২০২৪ ওয়াইআর৪ গ্রহাণু যে চার কারণে পৃথিবীতে আঘাত হানবে না
মহাকাশ গবেষকেরা ২০২৪ ওয়াইআর৪ (2024 YR4) নামক একটি গ্রহাণুকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তুলনামূলক ছোট হলেও এই গ্রহাণুটি মহাকাশে লুকিয়ে থাকা বিপদের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। ২০৩২ সালে গ্রহাণুটি পৃথিবীতে আঘাতের সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ চলছে বিশ্বজুড়ে। বিষয়টি দ্য গার্ডিয়ানে বিস্তারিত লিখেছেন অ্যাস্টরয়েড হান্টারস বইয়ের লেখক ক্যারি নুজেন্ট। তিনি অলিন কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কম্পিউটেশনাল পদার্থবিজ্ঞান ও গ্রহবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি বলছেন, চার কারণে এই গ্রহাণুকে নিয়ে চিন্তিত নন তিনি।
অ্যাটলাস স্কাই সার্ভে টিম নিয়মিত পৃথিবীর কাছাকাছি মহাকাশ অনুসন্ধান করে। ২০২৪ সালে তাঁরা ১৬৭টি বস্তু খুঁজে পেয়েছেন। গত বছরের শেষে তাঁরা পৃথিবীর কাছাকাছি একটি নতুন গ্রহাণু আবিষ্কার করেছেন। তাঁদের করা নতুন একটি আবিষ্কার মহাকাশ অনুসন্ধানকারীদের নজর কেড়েছে। ৪০ থেকে ৯০ মিটার আকারের ২০২৪ ওয়াইআর৪ নামক গ্রহাণুটি ২০৩২ সালে পৃথিবীতে আঘাত হানার সামান্য সম্ভাবনা দেখা গেছে।
গত জানুয়ারিতে গ্রহাণুটির আঘাতের সম্ভাবনা ছিল ১ শতাংশের একটু বেশি। ফেব্রুয়ারির শুরুতে এটি ২.৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। এই সপ্তাহে নাসার জেপিএল সেন্টার ফর নিয়ার আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজ এটিকে ৩.১ শতাংশে উন্নীত করেছে। অর্থাৎ ৩২টির মধ্যে ১টি সম্ভাবনা।
কিন্তু ক্যারি নুজেন্ট বলছেন, আমি এখনো চিন্তিত নই চারটি কারণে। প্রথমত, সম্ভাব্য আঘাতের তারিখ ডিসেম্বর ২০৩২। তাই প্রস্তুতির জন্য আমাদের সময় আছে।
দ্বিতীয়ত গ্রহাণুটি গ্রহাণুদের তুলনায় খুব বড় নয়। ২০১৩ সালে রাশিয়ার চেলিয়াবিন্স্কে যে ছোট গ্রহাণুটি অপ্রত্যাশিতভাবে বিস্ফোরিত হয়েছিল এবং ক্ষতি করেছিল, তার আকার ছিল প্রায় ২০ মিটার। সেই ঘটনায় কেউ মারা যায়নি। ২০২৪ ওয়াইআর৪ সেটির চেয়ে বড় হলেও খুব বড় না। ১০ কিলোমিটার ব্যাসের বিশাল গ্রহাণু, যার আঘাতে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছিল, তার তুলনায় এটি খুব ছোট। যদি ২০২৪ ওয়াইআর৪ পৃথিবীতে আঘাত করে, তবে এটি ছোট একটি শহর ধ্বংস করতে পারবে। বিশ্বব্যাপী এটি ক্ষতি করবে না। তাই প্রস্তুতির জন্য আমাদের হাতে কয়েক বছর সময় থাকলে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
তৃতীয়ত, আতঙ্কিত না হওয়ার আরেকটি কারণ হলো পৃথিবীপৃষ্ঠের বেশিরভাগ অংশই পানি। যদিও গ্রহাণু-সৃষ্ট সুনামি নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন, তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ একমত হবেন যে, ৪০ থেকে ৯০ মিটার আকারের একটি গ্রহাণু মহাসাগরে পড়লে মানুষ বা সম্পত্তির কোনো বড় ক্ষতি হবে না।
চতুর্থত, আমরা এখনো এই গ্রহাণুটির সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছি। এই গ্রহাণুটির আঘাত হানার সম্ভাবনা বিশেষজ্ঞরা কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবহার করে হিসাব করছেন। ২০২৪ ওয়াইআর৪ কোথায় যেতে পারে তা নির্ধারণের চেষ্টা করছে। এখানে সময়ের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি গ্রহাণুর পৃথিবীতে আঘাত হানার জন্য শুধু গ্রহাণুর কক্ষপথ ও পৃথিবীর কক্ষপথের ছেদ হওয়া যথেষ্ট নয়। গ্রহাণু ও পৃথিবীকে সৌরজগতের একই স্থানে, একই সময়ে উপস্থিত থাকতে হয়।
সম্ভাব্য কক্ষপথকে একটি রেখা হিসেবে আমরা কল্পনা করতে পারি। ডিসেম্বর ২০৩২ সালে গ্রহাণুটির অবস্থান কোথায় হতে পারে তা অনুমান করা যায়। দুইদিন আগে এই রেখার ৩.১ শতাংশ পৃথিবীপৃষ্ঠের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল। এরপর এটি কমে হয়েছে ০.২৮ শতাংশ। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই গ্রহাণুকে আরও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আরও নিশ্চিত হতে পারবেন, এর প্রকৃত পথ কোনটি হবে। এই সম্ভাব্য কক্ষপথের রেখা ধীরে ধীরে ছোট হবে। তখন আঘাতের সম্ভাবনা কমে দ্রুত শূন্যে নেমে আসতে পারে। এর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। দেখতে হবে ২০২৪ ওয়াইআর৪-এর ক্ষেত্রে কী ঘটে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান