দীর্ঘ চার মাস অন্ধকারে ডুবে আছে পুরো শহর। রাতের বেলায়ও আলো নেই। প্রচণ্ড গরমে পাখা চালিয়ে বাতাস খাওয়ার পরিস্থিতি তো নেই-ই।
গত বছরের অক্টোবরে শুরু হয় ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ। ইসরায়েলি হামলায় গাজার বেশির ভাগ ভবনই মাটির সঙ্গে মিশে যায়। এর মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক অবকাঠামোগুলোও। তখন থেকেই ফিলিস্তিনের এই উপত্যকার বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যা এখনো বহাল।
পুরো শহর যখন অন্ধকারে, তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত এ শহরে পকেট ডায়নামো আর টিনের পাখা ব্যবহার করে ছোট্ট পরিসরে আলো ফিরিয়ে এনেছে এক শিশু। নাম হোসসাম আল আত্তা, বয়স ১৫। হোসসাম ও তার পুরো পরিবার যুদ্ধের কারণে গাজার উত্তর অঞ্চল থেকে পালিয়ে এসে রাফার শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের তাঁবুগুলোর কোথাও কোনো আলো নেই, রাতের বেলা ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে থাকে। বিমানের শব্দে, গুলির শব্দে ভয়ে কেঁপে ওঠে ছোট ছোট শিশুরা।
হোসসামের ছোট ছোট দুই ভাগ্নে রাতে ভয়ে কেঁদে ওঠে। এসব দেখে সে নিজেদের তাঁবুতে আলো জ্বালানোর বুদ্ধি খোঁজে। পালিয়ে আসার সময় তারা কয়েকটি কাপড় ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে আনতে পারেনি। তাই সে ভাঙারির দোকান থেকে ১ শেকেল (ফিলিস্তিনি মুদ্রা) দিয়ে একটি পকেট ডায়নামো কিনে আনে। সংগ্রহ করে টিনের ফ্যান। ডায়নামো হলো একধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্র, যা যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তর করে। হোসসাম ডায়নামোটিকে টিনের পাখার সঙ্গে যুক্ত করে তাঁবুর ওপরে স্থাপন করে এবং তারের মাধ্যমে তাদের তাঁবুতে এর সংযোগ দেয়। বাতাসের কারণে পাখা ঘুরলে ডায়নামোটিও ঘোরে, আর ডায়নামো ঘুরলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। বাতাস যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ হোসসামরা আলো পাবে।
আল-জাজিরার সংবাদ থেকে জানা গেছে, তার এই উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডের জন্য আশ্রয়স্থলের মানুষেরা তার নাম দিয়েছেন ‘গাজার নিউটন’। সে মনে করে, ব্যাটারির মাধ্যমে ডায়নামোকে রিচার্জ করতে পারলে আরও বেশি আলো পাওয়া যেত। দুর্ভাগ্যবশত হোসসামদের বর্তমানে সেই অবস্থা নেই। তার ইচ্ছা, ফিলিস্তিনিদের কথা মানুষ জানুক। গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হোক।