এই গরমে পশুপাখিরাও কি হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিতে

ছবি: আনিস মাহমুদ

গত কয়েক দিন বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এই তাপপ্রবাহের তীব্রতা থেকে জনজীবনকে বাঁচাতে সারা দেশে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর। প্রচণ্ড গরমে যেমন অতিষ্ঠ জনজীবন, তেমনি বিপর্যস্ত প্রাণীকুলও। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বাস করা কুকুর, বিড়াল, পাখি ইত্যাদি। এই প্রচণ্ড গরমে বেশি বিপদে পড়েছে। এই অস্বাভাবিক গরমের কারণে বাসাবাড়ির পোষা প্রাণী, পাখির পাশাপাশি রাস্তাঘাটের পশুপাখিরাও হিটস্ট্রোক ও মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে।

হিটস্ট্রোক হলো একটি জরুরি অবস্থা, যখন শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায় এবং ঘামের মাধ্যমে তাপ বের হওয়ার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ফলে শরীরের অতিরিক্ত তাপ বের হতে পারে না। এভাবে মস্তিষ্ক, হার্ট, কিডনি এবং অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানার সাবেক সহকারী পরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার ভেলায়ন সুব্রামানিয়াম একটি ওয়েব পোর্টালে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, এই প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোক মানুষের মতোই প্রাণীদের জন্যও মারাত্মক হতে পারে। তীব্র গরমে প্রাণীদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া বা সক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে এদের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদি অবিলম্বে চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন

সুব্রামানিয়াম আরও বলেন, ‘বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বসবাসকারী কুকুর, বিড়াল, পাখি ইত্যাদি এই তীব্র গরমে বেশি বিপদে পড়ে। কারণ, শহরাঞ্চলে প্রাকৃতিক পরিবেশের অভাব থাকে এবং তীব্র তাপমাত্রা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এদের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে না।’

লন্ডনের রয়্যাল ভেটেরিনারি কলেজ তাদের একটি গবেষণায় বলেছে, গ্রীষ্মের তীব্র তাপমাত্রায় হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকা কিছু প্রাণী রয়েছে। যেসব প্রাণীর ওজন বেশি, বয়স বেশি, লম্বা লোমযুক্ত প্রাণী, শাবক ছানা, অসুস্থ প্রাণী বেশি ঝুঁকিতে থাকে। পোষা প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কুকুরের চ্যাপটা মুখের প্রজাতি প্যাগ ও ফ্রেঞ্চ বুলডগ আর লম্বা লোমযুক্ত প্রজাতি বিড়াল পারসিয়ান এবং মেইন কুন।

বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বসবাসকারী কুকুর, বিড়াল, পাখি ইত্যাদি এই তীব্র গরমে বেশি বিপদে পড়ে। কারণ, শহরাঞ্চলে প্রাকৃতিক পরিবেশের অভাব থাকে এবং তীব্র তাপমাত্রা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এদের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে না।
ডাক্তার ভেলায়ন সুব্রামানিয়াম

পোষা প্রাণীদের মধ্যে কুকুর ও বিড়ালের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ প্রায় একই ধরনের। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে— স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি অনেক বেড়ে যায়। অনেক সময় হাঁপানি লক্ষণ দেখা দেয়, জিব ও নাক শুকিয়ে যায়, শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক চেয়ে বেশি থাকে, স্বাভাবিক মল–মূত্রত্যাগের পরিমাণ কমে যায়, প্রাণীর মধ্যে চঞ্চলতা কমে আসে, চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়, বমি ও ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।

পোষা পাখিও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিতে আছে
ছবি: সাদ্দাম হোসেন

যদি মনে হয় যে প্রাণীটির হিটস্ট্রোক হয়েছে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে পশুচিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তবে হিটস্ট্রোক যেহেতু একটি জরুরি অবস্থা, তাই দ্রুত চিকিৎসা না করা হলে মারাত্মক হতে পারে। হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য প্রাণীর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে।

প্রথমে অসুস্থ প্রাণীটিকে ঠান্ডা, ছায়াযুক্ত জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। প্রাণীকে আস্তে আস্তে পানি পান করানোর চেষ্টা করতে হবে। তারপর সম্ভব হলে প্রাণীটির সম্পূর্ণ শরীর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। এই সময় অনবরত বাতাস করতে হবে। প্রাণীটিকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। যদি প্রাণীটির অবস্থা আরও অবনতি বা খারাপ হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রাণী চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এই পদক্ষেপগুলো কেবলমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য এবং প্রাণী চিকিৎসকের চিকিৎসার বিকল্প নয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রাণী চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন

এমন পরিস্থিতি এড়াতে এই প্রচণ্ড গরমে পোষা প্রাণীর যত্ন নেওয়া সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাতে হবে। বাসাবাড়িতে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। পানির পাত্রগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। রোদে পানির পাত্র রাখা যাবে না। গরমে নিয়মিত পোষা প্রাণীকে গোসল করাতে হবে। প্রাণীকে তাজা খাবার দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

এ ছাড়াও পোষা প্রাণীদের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি, রাস্তার পশুপাখিদের জন্যও পানি ও ছায়ার ব্যবস্থা করা জরুরি। এই গ্রীষ্মে সব প্রাণীর জন্য সুরক্ষা এবং আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।

আরও পড়ুন