সুস্থ থাকার জন্য এখন সবার বাসায় থাকা জরুরি। অন্যদিকে কবিগুরুও বারণ করেছেন, ‘ওরে আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে!’ তাঁর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করাও ঠিক হবে না। তাই বলে ঘরে বসে কীভাবে সময় কাটাবে ভেবে মাথা ঠোকারও তো মানে নেই। কী করবে ভেবেই অর্ধেকটা সময় পার না করে দিয়ে পুরো লেখাটা পড়ো। আর বেছে নাও কোন কাজটি করে সময় কাটাতে চাও তুমি।
১. ‘নভাম লিংগুয়াম ডিশশেরে’
কী বললাম বুঝলে না তো? খুব কঠিন কিছু বলিনি। ল্যাটিন ভাষায় এর অর্থ, ‘নতুন একটি ভাষা শেখো’! হ্যা, ঠিক ধরেছ। সময়ের খুব ভালো ব্যবহার করতে পারো নতুন একটি ভাষা শেখার মাধ্যমে। বিশ্ববিখ্যাত গায়িকা শাকিরাকে তো চেনো? তিনি স্প্যানিশ ছাড়াও ইংরেজি, পর্তুগিজ, ইটালিয়ান ও ফ্রেঞ্চ ভাষায় পারদর্শী। ভাবছ, কীভাবে শিখবে? আজকাল অনলাইনেই বিনা পয়সায় অনেক ভাষাশিক্ষার কোর্স রয়েছে। এ ছাড়া, গুগল প্লে স্টোরে রয়েছে ‘ডুওলিঙ্গো’–এর মতো ভাষা শেখার অনেক অ্যাপস। বিল গেটস নিজেও ডুওলিঙ্গো ব্যবহার করে ভাষা শেখার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সময়ের অভাবে পেরে ওঠেননি। তাই সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমার বেশ আফসোস হয়, কেন যে আরেকটা ভাষা জানি না! ফ্রেঞ্চ, আরবি বা ম্যান্দারিন শিখতে পারলে বেশ হতো। মার্ক জাকারবার্গ কী চমৎকার ম্যান্দারিন শিখে নিয়েছে!’ বিল গেটসের মতো আফসোস না করতে চাইলে এখনই নতুন একটি ভাষা শিখতে শুরু করতে পারো।
২. জানার কোনো শেষ নাই, বেশি বেশি
বই পড়ো তাই…
পড়ার কথা শুনে আবার ভাবতে বোসো না, এখনই তোমাকে বাড়ির কাজের পড়া করতে বলব। স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়ের বাইরে সব বইকে রবীন্দ্রনাথ অপাঠ্য বই বলতেন। সময়টা কাটাতে পারো এসব অপাঠ্য বই পড়ে। খুঁজে দেখো, তোমার বাসায় এমন অনেক বই নিশ্চয়ই আছে, যেটা তুমি পড়বে পড়বে করেও শেষমেশ আর পড়োনি। মার্কিন উপস্থাপিকা অপরাহ উইনফ্রে মনে করেন, বই পড়ার কারণেই তিনি বুঝতে শিখেছেন দাদিবাড়ির গণ্ডির বাইরেও কত বড় পৃথিবী রয়েছে। আর যদি বই পড়তে না চাও, তবে পত্রিকা পড়ো। মার্কিন ব্যবসায়ী ওয়ারেন বাফেট প্রতিদিন পাঁচ-ছয় ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন পাঁচটি পত্রিকা পড়ে। সফল মানুষেরা বলেন, পড়ার কোনো বিকল্প নেই।
৩. হয়ে যাও শিল্পী-সাহিত্যিক
তুমি কি আঁকতে ভালোবাসো? কিংবা লিখতে? তবে তো কোনো কথাই নেই। লেখালেখি করে দিব্যি সময় কাটিয়ে দিতে পারো। জাপানি লেখক হারুকি মুরাকামির কথাই ধরো। যেদিন লেখালেখি করেন, সেদিন ঘুম থেকে ওঠেন ভোর চারটায়। এরপর টানা চার-পাঁচ ঘণ্টা লেখালেখি করেন। যেন নয়টা-পাঁচটা অফিস করা! শুধু তা–ই নয়, লেখালেখিতে পূর্ণ মনোযোগ আনার জন্য তিনি নিয়মিত দৌড়ান কিংবা সাঁতার কাটেন। ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েল তার আউটলায়ার্স বইটিতে বলেছেন, কোনো কিছু ১০ হাজার ঘণ্টা করলে সে বিষয়টাতে দক্ষ হওয়া যায়। তাই তুমিও ভালো লেখক বা আঁকিয়ে হতে চাইলে চর্চা করো নিয়মিত। সময়টা ভালোই কাটবে।
৪. রেডিওর দুনিয়া, দুনিয়ার রেডিও
দাদা-দাদিরা একসময় এন্টেনার নব ঘুরিয়ে, এদিক–সেদিক লম্বা করে বেশ আয়োজন করে রেডিও শুনতেন, মনে আছে? ভাবছ, রেডিও শোনার সেই দিন কি আর আছে? কিন্তু তোমাকে যে রেডিওর সন্ধান দেব, সেখানে তুমি পৃথিবীর অনেক দেশের রেডিও শুধু এক ক্লিকেই শুনতে পাবে! www.radio.garden নামক ওয়েবসাইটটিতে গেলেই একটা বিশ্ব মানচিত্র হাজির হবে তোমার স্ক্রিনে। আর সেখানে সবুজ রঙের বাতিজ্বলা অংশগুলোতে ক্লিক করলেই তুমি সন্ধান পেয়ে যাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শত শত রেডিওর! এই সুযোগে অন্য দেশের এফএম রেডিও নিয়ে ছোট্ট একটা গবেষণা করতেই পারো।
৫. সুস্থ থাকতে চাই শরীরচর্চা
পাঠ্যবইয়ের রচনায় হয়তো শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের গুরুত্ব নিয়ে অনেক পড়েছ। তাই শরীরচর্চা তোমাকে ফিট রাখতে কতটা কার্যকর, সে নিয়ে আর বকবক করলাম না। তবে নিয়মিত শরীরচর্চা কিন্তু মানসিক প্রশান্তি দেয়। শুধু খেয়াল রেখো, সব ব্যায়াম সবার জন্য নয়। তাই যে ব্যায়াম করলে তোমার শরীরের ক্ষতি হবে না, এমন কিছু ব্যায়াম করতে পারো। ফোনালাপেই কোনো বিশেষজ্ঞের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে নিতে পারো।
৬. মাস্টারশেফ বাংলাদেশ
রান্না-বান্নাকে অনেক সাহিত্যিক শিল্পের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আসলেই, রান্না করা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। কতটুক লবণ দিলে সেটা মুখ পোড়ানো স্বাদ তৈরি করে না কিংবা কতটুক পানি দিলে ঠিকমতো সবজি সেদ্ধ হয়, এগুলোর আন্দাজ করা সহজ নয়। তবে সময় কাজে লাগাতে সহজ কিছু রান্না ইউটিউব দেখে শিখে নিতেই পারো। কোনো কিছু শেখাই নাকি বৃথা যায় না। কে জানে, কবে রান্নার প্রতিযোগিতায় তুমি শিরোপা জিতে যাও!
৭. দক্ষতা বাড়াও
তোমার মাথার ওপর ফ্যানটা ঠিক কতক্ষণ ধরে ভনভন করে ঘুরছে, বলো তো? এক কাজ করো, এই দৃশ্যটাই ভিডিও করে ফেলো। নিশ্চয়ই ভাবছ, সেটা করে কী হবে? আশপাশে যা দেখছ, তা ছোট ছোট ভিডিওতে ধারণ করো। তারপর সব কটি জোড়া লাগিয়ে একটা ছোটখাটো ভিডিও ক্লিপ বানিয়ে নাও। কী? ভিডিও এডিটিং পারো না? তবে দেরি না করে শিখে নাও। অ্যাডোব প্রিমিয়ার প্রো, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, এ ধরনের সফটওয়্যারগুলোর খুঁটিনাটি গবেষণা করো অবসরের এই সময়ে। এ জন্য তোমাকে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে না। এক মাসের ফ্রি ট্রায়াল দিয়েই শিখে নিতে পারবে। তা ছাড়া, মাইক্রোসফট্ এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট—এগুলোতেও দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে পারো বসে না থেকে।
৮. ডায়েরির পাতায় প্রতিদিন
হ্যারি পটারখ্যাত তারকা এমা ওয়াটসনকে যদি চিনে থাকো, তবে অনেকে এটাও নিশ্চয়ই জানো, এমা ওয়াটসন শত ব্যস্ততাতেও ডায়েরি লিখতে ভালোবাসেন। প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ডায়েরি লেখার অভ্যাস তার ছোটবেলা থেকেই। তার রয়েছে ত্রিশটির বেশি ডায়েরি! ভাবা যায়? নিজেকে সময় দেওয়া খুব জরুরি। আর ডায়েরি লেখার মাধ্যমে তুমি নিজেকে দিতে পারো একান্ত কিছু সময়। কাজেই, ডায়েরির পাতায় প্রতিদিন কিছু সময় লেখো।
৯. আরও যা যা করতে পারো…
যদি মনে হয়, নাহ, এসব কাজ করতে আলসেমি লাগছে, তবে—
পরিবারের সবার সঙ্গে গল্প করো, তাদের সময় দাও।
মা–বাবাকে ঘরের কাজে সহায়তা করো
পছন্দের মুভি কিংবা সিরিজ দেখো
খেলতে পারো দাবা কিংবা লুডু
নিজের বাসায় লাগানো গাছের পরিচর্যা করো
বাদ্যযন্ত্র শেখো কিংবা মন খুলে গান গাও।
দুশ্চিন্তা বা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে দিন কাটানো মোটেও কাজের হবে না। তাই সতর্ক থেকে সময় কাটাও পছন্দের কোনো ভালো কাজ করে। কখন সময় কেটে যাবে, দেখবে, টেরও পাবে না…