ক্রিকেটের ধারাভাষ্যকারেরা কত টাকা পান
‘আম্পায়ারকে অতিক্রম করে বল করলেন বোলার। এবার কিন্তু ব্যাটে–বলে হয়েছে। চমৎকার শট। কবজির মোচড়ে বল পাঠিয়ে দিলেন থার্ডম্যান অঞ্চল দিয়ে। চার রান হতে পারে। না, বল ধরে ফেলেছেন ফিল্ডার। তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে একটি রান।’ তুমি ক্রিকেটের ভক্ত হলে এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝেছ, বাংলাদেশ ব্যাট করছে। আর ধারাভাষ্য দিচ্ছেন চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত। ক্রিকেটের ভক্ত হয়েও রেডিও বা টেলিভিশনে তাঁর কণ্ঠ শোনেনি, এমন মানুষ কমই আছে।
মাঠের খেলা আমরা চোখ দিয়ে দেখি ঠিকই, কিন্তু কানে শুনি ধারাভাষ্যকারদের কথা। ক্রিকেটের সঙ্গে ধারাভাষ্য না হলে যেন ঠিক জমে না। চার, ছয় বা উইকেটের সময় ধারভাষ্যকারদের উত্তেজিত কণ্ঠস্বর আমাদের আরও বেশি আনন্দ দেয়। তাই কৌতূহলবশত তোমার মাথায় একটা প্রশ্ন আসতেই পারে। কত টাকা আয় করেন এই ধারাভাষ্যকারেরা?
এককথায় এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, ধারাভাষ্যকারদের আলাদা কোনো বেতন থাকে না। প্রতিটি টুর্নামেন্টে বা সিরিজে তাঁদের আয় কমবেশি হতে পারে। তা ছাড়া ধারাভাষ্যতে অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে কে কত টাকা পাবেন। অনেক জনপ্রিয় ক্রিকেটার অবসর নেওয়ার পর ধারাভাষ্যকার হিসেবে নাম লেখান। তাঁরাও তুলনামূলক বেশি টাকা পান। তবে প্রতি সিরিজেই সেই টাকার পরিমাণ পরিবর্তন হয়।
২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের কথাই ধরা যাক। আইসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্টে নির্দিষ্ট কয়েকজন ধারাভাষ্যকার আগে থেকেই ঠিক করা হয়। গ্রেড অনুসারে তাঁদের টাকা দেওয়া হয়। তবে সেই গ্রেড বা অর্থের পরিমাণ কখনো উল্লেখ করে না আইসিসি। এ ছাড়া টিভি চ্যানেল থেকেও তাঁরা টাকা পান। ওই বিশ্বকাপে গ্রেড ‘এ’তে থাকা সঞ্জয় মাঞ্জরেকার, নাসের হুসেন ও মাইকেল ক্লার্করা পেয়েছেন এককালীন পাঁচ কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া ম্যাচপ্রতি পেয়েছেন ২৫ লাখ টাকা। গ্রেড ‘বি’তে থাকা সৌরভ গাঙ্গুলী, হার্শা ভোগলে, ওয়াসিম আকরাম, ব্রেন্ডন ম্যাককালামরা পেয়েছেন প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ও ম্যাচপ্রতি ২১ লাখ টাকা। আর গ্রেড ‘সি’তে থাকা কুমার সাঙ্গাকারা ও মাইকেল হোল্ডিংয়ের মতো ধারাভাষ্যকারেরা পেয়েছেন এককালীল ৩ কোটি টাকা আর ম্যাচপ্রতি ১৮ লাখ টাকা।
ভারতের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া ধারাভাষ্যকারও সঞ্জয় মাঞ্জরেকার। প্রতি সিরিজের জন্য তিনি পান প্রায় চার কোটি রুপি। পাশাপাশি ওই সিরিজের প্রতিটি ম্যাচের জন্য আরও পান ১৮ লাখ রুপি। ম্যাচপ্রতি প্রায় সমান টাকা উপার্জন করেন সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড় ও হার্শা ভোগলের মতো আন্তর্জাতিক মানের ধারাভাষ্যকারেরা।
সম্প্রতি ভারতের আরেক ধারাভাষ্যকার আকাশ চোপড়া এক ইউটিউব চ্যানেলে সাক্ষাৎকারের সময় তাঁদের উপার্জন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারতে জুনিয়র ধারাভাষ্যকারেরা প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার টাকা করে পারিশ্রমিক পান। তবে অভিজ্ঞ ধারাভাষ্যকারেরা প্রতিদিন ৮-১৪ লাখ টাকা করে পারিশ্রমিক পান।
তবে আইপিএল এলে বদলে যায় টাকার পরিমাণ। এই টুর্নামেন্টে যাঁরা ইংরেজিতে ধারাভাষ্য দেন, তাঁরা প্রায় ৩ থেকে ৬ কোটি টাকা পান। তবে হিন্দিতে যাঁরা ধারাভাষ্য দেন, তাঁদের পারিশ্রমিক কিছুটা কম। তাঁরা ১ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা পান।
তবে বাংলাদেশের ধারাভাষ্যকারেরা ম্যাচ বা সিরিজপ্রতি কত টাকা পান, তা কখনো প্রকাশ্যে আসেনি। তাই এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয়।