প্রতিবছরের মতো এবারও ওয়ার্ল্ড নেচার ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডস প্রকৃতির সেরা ছবিগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে একটি। প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে ‘ওয়ার্ল্ড নেচার ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডস’ প্রতিযোগিতা বিশেষ আকর্ষণ। প্রতিবছরের মতো এবারও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্দী হয়েছে অসাধারণ কিছু ছবিতে। এ প্রতিযোগিতায় ১৪টি ক্যাটাগরিতে কয়েক হাজারের মতো ছবি জমা পড়েছে। ২০২৪ সালের এ প্রতিযোগিতায় বিশ্বব্যাপী ৪২ ফটোগ্রাফারের ছবি বিজয়ী হয়েছে। ওয়ার্ল্ড নেচার ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪-এর সব ক্যাটাগরি মিলিয়ে সেরা হয়েছে যুক্তরাজ্যের ট্রেসি লন্ডের ক্যামেরাবন্দী করা ‘আন্ডারওয়াটার গ্যানেটস’ শিরোনামের ছবিটি। স্কটল্যান্ডের শেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের সাগরের তলদেশে একটি মাছের জন্য দুটি গ্যানেট পাখির লড়াইয়ের একটি চমৎকার ও নাটকীয় ছবি তিনি তুলেছেন। কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য ‘ওয়ার্ল্ড নেচার ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডস’–এর অন্য সব ক্যাটাগরির মধ্য থেকে বাছাইকৃত ১০টি ছবি নির্বাচন করা হয়েছে।
‘আন্ডারওয়াটার গ্যানেটস’ শিরোনামের ছবিতে দুটি গ্যানেট পাখি সাগরতলে একটি মাছের জন্য লড়াই করছে। এমন নাটকীয় ও উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তে ছবিটি ক্যামেরাবন্দী করতে সক্ষম হন যুক্তরাজ্যের ট্রেসি লন্ড। হাজার হাজার ছবিকে পেছনে ফেলে ওয়ার্ল্ড নেচার ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪ বিজয়ী হয়েছে এই ছবি। স্কটল্যান্ডের শেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে ছুটি কাটাতে গিয়ে এই অসাধারণ ছবি তোলেন ট্রেসি। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে জানান, ১ হাজার ৮০০–এর বেশি ছবি তুলেছেন ওই দিনেই। এর মধ্য থেকে মাত্র দুটি ছবি তাঁর পছন্দ হয়েছে।
‘রিচিং ফর দ্য টপ’ শিরোনামের ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি হাতির পাল। এদের মধ্য থেকে একটি হাতি দুই পায়ে ভর দিয়ে গাছের মগডাল থেকে পাতা পেড়ে আনছে। আর অন্য হাতিরা নিচে দাঁড়িয়ে খাবারের অপেক্ষায় রয়েছে। জিম্বাবুয়ের মানা পুলস ন্যাশনাল পার্ক থেকে এই অসাধারণ ছবি ক্যামেরাবন্দী করেছেন লুকাস ওয়াল্টার। বন্য প্রাণীর আচরণ বিভাগে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী ছবি এটি।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি আবাসিক বাড়ির বারান্দায় ঝুলছে একটি অর্ধভাঙা ড্রাগনের শোপিস। সেটার ভেতরে একটি সানবার্ড দক্ষ কারিগরি দিয়ে তৈরি করেছে একটি বাসা। ছবিটি ‘ক্রিয়েটিভ ভিশন’ বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। ছবিটি প্রকৃতির অসাধারণ সৃজনশীলতা ও অভিযোজন ক্ষমতার প্রমাণ। ছবিটি তুলেছেন রয় ভিজেনার।
ছবিতে উত্তাল ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা একদল স্যালি লাইটফুট কাঁকড়া পুয়ের্তো এগাস, সান্তিয়াগো দ্বীপের গ্যালাপাগোসের লাভাঘেরা উপকূলরেখা আঁকড়ে ধরে রেখেছে। স্যালি লাইটফুট কাঁকড়া ছোট, উজ্জ্বল রঙের, যারা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সমুদ্র উপকূলে বাস করে। এরা এদের শক্তিশালী পা ব্যবহার করে লাভাঘেরা শিলায় আঁকড়ে উত্তাল ঢেউয়ের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যায়। এই দুর্দান্ত ছবি ক্যামেরাবন্দী করেছেন বিল ক্লিপ।
আগ্নেয়গিরির এ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গিরিমুখের গর্তকে ঘিরে থাকা একটি বিশাল লেন্টিকুলার মেঘ ও অপরূপ লাল আভা। লেন্টিকুলার মেঘ, যা ‘স্ট্যান্ডিং লেন্স ক্লাউড’ নামেও পরিচিত, পাহাড় বা পর্বতের ওপরে তৈরি হয়, যখন বাতাস ওপরে উঠে ঠান্ডা হয়ে ঘনীভূত হয়। এটি চিলির ভিলারিকার একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, যা আন্দিজ পর্বতমালার দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত। ফ্রান্সিসকো নেগ্রোনির তোলা অসাধারণ ছবিটি প্ল্যানেট আর্থের ল্যান্ডস্কেপ ও এনভায়রনমেন্টস ক্যাটাগরিতে দ্বিতীয় স্থানে।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার আটলান্টায় একটি গাছের ডালে বসে থাকা কুকু ওয়াস্পের অভাবনীয় ছবি এটি। এর উজ্জ্বল বর্ণের জন্য একে এমেরাল্ড ওয়াস্প বা পান্না ওয়াস্পও বলা হয়। ছবিটি ক্যামেরাবন্দী করেছেন কেভিন ব্ল্যাকওয়েল।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি কালো ব্যাঙ মাছ বা অ্যান্টেনারিয়াস স্ট্রিয়াটাস, যাকে বেশ বিরক্ত ও রাগান্বিত মনে হচ্ছে। বাস্তবেও এদের চেহারা এমন অদ্ভুত। এটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্থানীয় একটি বিষাক্ত মাছ। এটি তার মাথার ওপরে তন্তুগুলোর জন্য পরিচিত, যা এটি শিকারকে আকর্ষণ করতে ব্যবহার করে। ছবি তুলেছেন নিকোলাস রেমি। বন্য প্রাণীর প্রতিকৃতি বিভাগে বিজয়ী এ ছবি।
ভারতের মহারাষ্ট্রের আম্বোলিতে তোলা এ ছবিতে একটি পুরুষ রাত ব্যাঙ বা নিক্টিবাট্রাকাস ডিমের ছোপের সামনে মুখ ফুলিয়ে ডাকছে। এই প্রজাতির ব্যাঙ ছোট আকৃতির, যারা বৃক্ষবাসী ব্যাঙের একটি প্রজাতি। এদের ভারতের পশ্চিম অঞ্চলে পাওয়া যায়। ছবিটি তুলেছেন কার্তিক আক। বন্য প্রাণীর আচরণ বিভাগে ছবিটি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে।
এই বায়বীয় দৃশ্য আশ্চর্যজনক। আইসল্যান্ডীয় ল্যান্ডস্কেপে এর অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে বরফের নদী, জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি এবং নীল জলের ঝরনা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে নীল জলের রাশি, বরফের নদীর বিনুনি ও সোনালি বালু। এই অসাধারণ ছবি ক্যামেরাবন্দী করতে সক্ষম হয়েছেন মিকি স্পিটজার। নেচার আর্ট ক্যাটাগরি বিভাগের বিজয়ী ‘অর্থ’স ট্রেজার’ শিরোনামের ছবিটি।
ছবিটি প্রথমে দেখে মনে হবে, এটি একটি সবুজ রঙের প্যাঁচা। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি উদ্ভিদ, যা দেখতে কিছুটা প্যাঁচার মুখের মতো। এই পরজীবী উদ্ভিদের নাম ‘থিসমিয়া থাইথোঙ্গিয়ানা’। এরা অন্যান্য উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। এটি থাইল্যান্ডের স্থানীয় বনভূমিতে পাওয়া যায়। ২০১৮ সালে থাইল্যান্ডের বনভূমিতে ‘থিসমিয়া থাইথোঙ্গিয়ানা’ প্রজাতির উদ্ভিদটি আবিষ্কৃত হয়েছিল। ছবিটি ক্যামেরাবন্দী করেছেন চাত্রি লের্টসিটান্নাকর্ন। গাছপালা ও ছত্রাক বিভাগের বিজয়ী ছবি এটি।