১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার, সকাল ৯টা ৪০ মিনিট। উত্তরা থেকে মতিঝিলের উদ্দেশে আসা যাত্রীরা আগারগাঁও স্টেশনে এসে জানতে পারলেন, যাত্রা আপাতত এখানেই সমাপ্ত! ট্রেন আর সামনে যাবে না। না যাওয়ার কারণটা জানা গেল একটু পর। রেলপথটাই নাকি দেবে গেছে খামারবাড়ি অংশে। মাথার ওপর দিয়ে গেছে যে মেট্রো, সেটা আবার দেবে যায় কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতেই এই লেখা।
পিলার ও গার্ডারের মধ্যে থাকা একটি রাবার প্যাড খুলে পড়ে যাওয়ার কারণে এ অবস্থা হয়েছে মেট্রোরেলের। একই দিনেই অবশ্য খুলে যাওয়া রাবার প্যাডটি যথাস্থানে আবারও বসানো হয়। এরপর রাত ৮টা ২৫ মিনিটে স্বাভাবিক হয় মেট্রো চলাচল। অর্থাৎ রাত থেকেই মেট্রো উত্তরা থেকে মতিঝিল যাওয়া শুরু করেছে। আজ সব স্বাভাবিকই আছে। তবে এই অংশে মেট্রো সকালে ধীরে চলেছে।
সমস্যা হলো, সংবাদমাধ্যমে মেট্রোরেলের এ ঘটনার বর্ণনা এসেছে একটু ভিন্নভাবে। কেউ বলছেন, পিলার ও গার্ডারের মধ্যে থাকা রাবার প্যাড খুলে পড়ে গেছে। কেউ বলছে, ভায়াডাক্ট ও পিলারের মধ্যে থাকা রবার গার্ড পড়ে গেছে। ধন্দটা ভায়াডাক্ট ও গার্ডারের মধ্যে। কোনটা গার্ডার আর কোনটা ভায়াডাক্ট। চলো জানার চেষ্টা করি।
পিলার তো আমরা সবাই চিনি। মাটি থেকে ওপরে স্থাপিত রেললাইনকে ধরে রাখার জন্য যেসব খুঁটি তৈরি করা হয়েছে, সেগুলোই পিলার। পিলারের ওপরের অংশে থাকে ভায়াডাক্ট। ভায়াডাক্ট দেখতে অনেকটা ইংরেজি ‘U’ অক্ষরের মতো। এর ওপরেই মূলত রেললাইন বসানো থাকে। ভায়াডাক্টের নিচে ভার সঠিকভাবে পিলারের ওপর ছড়ানোর জন্য একটি কাঠামো ব্যবহৃত হয়। সাধারণ বাক্সের মতো দেখতে এই অংশটিকে বলে গার্ডার। বিভিন্ন কাঠামোতে এর আকৃতির ভিন্নতা থাকতে পারে। সেতু বা উড়ালসড়ক তৈরিতে ভায়াডাক্ট, গার্ডার উপাদান ব্যবহৃত হয়। মূলত ভায়াডাক্টের সঙ্গেই লাগানো থাকে গার্ডার।
মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে, পিলার ও গার্ডারের মধ্যে থাকে রাবার বা স্থিতিস্থাপক উপাদানের তৈরি একটি প্যাড। একে বিয়ারিং প্যাডও বলা হয়। এই প্যাড ব্যবহারের কারণ হলো, মেট্রো লাইনের ভার আরও স্থিতিস্থাপকভাবে যেন পিলারে ছড়ায়। ট্রেন চলাচলের কারণে তৈরি কম্পন যেন পিলারের ক্ষতি না করে, সে জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। এতে পুরো লাইনের স্থায়িত্ব বেড়ে যায়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনায় এই রাবার প্যাডটি খুলে পড়ে গিয়েছিল। তবে কেন এটি পড়ে গিয়েছে, সেই বিষয়ে এখনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
মেট্রোরেল চলাচলে বিঘ্নতার সঠিক কারণ অনুসন্ধানের জন্য ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেলে নিশ্চিতভাবে জানা যাবে, কেন এ বিপর্যয় তৈরি হয়েছিল।
সূত্র: প্রথম আলো, ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইনোভেটিভ সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (IJISET)