বাগানে পাওয়া গেল ভাইকিংদের তরবারি
সম্প্রতি নরওয়ের এক পরিবার তাঁদের বাড়ির পেছনের বাগান খনন করতে গিয়ে একটি তরবারি পেয়েছেন। ওই পরিবারের বাস নরওয়ের অসলো শহর থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি হ্রদের পাশে। তাদের পাওয়া তরবারিটি ১ হাজার ১০০ বছরের পুরানো। ভাইকিংদের সময়কার তরবারি এটি। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, কোনো ভাইকিং সৈন্যকে এই তরবারিসহকারে কবর দেওয়া হয়েছিল।
নরওয়ের দক্ষিণাঞ্চলের একটি রাজ্য অ্যাগডার কাউন্টি। সেখানকার স্থানীয় সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক জোয়াকিম উইন্টারভোল মতামত দিয়েছেন তরবারিটি সম্পর্কে। তিনি জানান, ৮০০ শতকের শেষের দিকে বা ৯০০ শতকের শুরুর দিকে এই সমাধি তৈরি করা হয়। এ সময় ভাইকিংদের যুগ ছিল। তরবারিটি ভেঙে দুই টুকরা হয়ে গেছে। হাতলসহ তরবারিটির দৈর্ঘ্য ৭০ সেন্টিমিটার।
কবরে তরবারি ছাড়া পাওয়া গেছে ঘোড়ার পিঠে ব্যবহারের জন্য বানানো একটি দীর্ঘ বরশাও। এ ধরনের বরশাকে বলে ল্যান্স। এ ছাড়া কাচের তৈরি মালা, সোনায় আবৃত একটি বেল্ট ও একটি ব্রোঞ্জের ব্রোচ। ব্রোচ বলতে একধরনের কারুকাজ করা পিনকে বোঝায়। এই পিন কোনো কিছু আটকানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে ওই কবরে কোনো মানুষ বা প্রাণীর দেহাবশেষ পাওয়া যায়নি।
প্রত্নতাত্ত্বিক জোয়াকিম উইন্টারভোল এ ব্যাপারে বলেন, নিদর্শনগুলো দেখে বোঝা যায়, কবরে শায়িত ব্যক্তি কোনো ভাইকিং ছিলেন। ল্যান্স থেকে বোঝা যায় যে তিনি ঘোড়ার পিঠে থেকে যুদ্ধ করতেন। আর সোনায় মোড়ানো বেল্ট থেকে এটাও বোঝা যায় যে তিনি সম্পদশালী ছিলেন।
বাড়ির মালিক ওডবর্জন হোলমু হেইল্যান্ড বলেন, ‘বাগানে খুব বেশি খনন করার ইচ্ছা আমার ছিল না। ভেবেছিলাম, বাগানের পেছনের দিকে কিছুটা জায়গা পরিষ্কার করে রাখব। পরিষ্কার করতে গিয়ে একটি পাথরের খণ্ড দেখতে পাই। হয়তো ওই কবরের ওপর পাথরটি ছিল। তখন পাথর পড়ে থাকা জায়গায় একটু খুঁড়তেই তরবারির বাট বেরিয়ে আসে। তখন আমি বুঝতে পারি, এটা হয়তো কোনো ভাইকিংয়ের তরবারি। কারণ, ১৯৩০-এর দশকে কাছাকাছি একটি অঞ্চলে ভাইকিং তরবারি, বরশা, কাচের মালা ও একটি ঘোড়ার ব্রিডল পাওয়া গিয়েছিল। তাই আমি খনন বন্ধ করে স্থানীয় প্রত্নতাত্ত্বিকদের ডাকি।’
হ্যাঁ, ১৯৩০-এর দশকে আসলেই ওই অঞ্চলে আরও এক ভাইকিংয়ের কবর পাওয়া গিয়েছিল। তাই হেইল্যান্ড মনে করেন, তাঁর ধারণা সম্পূর্ণ ঠিক ছিল। তবে হেইল্যান্ডের বাড়িতে এর আগে কখনো এ রকম কোনো কবর পাওয়া যায়নি। আগের পাওয়া কবরের মৃত ব্যক্তির সঙ্গে এই কবরের মৃত ব্যক্তির কোনো সম্পর্ক ছিল কি না, তা–ও নিশ্চিত হতে পারেনি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। তবে দুটি কবরে পাওয়া বস্তুগুলোর মধ্যে অনেক মিল রয়েছে।
প্রত্নতাত্ত্বিক জোয়াকিম উইন্টারভোল আরও বলেন, এটা খুবই সম্ভব যে কোনো ভাইকিং যোদ্ধাকে এখানে কবর দেওয়া হয়েছিল। হয়তো এখানেই তাঁরা রাজত্ব করতেন। যেহেতু কবরে কোনো হাড় খুঁজে পাওয়া যায়নি, তাই এখনই বোঝা যাচ্ছে না যে কীভাবে যোদ্ধাকে কবর দেওয়া হয়েছিল। তবে কবরটি পূর্ব-পশ্চিম অক্ষে খনন করা হয়েছে বলে মনে হয়। এটা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
খুবই নৃশংস আর ভয়ংকর যোদ্ধা ছিলেন ভাইকিংরা। জীবনের কোনো মায়া তাঁদের ছিল না। যুদ্ধে গিয়ে মারা পড়তেন হাজার হাজার যোদ্ধা। সাধারণ মৃত যোদ্ধাদের আর আলাদাভাবে এনে কবর দেওয়া হতো না। তবে কোনো ভাইকিং রাজা বা রাজার পরিবারের মানুষ নিহত হলে মর্যাদার সঙ্গে তাঁদের কবর দেওয়া হতো। সাধারণত যে অঞ্চলে মারা যেতেন তাঁরা, সেখানেই দেওয়া হতো কবর। সঙ্গে কবরে দিয়ে দেওয়া হতো তাঁদের ব্যবহৃত তরবারি ও অন্যান্য জিনিস। ভাইকিংরা বিশ্বাস করতেন, মৃত্যুর পর তাঁরা আবার বেঁচে উঠবেন। সেই জীবনের জন্য তাঁদের তরবারি সঙ্গেই দিয়ে দেওয়া হতো। কাজেই এই কবরে যে ভাইকিং ছিলেন, তিনি হয়তো কোনো সাধারণ যোদ্ধা ছিলেন না। হতে পারে কোনো রাজা বা রাজার পরিবারের সদস্য কিংবা আত্মীয়স্বজন। তা না হলে এই যোদ্ধার ভাগ্যে কবর জুটত না।