয়ে হলেও একপর্যায়ে বন্ধুত্বে গড়ায় ওদের সম্পর্ক। এরপর বেশ কিছু কাহিনিতে তিন বন্ধুকে একসঙ্গে রহস্যের সমাধান করতে দেখা গেছে। যদিও প্রায়ই একে অপরের বিরুদ্ধে লেগে থাকতে দেখা যায় জিমি আর রিয়াকে। পাঠকেরাও পছন্দ করে ওদের খুনসুটি।
আরেকটি কথা না বললেই নয়। অয়ন-জিমির অধিকাংশ বইয়ের প্রচ্ছদ সিরিজটির স্রষ্টা ইসমাইল আরমানের করা। এ কারণে লেখকের কল্পনার স্পষ্ট প্রতিফলন দেখতে পাবে তোমরা বইগুলোর প্রচ্ছদে।
ইসমাইল আরমানের কাছে অয়ন-জিমির ৩০ বছর পূর্তির অনুভূতি জানতে চাইলে বলেন, ‘অয়ন-জিমির ৩০ বছর হয়ে গেল, এটা ভাবতেই অবাক লাগছে। সিরিজটা এখনো চলছে এবং পাঠক বইগুলো পছন্দ করছে, ভাবতে ভালো লাগে। নানান ধরনের ব্যস্ততা ও সীমাবদ্ধতার কারণে এই সিরিজ আমি নিয়মিত লিখতে পারিনি, মাঝে লম্বা বিরতি পড়েছে, তারপরও পাঠকেরা অয়ন-জিমিকে ভুলে যায়নি বলে আমি কৃতজ্ঞ। তাদের কাছ থেকে এই ভালোবাসা ও সহায়তা ভবিষ্যতেও চাইব, যাতে ওদের নিয়ে আরও বহুদিন লিখে যেতে পারি।’
তবে আর দেরি কেন, এখনই ভিড়ে যাও অয়ন আর জিমির সঙ্গে! গ্যারান্টি দিচ্ছি হাসি, রোমাঞ্চ, রহস্য আর অ্যাডভেঞ্চারের কমতি পাবে না কোনো বইয়ে।