প্রথমবারের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস শোষণকারী অণু আবিষ্কার
পৃথিবী এখন জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। বায়ুমণ্ডলে ক্রমবর্ধমান গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে তীব্র খরা, বন্যা, ঝড় ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে আসছেন।
অবশেষে বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে একটি দারুণ আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো এমন অণু আবিষ্কার করেছেন যা বায়ুমণ্ডল থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস শোষণ করতে পারে। এই আবিষ্কার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে অবস্থিত হেরিওট–ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী এক নতুন ধরনের ছিদ্রযুক্ত কণা আবিষ্কার করেছেন। এই দলে একসঙ্গে কাজ করেছেন যুক্তরাজ্যের লিভারপুল ইউনিভার্সিটি, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন, ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটন ও চীনের ইস্ট চায়না ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা। এই অণু আবিষ্কারের বিষয়ে নেচার সিনথেসিস নামের জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
এডিনবার্গের হেরিওট-ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ ও গবেষণা প্রধান লেখক মার্ক লিটল বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। গ্রিনহাউস গ্যাসের মতো জরুরি সমস্যাগুলোর সমাধানে এই নতুন ধরনের ছিদ্রযুক্ত উপাদানের প্রয়োজন।
গ্রিনহাউস গ্যাস হলো বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত এমন কিছু গ্যাস যা সূর্য থেকে আগত তাপীয় বিকিরণ শোষণ করে এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠে সেই তাপ ধরে রাখে। নতুন আবিষ্কৃত অণুটি কার্বন ডাই–অক্সাইড, সালফার হেক্সাফ্লোরাইড ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস শোষণ করতে পারে।
এই অণুর কাঠামো তৈরি করা হয়েছে ত্রিভুজাকৃতির বিল্ডিং ব্লক দিয়ে, যাকে ‘ত্রিকোণবিশিষ্ট প্রিজম’ বলা হয়। এসব বিল্ডিং ব্লক একসঙ্গে জোড়া লাগিয়ে একটি প্রতিসম চতুষ্কোণ খাঁচার মতো কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এই খাঁচার মতো কাঠামোতে প্রচুর পরিমাণ ধনাত্মক বা ঋণাত্মক আয়ন থাকে। এসব আয়ন বিভিন্ন ধরনের গ্রিনহাউস গ্যাস যেমন কার্বন ডাই–অক্সাইডকে আকর্ষণ করে এবং ধরে রাখতে পারে।
গবেষকেরা কম্পিউটার মডেলিং ব্যবহার করে এই নতুন ধরনের ছিদ্রযুক্ত উপাদানের গঠন সঠিকভাবে দেখাতে সক্ষম হয়েছেন, যা থেকে তাঁরা অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন। গবেষকেরা অনুমান করেন, আমাদের কার্বন নির্গমন কমাতে প্রতিবছর প্রায় ২০ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই–অক্সাইড পরিশোধন করতে হবে। তাঁরা আশা করেন যে এই প্রযুক্তি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট, উইকিপিডিয়া